উদ্দেশ্যহীন নিশাচর...
আনুমানিক পঠন সময় : ৩ মিনিট

লেখক : সন্দিপ নস্কর
দেশ : India , শহর : Kolkata

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১২ , ফেব্রুয়ারী
প্রকাশিত ৪০ টি লেখনী ৫২ টি দেশ ব্যাপী ৪১৫৬০ জন পড়েছেন।
সারা দিনের পর রাতটুকু সম্বল,ওটুকু সম্পুর্ন নিজের। নাঃ,পরিবারেরও নয়। 
কারোর ব্যক্তিগত মালিকানা-ঐ সময়টায় নেই। এমনটাই আগাগোড়া ভাবত তুহিন। 
আগে সকালে অফিসের তাড়া থাকত,তাই না-চাইতেও ঘুম আসত। 
দশটা-সাতটা-র আফিসের চাপ সারারাত জুড়ে গোল পাকাত। তাই চাকরিটাও 
সে ছেড়ে দিয়েছে দুবছর হল। রোজগার কমেছে,হাতখরচ কমেছে,জীবন যাপনে 
দৈনতা বেড়েছে,সঙ্গে লেখাটাও বেড়েছে। আজকাল রাত ২-টোর আগে 
চাইলেও ঘুম আসে না। বাবা,মা,অবিবাহিত বোন,স্ত্রী এবং পাঁচ বছরের একটা 
ছেলে এই হল তুহিনের সংসার। বর্তমানে সে কম্পিউটার সারানো শিখে বিভিন্ন 
জায়গায় ছোটো ছোটো কাজ করে কোনোমতে সংসার চালায়। চাকরি ছাড়ার পর 
তার এই আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন বাড়ির কেউই ঠিকঠাক মেনে নিতে পারেনি। 
একমাত্র বুবুন খুব খুশি,বাবাকে একটু বেশিক্ষন কাছে পায় তাই। আর একজন 
তার লেখার অন্ধ সমর্থক আছে এ বাড়িতে। সে হল তুহিনের একমাত্র বোন মিনি,
তার সমস্থ লেখার প্রথম গুনমুগ্ধ পাঠিকা। বাকি সবাইকে শোনালে এমন একটা 
ভাব করে,যেন কি একটা বালাই। বলতে চায়- "গরিবের ঘরে এ কেমন 
ঘোঁড়া-রোগ ? কবিতা দিয়ে তো এককেজি চালও পাওয়া যায়না,কি লাভ লিখে ?" 
যাই হোক কম্পিউটার নিয়ে কাজের সুত্রে তুহিনেরও একটা কম্পিউটার হয়েছে,
যদিও পুরানো পেন্টিয়াম-৪ মেসিন,জুড়ে-জাড়ে বানানো,তবু মোটামুটি চলে যায়। 
এখন তুহিনের একটা ফেসবুক পেজ রয়েছে কবিতার,সে যা লেখে সেখানেই পোষ্ট করে। 
কিছু মানুষ পড়ে,ভালো-মন্দ কমেন্ট দেয় ওটুকুতেই খুশি ছিল তুহিন।
হঠাত একদিন ইন্টারনেটে একটা প্রকাশনির সাথে তার যোগাযোগ হয়। 
তাদের নাম্বারে ফোনও করে সে। প্রকাশনির অফিস থেকে তাকে বলা 
হয় একদিন এসে তার পান্ডুলিপি জমা দিয়ে যেতে। একটা গ্রীষ্ম-কালের 
মৃত আকাশ যেমন কালবৈশাখীর ঝড়ে আবার বেঁচে ওঠে,তেমনি ভাবে বেঁচে 
ওঠে তুহিনের স্বপ্ন। মনে হয় আর দেরি নেই,এবার নিজের সখ আর পেশা 
এক হবে,জীবনের সঙ্গে বেঁচে থাকাটাও চলবে হাতে হাত ধরে। সে সারারাত 
জেগে হাতে লিখে,তার পছন্দের ৭০টা কবিতার একটা পান্ডুলিপি তৈরী করে,
পরের দিন সেই প্রকাশনির অফিসে দিয়ে আসে। মনের মধ্যের চাপা উচ্ছাস 
বোনের সাথে ভাগ করে নেয়। বোন বলে দেখিস দাদা,সব ঠিক হয়ে যাবে। 
তোর কবিতার বই এবার নিশ্চয় ছাপা হবে। আশায় আশায় কয়েকদিন 
কেটে যায় তুহিনের।দিন দশেক পর প্রকাশনির অফিস থেকে একটা ফোন আসে।
 - "হ্যাঁ তুহিনবাবু আপনার পান্ডুলিপিটা পড়লাম,খুব ভালো কবিতাগুলো। 
 যদি আপনার আপত্তি না থাকে,আমরা আগামি বইমেলায় আপনার বইটি প্রকাশ করতে চাই। "
 বাকিটুকু না শুনেই তুহিন তার আনন্দ প্রকাশ করে ফেলে,বলে- 
 "অনেক ধন্যবাদ স্যার,আপত্তি কিসের ? বলুন আমায় কি করতে হবে ?" 
 প্রকাশক বলেন,-"না-মানে আমরা নতুন কবিদের রিস্ক, সম্পুর্নটা নেই না। 
 প্রথম ১০০০ কপি ছাপানোর যা মুল্য,তার অর্ধেক আপনাকে দিতে হবে। মানে - 
 ছাপাতে খরচ পড়বে প্রায় ২৬০০০/-টাকা,আপনাকে ১৩০০০/- টাকার মত দিতে হবে।" 
 তুহিন বলে-"নাঃ স্যার,ছেড়ে দিন। আমাদের কাছে মনে হয়,সত্যই লেখা-লিখি-টা 
 একটা বিলাসিতা । আমায় ক্ষমা করবেন,আপনার মুল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য।" 
 ফোনটা কেটে যায়,স্বপ্ন গুলো ভেঙে যায়। তুহিন ভাবে আর কোনোদিন লিখবেনা সে। 
 কবিতা,গল্প,গান কিচ্ছুনা। কিন্তু পারেনা,কবি কবিতাকে ভুলতে চাইলেও কবিতা 
 কবিকে ভুলতে দেয়না। মাথার মধ্যে আজো নিরালা ক্ষনে কবিতারা জট পাকায়,নার্ভকোষে 
 শঙ্খ লাগিয়ে দেয়,তুহিন তাদের খুন করতে পারে না। আজো তাই নিশাচর কলম চালায়,
 উদ্দেশ্যবিহীন। আজো সারা দিনের পর রাতটুকু সম্বল,ওটুকু সম্পুর্ন নিজের। 
 নাঃ,পরিবারেরও নয়। কারোর ব্যক্তিগত মলিকানা-ঐ সময়টায় নেই।
রচনাকাল : ১৭/৩/২০১৪
© কিশলয় এবং সন্দিপ নস্কর কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger
সমাপ্ত



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 3  China : 28  France : 2  Germany : 4  Iceland : 31  India : 192  Japan : 1  Russian Federat : 4  Saudi Arabia : 6  Singapore : 12  
Ukraine : 38  United Kingdom : 3  United States : 249  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 3  China : 28  France : 2  Germany : 4  
Iceland : 31  India : 192  Japan : 1  Russian Federat : 4  
Saudi Arabia : 6  Singapore : 12  Ukraine : 38  United Kingdom : 3  
United States : 249  


© কিশলয় এবং সন্দিপ নস্কর কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
উদ্দেশ্যহীন নিশাচর... by Sandip Naskar is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৫৯৫৩
fingerprintLogin account_circleSignup