আঠারো থেকে আঠাশ – জীবনের অন্যতম সেরা দশটি বছর। জীবনের বাকি অংশের সুখদুঃখ অনেকাংশে নির্ভর করে এই দশটি বছরের কর্মকান্ডের ওপরে। শর্মিলার জীবন একেবারেই অন্য খাতে প্রবাহমান। বেচেঁ থাকার লড়াই এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তির মোড়কে মোড়া তার জীবন। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অত্যন্ত ভালো নম্বরসহ উর্ত্তীর্ণ হয়ে নবগ্রাম মহাবিদ্যালয়ে ইংরাজীতে অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছে সে। দুচোখে অনেক স্বপ্ন আর দৃঢ়তা। ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপিকা শ্রীমতি অনুমিতা সান্যালের চোখ চিনতে ভুল করলো না খাঁটি হীরের ন্যায় উজ্জ্বল মেধা। এক সুন্দর আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠলো ম্যাম ও ছাত্রীর মধ্যে। যার ভিত্তি স্নেহ ও শ্রদ্ধা। আর দুমাস পরেই অবসর নেবেন কিন্তু শর্মিলার প্রতি স্নেহের বন্ধন আরো দৃঢ় হচ্ছে।
ইতিমধ্যে দু'মাস অতিক্রান্ত। আজ অনুমিতাদেবীর অবসরগ্রহণের দিন। কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুমিতাদেবী ব্যস্ত অফিসঘরে। কিছু বাকি থেকে যাওয়া কাজ সারতে। গুটি গুটি পায়ে সেখানে প্রবেশ করে শর্মিলা। নিজ হাতে ম্যামের একটি ছবি একে এনেছে সে, উপহার স্বরুপ। আসলে ম্যাম আশীর্বাদ করে বললেন ''মাঝপথে থেমে যেও না। যে কোনো প্রয়োজনে পাশে আছি।''
সাত বছর কেটে গেছে। ডক্টরেট করা শর্মিলা রায় এখন বগুলা কলেজের ইংরাজি বিভাগের অধ্যাপিকা। প্রতিবছর অনুমিতা ম্যামের মৃত্যুদিনে দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে পুস্তক বিতরণ করে সে। একটি অনুচ্চারিত বাক্য সঙ্গ দেয় তাকে, ''আমি মাঝপথে থামিনি ম্যাম। আপনার সাহচর্য এবং আশির্বাদ আমাকে থামতে দেয়নি।''
রচনাকাল : ২৮/৬/২০২১
© কিশলয় এবং সঞ্চিতা সাহা (দাস) কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।