আর পাঁচটা বন্ধুর মত আকাশ ও মেঘের মধ্যে বন্ধুত্ব। যদিও মেঘ ছিল আকাশের থেকে বয়েসে বড় কিন্তু এই বন্ধুত্বের মায়াজালে বয়েসের ফারাকটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছিল। সময়ের প্রবাহের সাথে এই দুই বন্ধুর বন্ধুত্ব গাড় থেকে গাড়তর হতে থাকে। আকাশ কলেজের ছাত্রজীবনে পা রেখেছে আর মেঘ এই জীবন কিছুটা অতীবাহ করেছে তবে এই দুই বন্ধুর পারিবারিক জীবন কিন্তু সুখসপদ ছিলনা। আকাশের মা গত হয়েছিলেন অনেক ছোট বয়েসে আর মেঘের ছিল আর্থিক অনটন। আকাশের শেষ দুটো জন্মদিনে মেঘ আসতে পারিনি বলে আকাশ তার ২০তম জন্মদিনে মেঘকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে এসেছে। মেঘের উপস্থিতি আকাশের জন্মদিনটাকে আরো আলোকিত করে তুলেছিল।
“শুভ জন্মদিন আকাশদা”.... গলার স্বরটা মেঘ ঘুরে তাকালো। মেঘ দেখল আকাশ একটি লাল চুড়িদার পরা মেয়ের সাথে কথা বলছে। মেঘ ওদের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। “আরে মেঘদা এসো.... মীট মাই ফ্রেন্ড বৃষ্টি” “আর বৃষ্টি দ্যাট ইজ মাই দাদা কাম বেষ্ট ফ্রেন্ড মেঘ”....এই বলে আকাশ ভিতরের ঘরে চলে গেল। “কি করো তুমি এখন?” মেঘ প্রশ্ন করল বৃষ্টিকে। “এইতো সবে উচ্চমাধ্যমিক দিলাম”.... “কেমন হল সব পরীক্ষা?”.... “ভালো হয়েছে। বাকিটা উপরওয়ালা জানেন”.... মেঘ জানতে পারে যে বৃষ্টি হল আকাশের বাবার বন্ধুর মেয়ে। খাবার সময় যে কখন পেরিয়ে গেছে তা দুজনের কেউ খেয়াল করেনি। হঠাৎ আকাশ এসে বলল “সারাদিন গল্প করলে কি পেটটা চলবে?” অবশেষে দুজনে খাওয়ার পর্ব শেষ করে আকাশের সাথে দেখা করে বাড়ির পথে রওনা দিল। মেঘ বৃষ্টিকে বাড়ি পর্ষন্ত এগিয়ে দেয় ও বৃষ্টিকে জিজ্ঞাসা করে যে “আর কি আমাদের দেখা হবে না?” বৃষ্টি মুছকি হেসে বলে “সাবধানে বাড়ি যেও”....মেঘের মনে বৃষ্টি সেইদিন একটা দাগ কেটে যায়। পরে মেঘ বৃষ্টির কথা মনে করলেও তার সাথে কোন রকম যোগাযোগ করে উঠতে পারিনি। হঠাৎ একদিন আকাশ মেঘকে বলল “আজ তোমার নাম্বারটা বৃষ্টি চাইছিল”.... মেঘ খুব উৎসাহিত হয়ে জিজ্ঞাসা করল “তাই”!!! “তুই নাম্বারটা দিয়েছিস তো?”.. “হ্যাঁরে বাবা দিয়েছি....এত চাপ নেওয়ার কিছু নেই বস”....
রাত ১টার সময় মেঘের ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠল.... “হ্যালো”... “কেমন আছো”... “কে বৃষ্টি?”... “হুমমমমম”.... সেইদিন তারা যখন কথা শেষ করল ফোনে তখন ভোরের আলো ফুটবে ফুটবে করছে। এরপর থেকে মেঘ ও বৃষ্টি প্রায় রোজ রাতেই ফোনে কথা বলতে ও মাঝে মধ্যে দেখা করতে শুরু করে। আসতে আসতে দুজনের সম্পর্ক বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসায় পরিনত হয় কিন্তু কেউ কাউকে এই কথাটা বলে উঠতে পারিনি। বৃষ্টি একদিন আকাশকে এই ব্যাপারটা নিয়ে জানায়। আকাশ বৃষ্টিকে বলে যে সে এই ব্যাপারটা মেঘকে জানানোর জন্য। বৃষ্টি মেঘকে রাতে ফোন করে কিন্তু বৃষ্টিকে সেদিন মেঘের খুব অন্যমনষ্ক লাগে। “কি হয়েছে তোমার?” মেঘ জিজ্ঞাসা করল। “একটা কথা বলব তোমায়?” বৃষ্টি বলল। “হ্যাঁ,বলো” মেঘ খুব চাপা গলায় বলল। “I LOVE YOU” বৃষ্টি বলল। মেঘের মনে হল যেন স্বপ্ন দেখছে। যাই হোক যার শুরু ভালো তার শেষও ভালো তাই ১১টা মাস খুব সুন্দরভাবে কেটে গেল দুজনের। কিন্তু ইশানকোণে একটা মেঘ জমেছিল ঝড় তুলবে বলে। একদিন বৃষ্টির বাবা মেঘ আর বৃষ্টিকে একসাথে দেখে ফেলেন রাস্তায়। সেইদিন বৃষ্টি বাড়ি ফিরে এলে তাকে তার বাবা ভীষণ মারধর করেন,তার ফোনটা ভেঙ্গে দেন ও তার বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ করে দেন। ফলে মেঘের সাথে বৃষ্টির সম্পর্কে দাড়ি পড়ে। বৃষ্টি পরের দিন শুনতে পায় তার বাবা কার সাথে যেন একটা তার বিয়ের কথা পাকা করে ফেলেছে। বৃষ্টি তার বাবাকে ভীষণ ভয় পেত কিন্তু তবুও সে চেষ্টা করে এই বিয়েটা আটকানোর কিন্তু সে ব্যার্থ হয়। বৃষ্টি বিয়ের দিন তার হবু বরকে দেখে চমকে ওঠে। বৃষ্টির হবু বর আর কেউ না ছিল মেঘ নিজেই। “তুমি কি করে এখানে?” বৃষ্টির চোখে জল গড়িয়ে এল। মেঘ বলল “তোমার বাবা যেদিন তোমার বিয়ে নিয়ে আকাশের বাবার সাথে কথা বলতে যায় সেদিন আমি ওখানেই ছিলাম। তখনই আকাশ আর আকাশের বাবা আমাদের ব্যাপারটা ওনাকে বলেন এবং আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। অবশেষে তোমার বাবা সবটা বোঝেন আর আমি এখন তোমার কাছে”।
রচনাকাল : ২০/১১/২০১৩
© কিশলয় এবং Dibyendu Chatterjee কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।