"প্রিয়,
হঠাৎ করে চোখের সামনেটা কেমন যেন অন্ধকার হয়ে গেল। বুঝতে পারলাম না যে একঝটকায়ে তুমি কেন সব কটা আলো নিভিয়ে দিলে। নিকষ কাল, দম বন্ধকর অন্ধকারের মধ্যেই হাতড়ে হাতড়ে তোমাকে খুঁজতে শুরু করলাম, মনের মধ্যে একটাই আশা ছিল, একবার যদি তোমাকে পাই তাহলে সব মান অভিমান ভুলিয়ে দিয়ে আবার আগলে রাখবো। তোমাকে খুঁজতেই থাকলাম, তবে পেলাম না। বার বার গলা ফাটিয়ে চিৎকার করলাম তোমার নাম ধরে, তুমি সারা দিলে না একবারের জন্যও। তুমি কি সত্যিই আমার কথা, আমার ডাক শুনতে পেলে না? নাকি কোনো কারণে আমার উপরে অভিমান করে আমার সাথে আড়ী করলে? তোমাকে না খুঁজে পেলে যে আমার খুব একা লাগে তা তো তুমি জানোই, তবুও এলে না আমার সামনে! একবারের জন্যেও তোমার ইচ্ছে হল না সেই প্রথমদিনের মত আরও একবার আমার হাতটা ধরে বলতে যে আমি একা নই! কত স্বপ্ন তো দেখেছিলাম এক সাথে, সে সবের যে অনেক কিছুই পূরণ করা হলো না। তোমার মনে আছে? আমি আর তুমি ভেবেছিলাম একসাথে পাহাড় দেখতে যাব। পাহাড়ের অনেকটা উঁচুতে উঠে তুমি চিৎকার করে বলবে,""মেঘবালিকা, আমি তোমাকে অনেকটা ভালোবাসি।"" সেই কথা পাহাড়ী এলাকায় বার বার প্রতিধ্বনিত হয় ফিরে আসবে আমার কানে আর আমায় সেই শব্দের হাত ধরে হারিয়ে যেতে থাকবো তোমার মনের শহরের গলিগুলোতে। ভেবেছিলাম কোনো শান্ত নদীর প্রকৃতির কোলে একটা ছোট্ট বাড়ি হবে আমাদের, ঝিঝির ডাকে আমরা ঘুমিয়ে পড়বো আর ভোরের সূর্যর প্রথম লালচে আভা চোখের উপর এসে পড়লে প্রকৃতির সাথে আমরাও জেগে উঠবো। সমুদ্রের উঁচু ঢেউয়ের ধাক্কায় আমার পা যখন টলে উঠবে তখন তুমি আমায় শক্ত করে ধরে রাখবে, তবে শক্ত করে ধরে রাখার কারণে আমাকে ব্যাথা পেতে দেবে না। তুমি কি ভুলে গেলে সব? শহরের শেষ প্রান্ত অবধি ছুটে যাওয়া, বারাদায় বসে একসাথে বৃষ্টি দেখা, ছাদে শুয়ে একসাথে রাতের আকাশের তারা দেখা, সব সপ্নগুলো যে স্বপ্ন হয়েই থেকে গেল।
আমার সেই ছবিটা, যেটা তুমি আঁকতে শুরু করেছিলে, সেটা তোমার হাতের রং আর তুলির আঁচড়ের জন্য কাঁদে। সেতারের সুর আজ বড় বেশি করুন, খুব মন খারাপের তাল। তোমার সবচেয়ে পছন্দের গোলাপ গাছটাও বধহয় আজ তোমার উপর অভিমান করেছে, ফুল ধরে না তার শাখায়। আচ্ছা! তোমারও যে আমি ছাড়া চলত না। অফিস বেরোনোর সময় পরিপাটি করে সব জামাকাপড় হাতের সামনে চাই, সব রকমের খাবারও তো তুমি খেতে পারতে না, তোমার বেশি ঝাল খেলে নিশ্বাসে কষ্ট হত। হাতের সামনে জলের গ্লাসটা না এগিয়ে দিলে তোমার জল খাওয়ায় কথা মনেই থাকতো না। অন্ধকারে আমার হাতটা তুমি কেমন ছোটো বাচ্চাদের মত চেপে ধরতে, একটা নিরাপদ অশ্রয়ের খোঁজে। এখন তুমি যে জগতে চলে গেছো সেই জগতে তো তোমার খেয়াল রাখার কেউ নেই, তোমাকে নিয়ে যে আমার খুব চিন্তা হয়ে, তোমাকে এক মুহূর্ত একা করতে পারিনি কখনো, তবে বলো এখন কি করে করি! তাই ঠিক করেছি তুমি আমাকে ফাঁকি দিলেও ও ভুল আমি করবো না। যখন দুজন দুজনের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে কেউ কাউকে একা ছাড়বো না, তখন আজ আমিও তোমাকে ওই অজানা জগতে একা ছাড়বো না। আমি আসছি তোমার কাছে। এই জগতে আমিও যে তোমায় ছাড়া থাকতে পারছি না! তবে আমি এই কথা কখনোই লিখবো না যে আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়, কারণ এ যে মৃত্যু নয়, এ যে তোমার আমার মহামিলন। কোনো এক অন্য কোনো দুনিয়ায়, কোনো এক অন্য কোনো জগতে। এখনও আমাদের অনেক কথা বাকি আছে, পড়ে আছে সব স্বপ্ন, অনেকটা রাস্তা একসাথে চলার বাকি আছে। তবে তোমার সাথে দেখা হওয়ায় পর আমার কিন্তু প্রথম এই চিঠিতে জিজ্ঞেস করা কিছু প্রশ্নের উত্তর চাই, তাই এই চিঠি তোমার আকাশের ঠিকানার উদ্দেশে মেঘেদের ভেলায় পাঠিয়ে দিলাম। ওরা ঠিক তোমার কাছে পৌঁছে দেবে। উত্তরগুলো ভেবে রেখো; ওগুলো আমার চাই। তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে আসছি, এই বিরহের কাল আর বেশিক্ষন নাই, জানি দেখা হবে।
ইতি,
তোমার মেঘবালিকা।"
রচনাকাল : ২৮/৬/২০২১
© কিশলয় এবং প্রিয়াঙ্কা ব্যানার্জি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।