মাথা নিচু করে আনমনা হয়ে হাটছি পিছনে কে যেন ডাকলো হঠাৎ পিছু ফিরতেই
_______ কেমন আছেন?
আমি: (মাথা নেড়ে) ভালো
আবার হাটছি, হাটতে হাটতে একটা ছোট চা'য়ের দোকানে এসে পড়লাম বসে চা খাচ্ছি
পিছু থেকে কে যেন কথা বলছে ফিরে তাকাতেই সেই
একটা চা হাতে নিয়ে আবার
________ ভালো আছেন তো?
(আমি তাড়াতাড়ি চা ছেড়ে উঠে দাড়ালাম)
আমি : আপনি কে বলুন তো? আর আমাকে কি করে জানেন?
________ ওমা সেকি! আপনাকে কে না চেনে,
আপনি প্রণয় বাবু না?
আমি : হুম (কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই একখানা রিক্সা এসে হাজির আমি রিক্সায় উঠলাম)
________ এই রিক্সা যাবে হরিরামপুর?
আমি : সেকি! আপনিও হরিরামপুর যাবেন?
(বলা শেষ হওয়ার পূর্বেই উঠে পড়লো)
একটা মেয়ে আমার পাশে বসা কেমন যেন লাগছিল তবুও জিজ্ঞেস করলাম
আমি : আপনি কে বলুন তো?
প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে হঠাৎ রিক্সা থেকে নেমে গেল যতক্ষণ চোখে পড়লো একদৃষ্টে চেয়ে রইলাম ।
সন্ধ্যাবেলা একা বসে বারবার ভাবছি সেই মেয়েটির কথা কে সে? কেন বারবার মনে পড়ছে আমি তো চিনি না সে তো তেমন সুন্দরিও নয় শ্যামলা বরন এক কন্যা।
পড়দিন পত্রিকায় খবর ছাপানোর কাজে হাটছি (এই যা আমার পরিচয় তো দেইনি = আমি ছোট একটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করি), হাটতে হাটতে হঠাৎ
_________ প্রণয় বাবু উঠে আসুন শ্রীরামপুর যাবেন তো?
আমি : (হকচকিয়ে উঠে পড়লাম) বললাম একটু সময় হবে কোথাও বসার
________ ওকে ।
আমি : তাহলে খোলা মাঠের সবুজ ঘাসে বসা যাক?
_______ হুম।
বসে জিজ্ঞাসা করলাম
আমি : আচ্ছা এবার বলুন তো, আপনি কে?
সবুজ ঘাসে বসে দু'চোখের অশ্রু ছেড়ে চলেছে হঠাৎ ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো
আমি : একি কাঁদছেন কেন?
________ আমি রমা । আসলে আমার জীবনটা নাটকীয়তার মত তাই বলতে গেলে চোখে জল নেমে আসে ...........
আমি : না, কষ্ট লাগলে থাক।
রমা : বলছি, একটা ছোট্ট গ্রামে জন্ম আমার, জন্মের পূর্বে বাবা মারা যান, মাধ্যমিক পড়াকালীন মা মারা যাওয়ার সময় প্রতিবেশী খুব আপন এক দাদার হাতে আমাকে উঠিয়ে দিয়ে যান।
বলেই আবার কাঁদতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পর কান্না থামিয়ে
রমা : সেই দাদার নাম বিমল। মা মারা যাওয়ার পর সে আমাকে শহরে নিয়ে আসে কালী মন্দিরে মা কালীর সামনে আমাকে সিঁদুর পরিয়ে বিয়ে করে তারপর একটি হোষ্টেলে উঠে রাত কাটাই। পরদিন কোথা থেকে কয়েকজন লোক এলো বললো বেশ ভালো চলবে আমি আঁচলে মুখ ঢাকলাম বিমলকে ডাকলাম লোকগুলো বললো উনি নেই তোমাকে আমাদের কাছে বিক্রি করে চলে গেছেন ।
বলেই আবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো, একটু পর কান্না থামিয়ে আবার বলতে শুরু করলো
রমা : লোকগুলো রাক্ষসের মত আমার দিকে তাকালো আমি ওপরের ঘরে দৌড়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করলাম ভয়ে শরীর কাঁপছে অনেক বুদ্ধি খাটিয়ে ছাঁদে শাড়ি বেঁধে কোনরকমে ওখান থেকে পালিয়ে এলাম সেই থেকে এভাবেই দিন চলছে। একটু আধটু কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছি। কিন্তু বিমলের মত মানুষরা আর কোনদিন সুখী হতে পারবে না ঈশ্বর ওদের কখনও ক্ষমা করবেন না।
আমি খুব কষ্ট পেলাম। পড়ন্ত বিকেলের শেষ আলোক রশ্মিতে খুব ভালো লাগছিল তাকে। তাকে যেন মনে আপন করে ফেলেছি আমি তাকে বললাম .......
আমি : এবারে আমাকে বিশ্বাস করে দেখো আমি যে তোমাকে নিয়ে সারা রাত স্বপ্নের সিঁড়ি তৈরী করেছি যে সিঁড়িতে তোমাকে নিয়ে হাটতে চাই।
রমা : তা হয় না প্রণয় বাবু। আমি অপবিত্র হয়ে গেছি আপনার সেই পবিত্র অঙ্গে আমার এই জীবনকে জড়াতে পারবো না, ঈশ্বর আমাকে ক্ষমা করবেন না।
আমিও আপনাকে ভালবাসি কিন্তু ............
বলতে বলতে আবার কেঁদে উঠলো
আমিও দু'চোখ থেকে অশ্রু ছেড়ে বসে আছি
হঠাৎ পাশে চেয়ে দেখি রমা নেই কখন যেন উঠে চলে গেছে ।
আজও সেই রমাকে খুজে বেরাচ্ছি কিন্তু কোথাও নেই .........
আমার সেই রমা, আমার সেই ক্ষনিকের প্রেম ক্ষনিকের ভালবাসার রমা কোথাও নেই
কোথায় হারিয়ে গেছে সেদিনের সেই শেষ বিকেলের সাথে, , ,,,,,,,,,,,,,
___________ অসমাপ্ত প্রেম ___________
রচনাকাল : ২০/৪/২০১৯
© কিশলয় এবং সুজন কুমার রায় কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।