গত পৌষের শীতে মা'কে একবার
জিজ্ঞেস করেছিলাম কাজলা দিদির কথা,
সকরুন দৃষ্টির অনির্নীত সীমানায়
দেখেছিলাম মায়াময় নুনে ভরা ব্যাথা।
বলেছিলাম মা'গো,চাঁদের বুড়ির
চড়কা কাটার শব্দ আজও বাজে মনের কানে,
ধরে আসা গলায় নির্বাক জননী
সিক্ত নয়নে তাকালেন মোর পানে।
জড়ানো কন্ঠে আনমনে বলে উঠলেন...
রূপকথার রাজকন্যার রূপের ঝলকানিতে
বিমোহিত রাজকুমার,
পঙ্খিরাজের ডানায় ভর করে
মুক্তোর মালা হাতে কম্পিত রাজদুয়ার।
সাত সাগর আর তের নদীর
দূরত্ব হল অতিক্রান্ত,
রাজকন্যার বরণ মাল্য গলেতে জড়িয়ে
রাজকুমার হলেন পরিতৃপ্ত।
অভিশপ্ত ডাইনি আর সোনার কাঠি,রূপোর কাঠির
কথা বলতে বলতে মা থামলেন.....
বললেন,জানিস খোকা
ছোট্ট বেলায় তুই দুষ্টু ছিলি ভীষন,
ঘুমোতে চাইতিনা,শুধু করতি জ্বালাতন।
তখন আমি সুরে সুরে ঘুম পাড়ানি
মাসি,পিসিকে ডাকতাম,
বলতাম,খোকার চোখে ঘুম নেই
খোকার চোখেই বসো।
এক সময় দেখতাম তুই ঘুমিয়ে পড়েছিস।
মা'র কথা শুনে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন নয়ন থেকে
দু'ফোঁটা নোনা জল খুলে পড়ল অনুভব করলাম।
গাঁয়ের পুকুরে অবাধ সাঁতারের
অবারিত উৎস এখানে কংক্রিটে পিষ্ট,
নাগরিক কোলাহলে কেতাদূরস্ত
ভাবনা গুলো আজ অতিষ্ঠ।
উঠোনের কোনের তুলসী গাছটাও আজ
অযত্নে,অবহেলায় বিবর্ন,
দুর্বিনীত যৌবনে পদার্পনের পূর্বেই গৃহীত
নগর জীবনের যান্ত্রিকতায় মনটা বিষন্ন।
পূবালী সমীরণের মৃদু মন্দ দোলায়
ধানক্ষেতে বাজেনা সুর আজ মরমির,
সন্ধ্যা হলেই সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালানোর
ব্যাস্ততা নেই কোন গৃহিনীর।
অনুকরনের গীগাযোজনে
মগ্ন এ সংস্কৃতি,
শখের ঘুড়ির নাটায় সূতো
কৃত্রিমতায় খোঁজে নিষ্কৃতি।
স্মৃতিগুলো আজ জলহীন মেঘের মত
গগন কোণে ভীষন নীরব,
ঘোড় অমানিশায় দেখছি ভীষন
ফেলে আসা ধূসর শৈশব ।।
নির্জন দ্বীপ
২৫/১০/২০১১
সন্ধ্যা
রচনাকাল : ৬/৭/২০১২
© কিশলয় এবং নির্জন দ্বীপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।