• ৯ম বর্ষ ১১তম সংখ্যা (১০৭)

    ২০২০ , এপ্রিল



বাঁচতে চাই
আনুমানিক পঠন সময় : ৮ মিনিট

লেখক : অনাদি মুখার্জি
দেশ : India , শহর : মুনসেফডাঙ্গা, পুরুলিয়া

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , মার্চ
প্রকাশিত ২২ টি লেখনী ৩০ টি দেশ ব্যাপী ১১১৩৫ জন পড়েছেন।
শোভা বাজারে মেট্রো সেটশনের পর  শ্যামবাজারে দিয়ে যে রাস্তা টা সোজা গেছে তার ডান পাশে প্রথম যে সরু গলিটা পড়ে ,,সেই গলির ভেতরে যেতে প্রথম যে বড়ো বাড়ি টা চোখে পড়ে ! এক সময়ে এই বাড়িটা আগে খুব গমগম করতো এখন কিন্তু সব চুপচাপ ,কেউ থাকে না ,,শুধুমাত্র অনিক একা থাকে ,!! অনিকের বাবা ও মা মারা যাবার পর ,,তার তিন দাদা ,বৌদি ও চার ভাইপো রা সবাই কলিকাতার বাইরে থাকে ! অনিকের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই বললে চলে ! আজ অনিকের মন একদম ভালো নেই ,,সেই কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না ,,যে প্রিয়া তাকে ভালো বাসে না ,তার জীবন থেকে প্রিয়া এই ভাবে সরে যাবে সেই কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারছে না !!তার এতদিনের ভালো বাসা সব মিথ্যা হয়ে গেল ,,অনিক ভাবছে কি নিয়ে থাকবে সেই বড়ো একা হয়ে গেল ,কাকে নিয়ে বাঁচবে সে !  কে বলবে কি গো কি খেলে তুমি ,রাতের বেলায় তাকে ফোন করে কে ডিস্টাব করবে ,কে তার সকালে ঘুম ভাঙাবে !  এই সব ভাবতে ভাবতে অনিক সবাই কাছ থেকে আড়াল করে নিয়ে ছে নিজেকে !  সব সময় তার মনে একটায় প্রশ্ন জাগে আর কি লাভ এই জীবন রেখে ??  তার থেকে মরণ অনেক ভালো ,থাকুক প্রিয়া সুখে ,তার জীবনের কাঁটা হয়ে থাকতে চাই না !  এই ভেবে সেই বাজার থেকে চার প্যাকেট ইঁদুর মারা বিষ আনলো ,, আজ এই রাতের বেলায় এক গ্লাস জলে ঐ বিষ মিশিয়ে দিলো সেই খাবে বলে !  তার জীবনের প্রেম এসেও চলে গেল তার কষ্ট হাত থেকে মুক্তি পেতে একমাত্র আত্মহত্যা ছাড়া তার আর কোনো উপায় নেই !! এই রাত বারোটা সময় সমস্ত কলিকাতা এক নিশ্চিতরূপে আছে ,সবাই এখন ঘুমিয়ে আছে শুধু অনিক তার চোখে ঘুম নেই ,সেই যে আত্মহত্যা করবে বলে ঠিক করেছে !! এই বিষ পান করার আগে শেষ বারের মতোন প্রিয়ার মুখ টা মনে করলো , ভাবতে লাগলো প্রিয়া ও তার ছবি ,সেই ভাবনা মধ্য দিয়ে নিজেকে মেলে দিলো একটু সময় !!! ------ তার বন্ধুর বিয়ে বাড়িতে সেই প্রিয়া কে প্রথম দেখে ,,প্রথম দেখাতে তার প্রিয়া কে খুব ভালো লাগে ,!  খুব সুন্দর দেখতে ,টুকটুকে ফর্সা গায়ের রঙ ,,লালচে আভা গোল গাল , চোখ দুটো বেশ বড় টানাটানা ,আর মাথার চুল একেবারে কোমর পর্যন্ত ,হালকা সাজে দারুন লাগছে!!

