• ৯ম বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা (১০০)

    ২০১৯ , সেপ্টেম্বর



ভাইটি
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখিকা : সান্ত্বনা চ্যাটার্জী
দেশ : India , শহর : কোলকাতা

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৫ , নভেম্বর
প্রকাশিত ১৫ টি লেখনী ২৪ টি দেশ ব্যাপী ৭৩৬৯ জন পড়েছেন।
ভাইটি



লোহার খাটে আধশোয়া অবস্থায় এক মনে মাকে দেখে। তার মা কি সুন্দর , এখন আরও সুন্দর লাগছে , অফিস যাবার সাজে ।

মুক্তার খাট হাসপাতালের খাটের মতন , মাঝখানে জোরা, চাবি দিয়ে উঁচুনিচু করা যায় । কোমর থেকে নিচের অংশে সার নেই, সরু পোলিও রুগীর মতন ।

ঈশ্বরের কৃপায় মুক্তার আল জিভ না থাকার জন্য বা কোনও অজানা কারণে বচন শক্তি ও বিকৃত ।

মুক্তার মনের খবর তাই কেউ পায়না এক মা ছাড়া । সাত বছরের মুক্তা জানে এবার মা তার সাত মাসের ভাইটিকে অনেক আদর করবে । কোলে নিয়ে চুমু দেবে ।

এবার মুক্তার কাছে আসবে , এসেছে মা এসেছে , মা মা যেও না । আয়া মাসী আমাকে ভালোবাসেনা -মারে । রোজকার মতন আজো বলল মুক্তা ।

মা মুক্তার মাথায় হাত বোলায়, শান্ত করে ।
তার পরে বলে -তাড়াতাড়ি ফিরবরে মা , কোনও ভয় নেই । তার পর আয়া মাসীকে ডেকে বলে এদের দুজনকে তোমার কাছে রেখে যাচ্ছি খেয়াল রেখো ।

কি হল কি - আর কত আদিখ্যেতা করবে ? কর্কশ-কণ্ঠে বাবা বলে ওঠে । ভাইটিকে নিয়ে শূন্যে ছুঁড়ে দেয় আবার আবার - আর ভাইটি খিল খিল করে হেসে ওঠে ।

আয়া-মাসী চোখ পাকিয়ে এগিয়ে আসে । কি বলা হচ্ছিল মা কে?

ভয়ে গুটয়ে যায় মুক্তা - মাথা নাড়ে না না ।

হমম - নাও খেয়ে নাও । ডিম সেদ্ধ মুখের ভিতর গুঁজে দেয় ; রোজকার মতন চোখ মুখ ঠিকরে কষ্টে জল এসে যায় । ডিম, দুধ, পাউরুটি মাখন মুখে ঠুসে দিয়ে দায় সারে ।

এ ভাবেই দিন কেটে যায় কিন্তু আজ হটাত কি হয়ে গেল । দুপুরে খাবার পরে হটাত একটা শব্দে ঘুম ভেঙ্গে মুক্তা দেখে ভাইটি নিজের খাটের থেকে ঝুলে পড়ছে ; আয়া-মাসী কোথায় ? নিজের সব টুকু শক্তি নিয়ে নিজের খাট থেকে মাটিতে গড়িয়ে শরীর টাকে টেনে হিঁচড়ে এগিয়ে নেবার চেষ্টা করে ; ভাইটিকে বাঁচাতে হবেই । মুক্তা হাত বাড়ায় ভাইটিকে ধরবে , তার জীবনের একটা চরম সাহসের মুহূর্ত, ভালোবাসায় ভরা গর্বের সময়, মা বাবা দেখ আমিও কিছু করতে পারি ।


হটাত ঘরে যেন বাজ পড়ে - আরে এ্যয় হতভাগী একটু বাইরে গেছি কি ভাইকে টেনে  মাটিতে ফেলছে , আসুক আজ বাবা দেখ তোর কি হাল করে । চট করে ভাইটি কে কোলে নিয়ে ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয় ।

রাগে দুঃখে সারা ঘরে ওলট পালট করে, যা হাতের কাছে পায় তাই নিজের নির্বল হাতে টেনে টেনে ফেলে আর এক বোবা যন্ত্রণায় চিৎকার করে চলে ।

