পাগল
আনুমানিক পঠন সময় : ৩ মিনিট

কবি : টিংকর পাল
দেশ : India , শহর : Calcutta

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৪ , জুলাই
প্রকাশিত ৪৩ টি লেখনী ৩৩ টি দেশ ব্যাপী ২২৩৫৩ জন পড়েছেন।
পাগল ও একটা পাগল
বিশ্বাস করো আমি পাগল নই , আর বিশ্বাসের কিবা আসে যায়।
দরিদ্রতার কারাগার আমার নাম দিয়েছে পাগলখানার পাগল।
এক বদ্ধ পাগল।
যেদিন শেষ বারের মতো সঞ্ছমিটা আমার নাম ধরে একটি বার 
দেখতে চেয়েছিল শুধু ,ছুঁতে চেয়েছিল আমার নিরুপায় হাতটা।নিস্তেজ 
আমি ও আমার দরিদ্রতা সেদিন ফেরাতে পারেনি তার জীবন। চিকিৎসা 
করাতে পারিনি।মুঠো হাতে তাই ভিক্ষা চেয়েছি সূর্য দেবের কাছে প্রান ভিক্ষা।
আমার প্রানের বিনিময়ে।একটুও করুনা করেনি পাথরি ঈশ্বর।ডাক্তার একবাক্যে
জানিয়েছিল বেশীদিন না।তারপর একদিন জীবনে আঁধার নামিয়ে,
স্বপ্নে গোধূলি নামিয়ে চলে গেলো অন্য জগতে।একটা যুগের সমাপ্তি করে।
একা খুব একা- তিনকুলে আর নিজেও কেউই রইলো না।
বিশ্বাস করো কাঁদতে চেয়েছিলাম সেদিন, বুক ফেটে কাঁদতে। চোখের 
জলটা হটাত জমে গিয়েছিলো বুকের ভিতর কোষ্ঠী পাথরের মতো।
কান্না নামেনি বুক চিরে।শেষ বারের মতো খাটিয়ায় শুইয়ে যখন হাঁটছিলাম
শেষের পথে।এক কাঁধের উপরে ঘুমিয়ে ছিল নিষ্প্রাণ দেহটা।আর অসংখ্য 
সঞ্ছমি তখন মিলিয়ে যাচ্ছিল ছায়া হয়ে দূরে কোথাও।
সূর্যদেবকে ওর অপরাধটা জানতে চেয়েছিলাম। বধির তো তাই শোনেনি।
        মঞ্জুশি যখন মাঝরাস্তায় হাত ছেড়ে বলেছিল। বুকের ভিতর 
তীক্ষ্ণ ছুরি ফুঁড়ে বলেছিল- যেদিন তুমিও ওদের মতো ইয়া বড়ো বড়ো মস্ত
গাড়ি চড়বে। পকেটের মোটা ব্যাগে ক্রেডিট কার্ড আর কে.ফ.সি. র চড়া
দামে চিকেন বার্গের খাওয়াবে সেদিন জানাবো।বাবাকে জানাবো 
আমাদের সম্পর্কের কথা।বসন্তের জোড়া বাগান সাজাবো ফুলে ফুলে।
বিশ্বাস করো চোখে জল রাখতে পারিনি সেদিন।
টোপে টোপে গড়িয়েছে গাল। গাল বেয়ে ঠোঁটের পাশ গড়িয়ে ভিজেছিল
জামাটা।জামাটা এখনো আছে দেখতে চাইলে দেখাতে পারি।
চোখের জলের দাগটাও মেলায়নি একটুও।ধস নেমেছিল জীবন নদীর একপাড়ে।
“তুমিও শেষে তুমিও"-বিজবিজ করে ভুল বকেছি সারারাত।পরদিন জ্বর নাকি
একশো চার।দরিদ্রতার গর্তে লাউ মাচার মতোই দুমড়ে পড়েছিল সাধের ভালোবাসা।
শেষ আশার সম্বল টুকুও মিথ্যা- ভাগ্য তো একেই বলে।
দূরে যাবো ভেবেছিলাম তোমাদের ছেড়ে অনেক দূরে যেখানে আমাবস্যার
কালরাতে মানুষ ঢলে পড়ে মিত্যুর রাজত্বে।
যদিনা সঞ্ছমি নিজের হাতটা- বন্ধুত্বের গোলাপটা গুঁজে দিতো নিজে থেকেই।
তুমিও পারবে।স্বপ্ন এঁকে রামধনুর বর্ণালী সে সাজিয়েছিল আমার দুচোখে।