সেই বিয়ে বাড়ি রাতে খাবার টেবিলে বসে আছে খাবারের জন্য,, পাশের চেয়ারটা ফাঁকা পড়ে আছে ,,সেই  সময় সেই খানে প্রিয়াও হাজির হল ,সেই ঐ চেয়ারটা ফাঁকা দেখতে পেয়ে অনিক কে শুধালো এই যে মশাই আপনার পাশে কেউ আছে !  অনিক থতমত খেয়ে বললো না আপনি বসে পড়ুন,,প্রিয়া আলতো হাসি দিয়ে বললো ওকে বলে অনিকের পাশে বসে পড়লো ! সেই সময় তারা একে অপরে পরিচয় পর্ব টা সেরে নিল ,,প্রিয়া ও থাকে এই শ্যামবাজারে ,সে ও তার মা থাকে ,প্রিয়া একটা ছোট কোম্পানিতে কাজ করে ,,অনিক হলো একজন বিজনেসম্যান ,তবুও সে প্রিয়া জন্য টাইম বের করে তাকে সময় দেয় ,এই কলিকাতা শহরে নানা জায়গায় অনিক ও প্রিয়া ঘুরতে যাই ,এই ভাবে তাদের একটা ভালো সম্পক গড়ে উঠে ,একদিন প্রিয়া বললো চলো না কোথাও একটু ফুচকা খেয়ে আসি ,অনিক বললো চলো  সব চেয়ে ভালো দোকানে খাওয়া বো,, এই শ্যামবাজারে মোড়ে একটা ফুচকা স্টল বসে দারুণ বড়ো বড়ো সাইজের আর তার ফুচকা জল একদম পুদিনা স্বাদ লাগে সেই খানের ফুচকা খেয়ে তুমি মনে রাখবে ,! প্রিয়া বললো হুম চলো আমার জিবে জল চলে এলো ,,,,ফুচকা খেয়ে প্রিয়া বললো সত্যি তুমি খুব ভালো মনের মানুষ ,কিন্তু কারোও জন্যে এই ভাবে টাকা নষ্ট করো না ,,নিজের জিনিস কেনো ,অনিক সেই কথা শুনে হাসলো !   আর একদিন অনিক প্রিয়া কে ফোন করে বললো ,, আজ একবার দেখা করো বিকেলে ,প্রিয়া বললো ওকে  বন্ধু বলো কোথায় দেখা করবো ,নিউমার্কেটে এসো অনিক জানালো ,!! সেই কথা মতোন প্রিয়া এসে দেখলো অনিক তার জন্য অপেক্ষা করছে ! প্রিয়া কে দেখে অনিক বললো চলো ঐ নিজাম রেস্টুরেন্টে তোমাকে আজ বিফ বিরিয়ানি খাওয়া বো ! প্রিয়া তার চোখ তুলে বললো কেনো গো ,, অনিক জানালো আজ তার জন্ম দিন এই জন্য !  অনিকের গা ঘেঁষে দাড়িয়ে বললো আমাকে আগেই জানালে না কেনো ,তোমার জন্যে একটা ভালো জিনিস আনতাম বলে অনিকের গাল দুটি চিপে দিল ,! অনিক খপ করে তার নরম হাত ধরে বললো এসো না খুব খেতে ইচছে করছে ,! তখন প্রিয়া হেসে বললো কি ইচছে করছে বলো আমায় ,অনিক একদৃষ্টিতে দেখছে তার সাথি প্রিয়া কে ! অনিকের মনে যে ঢেউ খেলছে তা বুঝতে বাকি রইলো না প্রিয়া ! বিরিয়ানি খাবার পর প্রিয়া তাদের বিল দিতে যাচছে সেই সময় অনিক তাকে