এক সময় দরজা খোলে , বাবা মা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে ।
দেখ কি একটা জন্তুর জন্ম দিয়েছ ; যেমন বিকৃত চেহারা তেমনি বিকৃত মানসিকতা ।


একে দিয়ে এস নাহলে আমাদের ছেলেকে মেরে ফেলবে একদিন ।


চুপ একদম ; তুমি তো স্বাভাবিক মানুষ, শিক্ষিত তার উপর বাবা ।

মা মুক্তার পাশে মাটিতে বসে মুক্তাকে কোলে টেনে নেয় । কি হয়েছিল মা রে, আমাকে বল ।

মুক্তা তার দুর্বোদ্ধ ভাষায় মা কে বোঝায় ।


মুক্তা যখন পেটে তখন আমার বসন্ত হয়েছিল আর তার বলি আমাদের মুক্তা । তোমাকে আমি কখনো ক্ষমা করতে পারব না । তোমরা  বোঝোনি বুঝবে ও না -  আমার মেয়ে কখনোই ভাইটিকে আঘাত করবে না । ও শুধু একটু ভালোবাসা চায় ।সবার মতন হতে চায় । আমরা ও কে পৃথিবীতে এনেছি , ওকে রক্ষা করা আমাদেরই দায়িত্ব ।


মা মা মা । মুক্তার ডাকে আকাশ বাতাস ভরে ওঠে ।

মা সে দিন ই আয়া-মাসী কে বিদায় দিয়েছিল । বাবা মুক্তাকে সেদিনের পরে আর বকেন নি, তবে ফিরেও তাকান নি ।।



দিদি দিদি  ডাকে মুখ ফিরিয়ে দেখে মুক্তা । এখন সে অনেক বড় হয়েছে , জানলার ধারে বসে আকাশ দেখছিল , ভাইটি স্কুল থেকে ফিরলেই দিদির আদর খাওয়া চাই । মুক্তা যদিও এখনো উঠে দাঁড়াতে পারেনা, কিন্তু নিজের  হুইল চেয়ার নিয়ে এঘর ওঘর করতে পারে। সে লেখা পড়া বেশী করতে পারেনি, কিন্তু ঈশ্বর তাকে রঙ তুলি দিয়ে সুন্দর সৃষ্টি করার ক্ষমতা দিয়েছেন । নিজের মনে ছবি আঁকে মুক্তা, তার আঁকার দিদিমণি বাড়ি আসেন । সেই ছবি নিয়ে ভাইটি বন্ধুদের দেখায় খুব গর্ব করে । এবার এক প্রতিবন্ধীদের প্রতিযোগিতায় মুক্তার আঁকা  ছবি দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে । ছবির নাম ‘ভাইফোঁটা’ । দেয়ালে বাঁধানো ছবির ভাইটির মুখে স্বর্গীয় হাসি 





রচনাকাল : ২/৮/২০১৯
© কিশলয় এবং সান্ত্বনা চ্যাটার্জী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 10  China : 25  Germany : 2  India : 167  Ireland : 34  Norway : 1  Russian Federat : 1  Saudi Arabia : 6  Ukraine : 21  United Kingdom : 1  
United States : 211  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 10  China : 25  Germany : 2  India : 167  
Ireland : 34  Norway : 1  Russian Federat : 1  Saudi Arabia : 6  
Ukraine : 21  United Kingdom : 1  United States : 211  
লেখিকা পরিচিতি -
                          সান্তনা চ্যাটার্জী ১৯৪৭ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি খড়দা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। 
বর্তমানে তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী এবং পুণে তে থাকেন। তিনি সাহিত্য চর্চাতেও সমান আগ্রহী। 
১৯৭৮সালে কোলকাতায় ইন্সটিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অফ ইন্ডিয়াতে কাজ করা কালীন তাঁর সাহিত্য চর্চা শুরু হয়। বর্তমানে নানান অনলাইন পত্র-পত্রিকাতেও লেখেন। 
                          
  • ৯ম বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা (১০০)

    ২০১৯ , সেপ্টেম্বর


© কিশলয় এবং সান্ত্বনা চ্যাটার্জী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
ভাইটি by Santwana Chatterjee is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫০৭০৩৭
fingerprintLogin account_circleSignup