আবার যেদিন জীবাণুমুক্ত সকাল এসে আমার বাগানের শুকিয়ে যাওয়া পুঁইডাঁটাতে আলো ফেলবে, সেদিন আচমকাই ফুরিয়ে যাওয়ার আগে জেগে উঠব আমি খুব ভোরে। যা পাওয়া হয়নি, যা পাওয়া গেলোনা সেসব ভুলে, যা পাওয়া যেতে পারে তার জন্য অশক্ত পায়ে এসে বারান্দার কোনের দরজা ঘেঁষে দাঁড়াব। আমের বোলগুলো তখন বাগানের ঘাসে সূর্যের আলোয় খিলখিলিয়ে উঠছে।
বহুদিন পর সদর দরজা হাট করে খুলে, ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া চোখের তীব্র দৃষ্টি দিয়ে মানুষ দেখব খালি... শুধু মানুষ... লাল-নীল-সাদা-কালো হরেক রকম মানুষ। তারপর তারা এসে দাঁড়াবে আমার দরজায়। আমাকে সেইই ভোরবেলা একরাশ রঙিন ফুল দিয়ে বলবে, "আমরা জিতে গেছি। জিতে গেছি জীবনের কাছে। আমরা সত্যিই জিতে গেছি।"
দ্বি - প্রহরের সময় ছোটবেলার মত পুকুরে ডুব সাঁতার দিতে দিতে শ্যাওলার গন্ধ মাখব জলে। পাড়ার বৌ ঝিরা এসে সাবান ঘষবে গায়ে। কতদিন পর মানুষের গায়ের গন্ধ লাগবে দেহে। তারপর থালার ওপর সুগন্ধি ভাত আর ঘি এর গন্ধ। বাইরে তখন চড়া রোদ মাদকের মতো ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের পৃথিবীতে।
সন্ধ্যাবেলা সে বেশ একখানি জলসা হবে। আমি ভুলে যাব সব একাকীত্বর যন্ত্রনা। ভুলে যাব কে কবে আমার পিছনে ছুরি মেরেছিলো। তাকেও সেদিন জড়িয়ে ধরে বলব, "ভালোবাসি। ভীষন ভালোবাসি।" সেই সন্ধ্যেতে আমার বাগানের লেবু গাছের ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়বে ছাদে। বাগানের কোনে জ্বলবে একগুচ্ছ জোনাকি। বাতাসে বইবে আদি যুগের নির্মল হাওয়া। দূর প্রসারিত অনন্ত অসীমের দিকে তাকিয়ে চোখ ফেটে জল আসবে। শুধু অস্পষ্ট স্বর বেরোবে সবার মুখ থেকে,"ক্ষমা করো... ক্ষমা করো... আমাদের ক্ষমা করো।"
রচনাকাল : ১৬/৪/২০২০
© কিশলয় এবং ঋত্বিকা গায়েন কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।