আগে এই রায়গঞ্জ শহরটা এত ব্যস্ত ছিলো না! এখন এই শহরে যে দিকেই চোখ যাবে দেখে মনে হবে খুবই ব্যস্ত শহর ! দেবীনগর থেকে শিলিগুড়ি মোড় অবধি সারি সারি দোকান ! বেশ গুছানো শহর ! শুভর খুব ভালোলাগে এই শহর কে ! যদিও এই শহরে তার জন্ম নয় ! সেই এই শহরে মিলন পাড়া বলে এক বস্তিতে থাকে ! এই খানে নিজের বাড়ি করেছে ! খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তুলেছে বাড়ির সব জিনিস!
এখন সকাল ৮ টা বাজে ,আজ যে ৫ মে , এই দিন টা তার কাছে খুব প্রিয় ! এই দিনে সেই ভালো একটা কোম্পানি তে চাকরী পেয়েছে ! তার চেয়ে ও বড়ো তার জীবনের সাথী প্রিয়াঙ্কাকে তার মনের কথা খুলে বলতে পেরেছে! ''নাও, জলখাবার টা" প্রিয়াঙ্কা তার বর শুভ কে বললো ! প্রিয়াঙ্কা কে দেখে শুভ বললো "আজ রান্না করো না ,আমি আর তুমি আজ রেস্টুরেন্টে খাবো" ! তা শুনে প্রিয়াঙ্কা চোখ নাচিয়ে বললো ,"কেনো গো আজ আবার কার জন্ম দিন" ! শুভ তার দুই হাত ধরে বললো "সখি তোমার মনে পড়ছে না"! প্রিয়াঙ্কা বললো "না গো" !শুভ তার গালে চিমটি কেটে বললো "এই দিনে তুমি আমাকে তোমার মনের কথা জানিয়েছিলে"। প্রিয়াঙ্কা মুচকি হাসি হেসে বললো "ও ! তুমি না একটা পাগল কত দিনের কথা এখনো মনে রেখেছো ! তা কই আমার গিফট এখনো পেলাম না তো" ! শুভ তখন গানের সুর করে বললো "আজি তোমায় সাজাবো সখি , মন ভরে দেখবো শুধু আমি"! প্রিয়াঙ্কা তখন শুভ কে এক ধাক্কা দিয়ে বললো "খুব ডং হচছে তোমার ! আগে বলো কখন বের হবো আমরা"! শুভ বললো "ঘুরে আসছি ,এসে বার হবো আমরা"! প্রিয়াঙ্কা বললো "ওকে মাই ডিয়ার"!
আলমারি থেকে সব পোশাক বের করে দেখছে, কোন পোশাক টা আজ পরবে। খুব মনে পড়ে ঐ দিনের কথা ! প্রিয়াঙ্কা আর সুমি কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলো ! হঠাৎ করে সুমি বললো "দেখ আমাদের পেছন পে ছন ঐ ছেলেটা রোজ আসে"! প্রিয়াঙ্কা ও একবার তাকিয়ে বললো "হুম চল তাড়াতাড়ি করে পা চালা" ! কলেজ থেকে হাটা পথ ,,তাদের বাড়ি আসতে ১৫ মিনিট লাগে! বীরনগরে থাকে ওরা ! প্রিয়াঙ্কা ও সুমি তাদের বাড়ি সামনে এলো ! তখন ছেলেটা তাদের সামনে দিয়ে শিস দিতে দিতে গেলো ! তা দেখে সুমি বললো "ঐ দেখ হিরোটা তোকে জানিয়ে গেলো" ! প্রিয়াঙ্কা ঐ ছেলেটা কে তখন দেখছিলো ! আর একদিন সুমি ও প্রিয়াঙ্কা কলেজ মোড়ে দাড়িয়ে ফুচকা খাচছিলো ! তখন প্রিয়াঙ্কা নজরে গেলো ঐ ছেলেটা দিকেই ! তাকে দেখে সুমি কে প্রিয়াঙ্কা বললো ইশারা করে 'ঐ দেখ' ! সুমি তখন জবাব দিলো, 'এত ঘুর ঘুর কেন! যা বলার সামনে এসে বলুক' ! প্রিয়াঙ্কা বললো 'বলবে ঠিক কিন্তু কাকে বলবে ঠিক করতে পারছে না'! বলে কি হাসি হাসলো প্রিয়াঙ্কা। ঠিক এর কিছু দিন পর সরস্বতীর পূজো দিন ! প্রিয়াঙ্কা একা আসছিলো কলেজের পূজো দিয়ে ! ওমনি পেছন থেকে কে যেনো বললো "শুনছো সখি তোমার সাথে কিছু কথা আছে"! প্রিয়াঙ্কা পিছন ফিরে তাকাতে ঐ ছেলেটা কে দেখে ! তাকে দেখে প্রিয়াঙ্কা বললো 'আপনি কিছু বলছেন'! ছেলেটা একটু হেসে বললো, "অনেক দিন ধরে বলবো ভাবছি, কিন্তু তোমাকে একা পাচ্ছি না"! "তাই! আমি এখন একা বলে ফেলুন" বললো প্রিয়াঙ্কা ! ছেলেটা কাছে এসে জানালো, তার নাম শুভঙ্কর ,সে একটা কোম্পানিতে কাজ করে ! সেই সাথে বললো "তুমি তো ফেসবুক করো, আমি তোমাকে রিকুয়েস্ট করেছি তুমি আমাকে এক্সেপ্ট করো"! প্রিয়াঙ্কা জানালো "আমি ফেসবুক করি না", খানিক টা লাজুক হয়ে বললো "আমার তাড়া আছে ! পরে কথা হবে"।
বাড়িতে এসে প্রিয়াঙ্কা মন কেমন যেন হলো ! আগেই তো এইরকম হয়নি ! তার মোবাইল টা হাতে নিয়ে সেই তার ফেসবুক অন করলো ! অন করে দেখতে পেলো শুভঙ্কর নামে ঐ ছেলে টা তাকে ! তার সাথে বন্ধুত্ব করার অনুমতি করেছে ! সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা এসপেক্ট করে নিলো ! সাথে সাথেই শুভ মেসেজ করলো, "আই লাভ ইউ"। সেই টা দেখে প্রিয়াঙ্কা রিপ্লাই দিলো 'পাগল তুমি'! বলে তার নেট অফ করে দিলো! রাত্রির বেলায় আবার তার একটু দেখতে ইচ্ছে হলো ! মোবাইল চালু করে দেখলো একগাদা মেসেজ শুভঙ্করের ! লিখেছে "যেদিন তোমাকে প্রথম দেখলাম সেই দিন মনে হলো আমার স্বপ্নে রাজকন্যা দেখা পেলাম"! আবার কোথাও লিখেছে , "আমি তো ঘুরঘুর করি সেই টা তোমার ভালো লাগে না কিন্তু কি করবো তোমাকে একা পাচ্ছিনা বলে.... একদিন বলবো তোমাকে আমার মনের কথা...... তুমি তো সেই মৌ পাখি যার সব কিছু ভালো লাগে"। প্রিয়াঙ্কা এই সব পড়ে অবাক হলো ! শুভ তাকে খুবই ভালো বাসে! তার ও খুব ভালো লাগে শুভ কে ! এই রকম একটা সুন্দর স্মার্ট ছেলে কে না ভালো বেসে থাকা যায় ! তার ও মন মানে না, প্রিয়াঙ্কা কে কেউ কোনোদিন আই লাভ ইউ বলেনি!