বারন করে নিজে সেই বিল দিলো ! প্রিয়া তখন পাশের দোকান থেকে একটা ডায়রী ও একটা কলম কিনে অনিকের হাতে দিয়ে বললো শুভ জন্মদিন ভালো থেকো ! সে ডায়রী নিয়ে বললো এতে আমার মনের কথা লিখে রাখবো ,হুম তাই করো তোমার মনের কথা আমাকে না জানিয়ে লেখো আমি চুপিচুপি তা পড়বো তাই না বললো প্রিয়া ! এই ভাবে তাদের ভালো বাসা ও বিশ্বাস একে অপর কে কাছে টানে ! অনিক তাকে তার গার্লফ্রেন্ড বলে ধারণা করেছে ! সারা রাত তাদের ফোনে কথা হয় ,তাদের কথা শেষ হতে চাই না ,! প্রিয়া বলে আমার ঘুম আসে না কেন ,তখন অনিক বলে আমার ও জানি না কোন এক মায়া জালে জড়িয়ে গেলাম ,সেই কথা শুনে খুব হাসে প্রিয়া ,! মেয়েদের এই মিষ্টি হাসি যে কোনো পুরুষের ভালো লাগে তাই অনিকের মন ভরে যায় ! আর একদিন প্রিয়া কে নিয়ে বিগবাজার গেল সেই খানে একটা ভালো দামি শাড়ি কিনে প্রিয়া হাতে তুলে দিয়ে বললো এই টা পরে আমার মোবাইলে ছবি পাঠাবে ! প্রিয়া সেই শাড়ি নিয়ে অনিক কে ,,আচছা তুমি কি আমাকে ভালো বাসো ?অনিক বললো হুম তুমি আমার জীবনের সাথি ,আই লাভ ইউ প্রিয়া অবাক হয়ে বললো অনিক তুমি ভুল করছো ,,আমার থেকে তুমি আরো ভালো মেয়ে পাবে , তুমি সুখের থাকবে আমাকে পাবার আসা করো না ! অনিক এই কথা বলছো কেনো তুমি ,তুমি কত সুন্দর আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই ! প্রিয়া বললো এই বিয়ে হতে পারে না তা ছাড়া আমি তোমাকে বন্ধু মতোন ভালো বাসি ,আমি চাই না আমাদের বন্ধুত্ব টা এইখানেই শেষ হক ! অনিক তাকে বললো তুমি আমার চোখের দিকেই তাকিয়ে বলো যে তুমি আমাকে একটু ও ভালো লাগে না ! প্ৰিয়া বললো ভালো লাগে তা বলে সেই ভালো লাগাকে ভালো বাসায় নিতে হবে এমন কথা নেই ! অনিক তুমি আমাকে ভুলে যাও প্লিজ ! বলে সেই চলে গেলো ,অনিক এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে দেখে প্রিয়া চলে যাওয়ার রাস্তা টা !!   সেই রাতে প্রিয়া কে ফোন করতে লাগলো ,, যতবার ফোন করে ততই ফোন কেটে দেয় প্রিয়া ! তাতে অনিকের মাথা আরো খারাপ হতে থাকে ,,সেই সমস্ত রাত ভাবতে থাকে তার ভালো বাসার সাথি প্রিয়া কেনো এমন করছে ! তার কি দোষ ,প্রিয়া কেনো তাকেই বিয়ে করতে চাইছে না ,এই সব ভাবতে ভাবতে সকাল হয়ে গেলো !

