নবীনমাধব এক বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। কলে ক্লায়েন্টকে গুপি দিয়ে সন্ধে থাকতে থাকতে বেরিয়ে পড়েছে বাড়ির উদ্দেশ্যে। পার্ক সার্কাস-গামী ঘুপচি শাটলে জায়গার অনটন বরাবরই। আর আজ উঠেই বুঝলো পাশে মুশকো কাকুর বদলে তন্বী যুবতী।
নবীনমাধব মুষড়ে পড়লো। এই শাটল খাটা ওমনিগুলোর সাসপেনশন নেই বললেই চলে। লাফাতে লাফাতে যাবে, শরীরের কলকব্জা খুলে নেয়ার জোগাড়। মুশকো কাকু থাকলে একটু প্যাডিং মেলে আর কি।
যুবতী মেয়ের ক্ষেত্রে ঠিক উল্টো। সারাক্ষণ সিঁটিয়ে বসে থাকো। এই বুঝি ছোঁয়া লেগে গেলো, এই বুঝি বিরক্তি, জনমত-গণক্যাল-রক্তারক্তি.. ভাবলেই গা হিম হয়ে যায় নবীনমাধবের। তার নিজের সাথে বা তার সামনে কোনোদিনই এমন হয়নি, কিন্তু হতে কতক্ষণ?
বেশিক্ষণ হয়নি শাটল ছেড়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই চিংড়িহাটা ক্রস করে বাইপাস। আজ জ্যাম নেই বললেই চলে। ফাঁকা রাস্তায় ড্রাইভার ফর্মুলা ওয়ানের মতো ড্র্যাগ দিচ্ছে এক একটা বাঁক ঘোরাতে গিয়ে। নবীনমাধব বেশ কয়েকবার বারণ করাতে ড্রাইভার বলে দিয়েছে "এত চাপ কিসের দাদা? আপনার ইচ্ছেমতো চালাবো নাকি? সামনের মোড়ে নামিয়ে দিচ্ছি ট্যাসকি নিয়ে নিন।'
চাপ যে কিসের সে আর এ বেটা কি বুঝবে! মানুষ যা নেই তাই চায় আর তাকেই সবথেকে বেশি ভয় পায় এই সারসত্য কজন বোঝে! দার্শনিক ভাবটা আনমনা করেছে কি করেনি, পরমা আইল্যান্ড - ঘোরাতে গিয়ে হ্যাঁচকা ব্রেক। আর এযাবৎ দুঃস্বপ্ন বাস্তবের বিভীষিকা হয়ে নবীনমাধব ব্যালেন্স হারিয়ে প্রপাত ধরণীতলে, থুড়ি বঙ্গনারীর কোলে।
যুবতীর মুখচোখ রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। উল্টোদিকের সিটে সপ্তাশেষে একটা রগড়ের আশায় উৎসুক জনতা..
এরপরও নবীনমাধব বেঁচে যেতে পারতো। কিন্তু যুবতীর কানের-পর্দা-ফাটানো "কি ছিল এটা!!!!" চিৎকারের জবাবে সে কোনোরকমে আমতা আমতা করে বলেছিল - "আ-আজ্ঞে সে-সে-সেন্ট্রিপেটাল ফোর্স.."
নবীনমাধব বাঁচেনি। সঠিক উত্তর ছিল - "সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্স"!
রচনাকাল : ১৪/২/২০১৯
© কিশলয় এবং আলমগীর বৈদ্য কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।