এই প্রথম কেউ তাকে ''আই লাভ ইউ' লিখে মেসেজ দিলো তা দেখে প্রিয়াঙ্কা খানিক লজ্জায় পড়ে গেলো ,কিছু দিন এই ভাবে চলতে লাগল। একদিন শুভ প্রিয়াঙ্কা কাছে জানতে চাইল তার কোন খাবার সব থেকে বেশী প্রিয়। 'বিরিয়ানি' জবাব দিয়ে বললো 'কই একদিন খাওয়াতে নিয়ে চলো'। 'আজ বিকেলে এসো' বললো শুভ। তারা ঠিক করলো বিধাননগরে বিকেল ৫টায় তারা দেখা করবে। শুভ খুব আনন্দে মন ভরে উঠলো আজ প্রিয়াঙ্কার কাছে জানতে চাইবে, সে শুভর জীবনের আসবে কিনা, বলতে হবে আর কতদিন এই ভাবে ঘুরঘুর করবে। প্রিয়াঙ্কারও মন মানছে না ,এত ভালো ছেলে খুব স্মার্ট আর কত দিন চাতক পাখি মতোন চেয়ে থাকবো ,আজ তার মনের কথা শুভ কে বলতে হবে ,সব সময় ঘড়ি কাটা দিকে চোখ পড়ে কখন যে ৫টা বাজবে। সেই কথা মতোন প্রিয়াঙ্কা বিধান নগর মোড়ে এসে দাড়াতে শুভ ও হাজির। প্রিয়াঙ্কা কে দেখে শুভ বললো 'আজ তোমাকে দারুন লাগছে' ,প্রিয়াঙ্কা ও লাজুক চোখে তাকিয়ে শুভ কে বললো 'ওই চলো না আমরা কোথাও বসি'। তারা খানিকটা এগিয়ে গৌরব বিরিয়ানী দোকানে এসে বসলো ,তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। ইতিমধ্যে দুই প্লেট বিরিয়ানী এলো। সেই সময় শুভ এক হাত প্রিয়াঙ্কা দিকে এগিয়ে দিল, সাথে সাথে প্রিয়াঙ্কাও তার হাতে হাত রেখে বললো 'আই লাভ ইউ শুভ' ,শুভ তার হাত আরো শক্ত করে ধরে বললো 'থ্যাঙ্কস মাই ডার্লিং"। প্রিয়াঙ্কা বললো "তুমি আমাকে ছেড়ে দেবে না তো"। শুভ বললো "ছেড়ে দেবার জন্যে তোমার হাত ধরেনি সারাজীবনের সাথী হবার জন্যে হাত ধরেছি। আজ এই দিনটা আমার শুভ দিন ৫ই মে ,কোন দিন ভুলে যাবো না"। সেই দিন খুব ইচছে ছিল প্রিয়াঙ্কার, শুভ কে একটু জড়িয়ে ধরতে, কিন্তু লোকলজ্জার সেই আবেগহীন হয়ে তাকিয়ে ছিল শুভর দিকে।
"কই গো আর কত দেরি" শুভ কথাতে চমকে উঠলো প্রিয়াঙ্কা। আয়নার সামনে দাড়িয়ে এই সব ভাবছিল, এই তো হয়ে গেলো, শুভ তার কাজে এসে বললো দেখি তোমাকে বলে প্রিয়াঙ্কা সামনে তার কিনে আনার সোনার নেকলেস টা তার গোলায় পড়িয়ে দিতেই প্রিয়াঙ্কা বললো "কি এনেছো"। খুব সুন্দর নেকলেসটা দেখে প্রিয়াঙ্কা বললো "এত টাকা খরচ করে আনার কি দরকার ছিল", শুভ জড়িয়ে ধরে বললো আমার অনেক দিনের শখ তোমাকে একটা উপহার দেওয়া, প্রিয়াঙ্কা তার বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে বললো "আমি এই সব চাই না ,আমি শুধু তোমার ভালোবাসা ও তোমার পাশে এই ভাবে থাকতে চাই"। শুভ বললো "আজ কত তারিখ?", "৫ই মে" জবাব দিলো প্রিয়াঙ্কা। শুভ বললো "বুঝলে কেনো এই দিন টা আমার প্রিয়?" ,প্রিয়াঙ্কা বললো "পাগল তুমি, তুমি আমার সাথী" বলে শুভ ঠোঁটে একটা চুম্বন করলো, "থাক এই দিন টা তোলা আমাদের মনের হৃদয়ে"।
রচনাকাল : ২২/৩/২০২০
© কিশলয় এবং অনাদি মুখার্জি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।