তারপর, তারপর সেই কাল রাতের কথা ভাবলে লজ্জায়, ঘৃণায় ,আর 
প্রতিহিংসায় দাউ দাউ করে আমার শরীর আর সঞ্ছমির চিতার আগুনে পুড়ে 
যাওয়া দেহের প্রতিটা খণ্ড।সেই কালরাতের ইতিহাস। 
একটা সারপ্রাইজ আছে শুনে দৌড়ে গিয়েছিলাম ভিক্টোরিয়ায়।
নিরালার সন্ধ্যা যাত্রী মেঘদের চিনিয়ে দিচ্চিলে আমায়।
দেখো দেখো ঐ ধূসর মেঘের নাম দিলাম “অভিমান”।ঐ মেঘটার নাম
দিলাম “স্বপ্ন” আর ঐযে ঐ মেঘটা দেখতে পাচ্ছ কি সুন্দর তাইনা?
দেখলে মনে হয় পক্ষীরাজ। ওটার আমরা নাম দিলাম “ভালোবাসা”।
সেদিন ওর মুখের দিকে তাকালে আমার মতো তোমরাও দেখতে পেতে– 
পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের কিরণে ওর দুধে আলতা মাখা মুখটা।
এক হাতে ফুটফুটে গোলাপ সবে পাপড়ি মিলেছে।
কালো কালো মুখ হটাত অভিশপ্ত সন্ধ্যায় চেপে ধরলো ওর মুখ আর 
আমার মাথায় জোর আঘাত। আহ!! ধিরে ধিরে ক্ষীণ হয়ে আসছে 
ল্যাম্প পষ্টের আলো।নিভে যাচ্ছে কেন? ছোট হয়ে আসছে কেন পৃথিবীটা?
ওর চিৎকার তখন কান ফুঁড়ে পৌঁছে গিয়েছিলো বাইরের জগতে।
মৃত্যুর জগতে।জ্ঞান ফিরেছিল নিস্তব্দতায়- ছাদের নিচে কটা তারা শ্রান্ত হয়ে
আছে।আর পাশেই রক্তের আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত এক দেহ।একপাশে কটা 
গোলাপের টুকরো পাপড়ি।আমার প্রকাণ্ড এক চিৎকারে সেদিন কেউ সাড়া দেয়নি।
অচৈতন্য দেহ নিয়ে দৌড়েছি মৃত্যুর রাজ্যে রাজ্যে।ফেরেনি – ফেরেনি সে।
ফেরাতে পারিনি – চিকিৎসার টাকা ছিলোনা হাতে।
আজ একুশটা বছর সে অন্য জগতের বাসিন্দা।
তারাদের মাঝে বাস।আমার পাগলামির প্রতিটা রাত তাই তারাগোনে
দিবারাত।তারাদের ঘরের নামতা পড়ে, বিজবিজ করে যোগবিয়োগ করে।
আর রঙিন, ধূসর মেঘেদের এক এক করে নাম দেয় প্রেম,বিরহ,পাগলামি।
লোকে বলে পাগল – এটা একটা বদ্ধ পাগল।
-------------------------------------------
রচনাকাল : ২৭/২/২০১৫
© কিশলয় এবং টিংকর পাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 11  France : 2  Germany : 5  India : 168  Russian Federat : 3  Saudi Arabia : 3  Ukraine : 36  United Kingdom : 2  United States : 217  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 11  France : 2  Germany : 5  
India : 168  Russian Federat : 3  Saudi Arabia : 3  Ukraine : 36  
United Kingdom : 2  United States : 217  


© কিশলয় এবং টিংকর পাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
পাগল by Tinkar Pal is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৪১৪২৭
fingerprintLogin account_circleSignup