ছেচল্লিশ দিন ভারত গৃহবন্দী।
আমরা নিয়মিত পেয়েছি আশ্বাস
সকলের জন্য আছে মজুত
যা কিছু আবশ্যক
পর্যাপ্ত পরিমাণ।
চাল, ডাল, মৃত্যু, ক্ষুধা, আর্থিক প্যাকেজ।
পরিসংখ্যান বলছে এই গতকাল
শ'খানেক তাজা মৃত্যু করোনায়।
সেখানে কোথায় ষোলো!
একে পরিযায়ী, তায় শ্রমিক
কি আসে যায়?
'মৃত্যুর দায় সরকারের নয়'
বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সহমত বুদ্ধিজীবীমহল।
প্রশ্ন তুলছেন রেল লাইনে কেন ঘুমোবে কেউ?
কেন ভিনরাজ্যে অনাহারে না মরে
সহস্র ক্রোশ পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার স্পর্ধা দেখাবে?
তাও মনটা খচখচ।
কর্পোরেট সেল আউট হলেও
আমি তো পুঁজিবাদ-বিরোধী।
তাছাড়া সেই যে বিবেকানন্দ
'দরিদ্র ভারতবাসী, মূর্খ ভারতবাসী..'
'ওসব বাজে কথা মশাই'
বললেন সরকার বাহাদুর।
'ভারতবাসী দরিদ্র নয়, কাজেই দরিদ্ররা ভারতবাসী নয়।
এত সহজ হিসাব!'
আমি মাথা নাড়লাম।
আমি প্রশ্ন করিনা।
আমি ট্যাক্স ভরি।
আমি প্রশ্ন করিনা।
আমি প্রশ্ন করিনা।
কেন দিল্লীর আগুনে
ঝলসে যাবেন অশীতিপর বৃদ্ধা?
কেন কোনো মাফলার পারবে না
সে আগুন নেভাতে?
আমি প্রশ্ন করিনা।
আমি প্রশ্ন করিনা।
কি হলো তাপসী মালিকের হত্যাকারীর?
কামদুনির মেয়ে, আসিফা, সুজেট জর্ডান
যাঁদের জন্য পথ হেঁটেছি মোমবাতির আলোয়
কি হলো তাঁদের ধর্ষকদের?
আমি প্রশ্ন করিনা।
আমি প্রশ্ন করিনা।
কেন আমার খাজনায়
তৈরী হবেন ছ'শো ফুট লৌহপুরুষ?
তারপর বিপর্যয় মোকাবিলা ফান্ডে
কেন আমিই আবার ..
না। আমি প্রশ্ন করিনা।
আমি প্রশ্ন করিনা।
যতক্ষণ আমার শীততাপে
স্যালারি মেসেজ ঢুকছে নির্বিঘ্নে।
যতক্ষণ আমার দামি হেডফোনে
রবীন্দ্রনাথ।
আমি প্রশ্ন করিনা।
আমি প্রশ্ন করবো না।
যতক্ষণ না দধীচিরা হানা দেয়,
যতক্ষণ না তারা বোঝে
তাদের হাড় চান সব দেবতাই
মৃত্যুর দায় নয়।
যতক্ষণ না বিবেকানন্দের ভারত,
নবারুণের মৃত্যু উপত্যকায়
টেনে নিয়ে যায় আমাদের,
আমি কথা দিলাম।
আমি কোনো প্রশ্ন করবো না।
রচনাকাল : ৯/৫/২০২০
© কিশলয় এবং আলমগীর বৈদ্য কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।