অনিক আবার সকালে ফোন করলো ,প্রিয়া ফোনে কথা বললো কি বলছে অনিক সেই টা জানার জন্যে ,,অনিক বললো আজ শেষ একবার দেখা করো এখুনি,!  প্রিয়া সাথে দেখা করে অনিক বললো কাল সারারাত তোমার কথা ভেবেছি কিছু ভালো লাগছে না ,তোমাকে ছাড়া আমি বাচবো না ! তোমার মা কে আমার কথা বলো ,,তা শুনে প্রিয়া বললো আমার মা আমার জন্য একটা ছেলে দেখেছে ,আমি তাকেই বিয়ে করবো ,আমার মা কে আমি কষ্ট দিতে চাই না ! আমাদের ভালো বাসার থেকেই কি তোমার মা বড়ো অনিক বললো ,এই কথা শুনে প্রিয়া বললো আমি তোমাকে ভালো বাসি না ,আই হেট ইউ বলে প্রিয়া ও চোখের জল এলো ,বললো আনিক আমি বুঝতে পারিনি তোমাকে কিন্তু আমি চাই না তোমাকে বাই বলে চলে গেলো ! অনিকের চোখের জল চলে এলো ,ভেতর টা কেমন ফাঁকা হয়ে গেলো ! ,শুধুমাত্র প্রিয়া মুখে ঐ একটা কথা শুনে ,,আই হেট ইউ ,,বাড়িতে এসে শুয়ে পড়লো ,কি করবে ভেবে পারছে না , এই ভাবে ঘরে ঘরে থাকতে থাকতে তার মন ও শরীর একেবারে ভেঙে পড়লো ! তাকে একবার ফোন করে না, কেমন আছে অনিক ,কি করছে ,,অনিকের মনে তখন জিত চাপে সেই থেকে কি করবে ,তাই সেই মনের জালায় আত্মহত্যা পথ বেছে নেই!  !!!!! এই  ভেবে ঐ নিশুতি রাতে সেই বিষ ভর্তি এক গ্লাস জল খেতে যাবে ,সেই সময় কার একটা ছায়া দেখে চমকে উঠলো, বললো কে ঐ খানে ?? তার সমস্ত শরীরে একটা ঠাণ্ডা হাওয়া বয়ে গেলো ,,কে যেনো বলছে বাবা অনিক জীবনের অনেক দাম ,এই তো শুরু এই ভাবে নষ্ট করিস না ,,একটা মেয়ের কাছৈ ভালো বাসা পেলি বলে তুই হেরে যাবি ,! এই কথা গুলো শুনে অনিক অবাক হলো ,কার আওয়াজ ,? এই তো আমার মায়ের আওয়াজ ,! মা গো আমি কি করবো বলে দাও ,,,,তখনই তার হাতের গ্লাস খানি মেঝেতে পড়ে চুরমার হয়ে গেলো ! ঐ ছায়া টা ও মিলিয়ে গেলো """" অনিক আকাশে দিগে তাকিয়ে চিতকার করে বললো আমাকে ক্ষমা ক‍রো আমি তাকে ভুলে যেতে পারছি না ,,নিজের বুকে  হাত বুলিয়ে বলছে এই হৃদয়ে রেখেছি যারে তাকে কি করে উপড়ে ফেলতে পারি ! বলে সেই মেঝেতে বসে পড়ে ঐ ভাঙা কাচের টুকরো গুলো জড়ো করে নিজের হাতে মুঠোয় মধ্যেই নিয়ে শক্ত করে বললো ,,,,আই হেট ইউ প্রিয়া আই হেট ইউ ,, তার হাত তখন রক্তে ভরে উঠলো সেই তখন ঐ মেঝেতে শুয়ে পড়লো ,,,,,কখোন যে সকাল হলো তা অনিক বুঝতে পারেনি ,শুধু বুঝলো আমি বাচতে চাই, আমাকে বাচতে  হবে।
রচনাকাল : ১৫/৪/২০২০
© কিশলয় এবং অনাদি মুখার্জি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 8  China : 15  Germany : 3  Hungary : 1  India : 391  Ireland : 53  Japan : 1  Romania : 1  Russian Federat : 3  Saudi Arabia : 3  
Sweden : 3  Ukraine : 5  United States : 393  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 8  China : 15  Germany : 3  Hungary : 1  
India : 391  Ireland : 53  Japan : 1  Romania : 1  
Russian Federat : 3  Saudi Arabia : 3  Sweden : 3  Ukraine : 5  
United States : 393  
লেখক পরিচিতি -
                          অনাদি মুখার্জি ১৬ই জানুয়ারি পুরুলিয়া জেলার মুনসেফডাঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন।

ছোট থেকে গল্প লেখা ও কবিতা লেখার শখ আছে তার। বিভিন্ন পত্রিকায় তিনি গল্প লেখেন। এছাড়াও ইচ্ছেপূরণ নামে এক সমাজ সেবামূলক সংস্থার সাথে তিনি যুক্ত এবং তার সাথে সাথে মেডিকেল প্রাকটিসও করেন। 
                          
  • ৯ম বর্ষ ১১তম সংখ্যা (১০৭)

    ২০২০ , এপ্রিল


© কিশলয় এবং অনাদি মুখার্জি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
বাঁচতে চাই by Khokan Mukherjee is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.
fingerprintLogin account_circleSignup