"গতরাতে আরও কয়েকটা লাশ ভেসে গেছে জলে।
আমি শান্ত থেকেছি।
গতরাতে অক্সিজেনের অভাবে আরও কয়েকটা কিশোর ছটফট করেছে শেষবারের জন্য।
আমি অক্সিজেন সিলিন্ডার গুলো তখন বিক্রি করছিলাম আকাশছোঁয়া দামে।
তারপর সারাদিনের ক্লান্তি মেখে স্কচের শেষ চুমুক টুকু তুলে নিচ্ছিলাম ঠোঁটে।
গতরাতে রক্ত চেয়ে ফোন করেছিলো একজন মা,
ওর দশ বছরের ছেলেটা রক্তের অভাবে ছটফট করছিলো।
আমি দ্বিগুণ দাম বলায় হাউমাউ করে কাঁদছিলো মহিলাটা।
আমি ফোন কেটে দিয়ে লেটেস্ট ভিডিও গেমটা শুরু করেছিলাম।
গতরাতে একটা ছেলে ফোন করেছিলো তার বয়স্ক বাবার জন্য ওষুধের খোঁজ করতে।
আমি চারগুণ দাম বলায় অনেকক্ষণ অনুনয় বিনয় করেছিলো সে।
আমি ফোন কেটে জ্যোম্যাটো থেকে অর্ডার করেছিলাম চিকেন পাস্তা উইথ হোয়াইট সস।
কি হবে কান্না শুনে?
কি হবে যন্ত্রণা শুনে?
কি হবে আর্তনাদ শুনে?
এই তো দিব্যি আছি।
আমার ঠান্ডা ঘরের চারধারে অদ্ভূত দামী সব মুখোশ,
বামদিকে রঙিন বোতলের সারি।
লকার উপচে পরছে নোটের তাড়ায়।
শুধু মাঝে মাঝে রাত হলে ছোটোবেলার সেই কিশোরীর কথা মনে পরে।
সে আমাকে লেবু গাছের তলায় কোনো এক বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় বলেছিলো,
""আমার না বৃষ্টি ভেজা জুঁই বড্ড ভালোলাগে।
আর ভালো লাগে গীতবিতান।
জানিস কেনো?
ওখানে মানুষকে ভালোবাসা র কথা বলা আছে যে।
'ভালোবাসা' র থেকে গভীর সত্য পৃথিবীতে আর কি আছে বল?""
আমি সব গীতবিতান পুড়িয়ে দিয়েছি।
আমি বাগানের জুঁই ফুলের গাছ উপড়ে দিয়েছি।
তবুও শান্তি নেই, শান্তি নেই।
ঘুম নেই, ঘুম নেই।
কি আশ্চর্যজনক ভাবে জুঁই ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে রোজ।
আমাকে শান্তি দাও,আমাকে ঘুম দাও,
ভালোবাসা দাও আমাকে...
একটু ভালোবাসা...."
রচনাকাল : ২৮/৬/২০২১
© কিশলয় এবং ঋত্বিকা গায়েন কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।