সাহিন আমার পাশের বাড়ির মেয়ে,
সুন্দরী, আমার বন্ধু...
সাহিন ধর্ম মানেনা,
আমায় কোরাণ পড়ে শুনিয়েছে।
উর্দু ভাষা রপ্ত করেছি ওর উৎসাহে।
আমার বাড়ি থেকে গীতাও নিয়ে গেছে...
সাহিন অনেকবার গেছে আমার সাথে মন্দিরে,
সকালে উঠে স্নান করে না খেয়ে,
পুষ্পাঞ্জলি দিয়েছে দূর্গাষ্টমিতে।
সাহিন আমার সহপাঠী।
পড়াশুনায় মেধাবী,
আবার ভীষন সহিষ্ণু,
সাহায্যে সব সময় প্রস্তুত।
সাহিন প্রতিবাদী।
তার সাহস আমায় অবাক করে।
সেদিন বাজারে কটুক্তি করা কয়েকটা ছেলেকে,
সাহিন চড় মেরে এসেছে,
তারা শাসিয়েছে,
বদলা তারা নেবেই।
সাহিন বলেছে আমায়,
কাপুরুষদের ও ডড়ায় না।
সাহিন প্রেমিকা।
হীরনের সাথে ওর সম্পর্কের কথা,
অবশ্য একা আমি-ই জানি।
বারে বারে বলেছি,
""সাহিন ও হিন্দু..!!""
সাহিন উড়িয়েছে হাসিতে।
সাহিন রঙীন।
গল্পঃ দেখে মনের রঙে ডুবিয়ে।
কি চমৎকার ওর লেখার হাত!
কি সম্মোহন ওর ভাষায়!
ওর সৃষ্টির মধ্য মানুষ আছে,
ধর্ম, বর্ণ, জাতি অযৌক্তিক,
মূল্যহীন ওর কাছে।
আমি আশ্চর্য হই ওর সৌন্দর্যে,
ওর সাবলীলতায়, ওর সরলতায়।
সাহিন কঠিন, সাহিন অনমোনীয়।
যেদিন সবাই জানল ওর হিন্দু প্রেমিকের কথা,
ধিক্কারে যেদিন ওর আম্মা কেঁদেছিল,
সাহিন কে সেদিনও দেখেছি শক্ত, অবিচল।
পাড়ার লোকে খারাপ কথার অন্ত রাখেনি,
হীরন ও ভেঙেছিল সম্পর্ক,
সাহিন সেদিন ও ঘরে জোর দিয়ে লুকায়নি।
আমার কাছে এসে,
আমার হাত ধরে বসেছিল।
যাওয়ার আগে শান্ত কন্ঠে বলেছিল,
""রুবি আমি জানি আমি ভুল করিনি।""
সাহিন এরকমই,
সাহিন অন্য।
সেদিন সন্ধ্যায় পড়াছিল আমাদের।
আমার ভীষন জ্বর,
তাই সাহিন একাই গেছিল।
রাতে খেতে উঠে শুনলাম,
সাহিন বাড়ি ফেরেনি তখনও।
মা বলল,
""পাড়ার লোকে বলাবলি করছে,
সাহিন নাকি ওই ছেলেটার সাথে পালিয়েছে!""
আমি নিরুত্তর...মন কুডাকছিল, ভয়ে...
ওই বাজার পেরিয়েই তো যেতে হয়!
বললাম,
""আকবার কাকুকে এখুনি বলো পুলিশের কাছে যেতে...""
দিয়ে আমি ঘুমিয়ে গেলাম জ্বরের ঘোরে।
ঘুম ভাঙ্গলো তখন দুপুর।
ভীষন আওয়াজ, মানুষের কোলাহল,
ঘরেও কেউ নেই।
শরীরে জোর নেই, তাই মাকে ডাকলাম।
মা সামনে দাঁড়িয়ে।
থমথমে মুখে, চোখ ভরা জলে।
আমায় জড়িয়ে ধরে ভেঙে পড়ল!
বারবার জিজ্ঞেস করলাম,
""মা সাহিন ঠিক আছে তো!!
বাড়ি ফিরেছে তো!""
মা আমার হাত ধরে বলল,
""সাহিন....সাহিন আর নেই..!!""
আমি মা'র হাত ছেড়ে, দৌড়ে গেলাম।
যে সিঁড়ির ঘরে,
ছোটবেলায় আমাদের সংসার সাজত,
বিয়ে দিতাম পুতুলের,
সেখানে সাদা কাপড়ে ঢাকা সাহিনের নিথর শরীর।
সাহিন একবার মহিষাসুর-মর্দিনীতে দূর্গা হয়েছিল।
কি সুন্দর মানিয়েছিল ওকে!
টানা টানা চোখে কাজল আরো উজ্জ্বল।
লাল গোল টিপ কপালে, লাল শাড়ি...গহনা,
সাহিনের মধ্যে দূর্গা তো ছিলই।
ওর পাশে বসে আজ শান্তি নেই।
খুঁজে পাচ্ছি না তো আমার সাহিনকে!
হঠাৎ পেলাম সে গলা,
শান্ত দৃঢ় গলা...
"" রুবি আমাকে ধর্ষন করেনি শুধু ওই কয়েকটা ছেলে,
আমি ধর্ষিত সমগ্র সমাজের হাতে!
রুবি তোকে বড় হতে হবে,
বদলাতে হবে রোগগ্রস্ত এ সমাজ,
শাস্তি দিতে হবে তাদের,
যাদের কাছে মেয়েরা মানুষ না,
মেয়েমানুষ.... মেয়েছেলে!!""
সাহিন প্ররনা।
সাহিন আমায় ছেড়ে কোথাও যায়নি।
সাহিন রয়েছে আমার মনে, সবার মনে।
সাহিন কে আমি বাঁচিয়ে রেখেছে,
প্রতিবাদে...প্রেমে।
সাহিন কে আমি পৌঁছে দেব মানুষের কাছে।
সাহিন মেয়ে।
সাহিন মানুষ।
রচনাকাল : ২৮/৬/২০২১
© কিশলয় এবং Turna Dutta কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।