আজ আবারো সকাল ঝলমলে
বাতাসে বিরিয়ানির গন্ধ
চকচকে প্লেটে সুস্বাদু ভাত
লম্বা
সরু
হলদে
সাথে আতরের সোহাগ।
তাই পিতলের হাঁড়িতে আজ
সভ্যতা দৃশ্যমান।
যাকে অভিমানী সুরে তোমরা ডাকো
সভ্য - সমাজ।
যে সমাজ আজও অন্ধকার দেখেনি,
আজও না।
শুনেনি ত্রিপ্রহরে পেঁচার আর্তনাদ
কিংবা শালবনে শেয়ালের চিৎকার।
কেননা অন্ধকার তোমাদের জন্য না।
তোমরা যে আতর ঢেঁকুর তুলে
তৃপ্তির ঘুম দাও -
সেটাও তোমাদের দিবানিদ্রা।
চাঁদ ,তারা ,জোনাকি কিংবা ঝি-ঝি
তোমাদের অভিধানে শব্দ
কেবলই শব্দমাত্র।
তোমরা তো সূর্যের বংশধর;
প্রবল তেজস্বী,
অসীম শক্তিশালী,
আর দৃঢ় পৌরুষত্বের কর্ণধার।
তোমার পূর্বপুরুষ আগুন আবিষ্কারক -
সভ্যতার আদি পিতা।
যাকে বুক ফুলিয়ে জাহির করো
সভ্য সমাজের পিতামহ।
তবে আজ সহস্র বছর পর তোমাদের
কপালে ভাঁজ কেনো?
তবে কি সন্ধ্যা নেমেছে তোমার সমাজে ?
কিছু কি বেমানান সমীকরণ ?
নাকি অজানা জৈবিক ফর্মুলা ?
তবে যাই বলো,
তোমরা সন্ধ্যার গণ্ডি পেরোবে না।
রাত তো তোমাদের জন্য না।
এরপর আবারো সকাল।
আবার সেই টানা সহস্র বছর দিনযাপন।
আবার ডগা কেটে নিঃশেষ করবে
আখের সবটুকু,
উন্মুক্ত শরীরে রোদ খেলাবে অবলীলায়।
সুন্দর নগ্নদৃশ্যে সাক্ষ্য থাকবে
তোমার সূর্যদেব।
আমরা অসভ্য,
অধম আমাদের পরিচিতি।
তাই যখন ডগা নিয়ে প্রস্তুত করবো
ভোরের ভাটিয়ালি সুর,
দেখব আবার প্রহেলিকা।
আমাদের ভোর চুরি করে
বাঁধ দেবে তোমার আসন্ন সন্ধ্যার আঙ্গিনায়।
কারণ রাত তো তোমাদের জন্য না।
রাত আমাদের ঐতিহ্য,
আমাদের গর্ব।
আমরা তো অভ্যাসী,
আমরা রাত বিলাসী।
দিন আমাদের চিরস্বপ্ন ,
বিলাসিতার চরম স্পর্ধা।
তোমার বুলিতে যাকে বলে 'পাপ'
এখন সকাল
'সব ঠিকঠাক।'
তোমার বাড়ি নিয়ন্ত্রিত শীত -তাপ,
কার্ডে টাকাঘরের আঁচড় এখনও বিদ্যমান,
পরশু জন্মদিনের লাল জামার বায়নায়
তোমার হৃদয়ে কন্যা স্নেহের ফেনা।
তোমার ঘরে কুশল বিনিময়ের
পর্যাপ্ত ফোন কল।
পঞ্চম গতিতে পৃথিবী চষাও
হরপার্বতীর কাঁধে চরণ রেখে।
তা ঠিক।
দাবি নাই কোনো।
এখন ভোর
'সব ঠিকঠাক '
শুধু পাশে পরিজন নেই কোনো।
না পেয়ে মাংস
কত হিংস্র
চিবিয়েছে হাড় শেয়ালে,
ছেলেটা আমার না খেয়ে মরলো
চলে গেলো কোন অকালে।
মেয়েটা আমার গলিতে ঢুকলো
ফেলে জামা প্যান্ট দুয়ারে
না পেয়ে সার ,আমি চারিধার
আজও না পেলাম তারে।
বউটা আমার মাথা মাথা করে
না পেয়ে ছেলের দেখা
মেয়েটা যে তার ভারী প্রিয় ছিল
এখন সে বড়ো একা।
আমি অপারক রাতে জেগে থাকি
এ রাত আমারই থাকনা!
তুমি বাবুসাব দিন নিয়ে থেকো
এ রাত তোমার জন্য না।
~রাজকুমার সাঁতরা~
রচনাকাল : ২২/৪/২০২০
© কিশলয় এবং রাজকুমার সাঁতরা কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।