কামালপুর বন্দর বড্ড পছন্দ সাফিউলের। এই বন্দরে জাহাজও এখন আসে না, সারাদিন জায়গাটা খাঁ খাঁ করে। এই জাহাজ বন্দরে এখন কেউ তেমন আসে না, তবু সাফিউল এসে বসে থাকে প্রতিদিন। এই বন্দর একসময় লোকে গিজগিজ করতো, সকলে ছুটে বেড়াতো এদিক থেকে ওদিক। সাফিউল আর পাঁচজনের মতোই এই বন্দরে কাজ করতো। ওর প্রতিটা দিন কেটে যেতো কাজের মধ্যে আনন্দে। এই কাজের মাঝে কখন যে সকাল থেকে সন্ধ্যে হতো বোঝাই যেতো না।
আজ সেসবের বালাই নেই। সময় থমকে গেলেও সাফিউল প্রতিদিন এখানে এসে ভালোলাগার রসদ খুঁজে পায়। এই পরিত্যাক্ত বন্দরে যখন কেউ আসে না সে ঘুরে বেড়ায় প্রতিটা আনাচে কানাচে। এই বন্দর যে সাফিউলের বড্ড ভালো লাগার।
আকাশে মেঘ জমছে আস্তে আস্তে। বেলা শেষের ইঙ্গীত দিচ্ছে মেঘের দল। আঁধার পুঞ্জিত হচ্ছে চারিদিকে। প্রতিদিনের মতোই এবার ধীরে ধীরে সন্ধ্যে নামবে জানে সাফিউল। একটু বাদে গাঢ় অন্ধকার গ্রাস করবে চারিদিক। সাফিউল আঁধারকে ভয় পায় না। যখন সন্ধ্যে নামে , আঁধারে ঢাকে চারিদিক তখন ও হেঁটে বেড়ায় এই বন্দরের চারপাশে জানার থেকে অজানার উদ্দেশ্যে। সাফিউল প্রতিদিন এই বন্দরের নীরবতা নির্জনতাকে আপন করে নেয়। আজ আর কোনো কিছুতেই কষ্ট হয় না সাফিউলের , মৃত্যুর পরে যে কোনো ভালো বা খারাপ থাকতে নেই। এই বৃত্তে যে সবটাই সমান।
সাফিউল আজ সশরীরে না থাকলেও সর্বক্ষণ ছায়া হয়ে আগলে রেখেছে এই কামালপুর বন্দর। এই বন্দরেই একদিন জলে ডুবে জীবন প্রদীপ নিভে গেছিল সাফিউলের , কেউ খুঁজেও পায়নি তার ফুলে যাওয়া শরীরটা। মৃত্যুর পরেও আজ সাফিউল রয়েছে ওর ভালোবাসার এই বন্দরে। এই বন্দর আগলে রাখে সাফিউল। প্রতিদিন একইভাবে সাফিউলের আত্মা ফিরে আসবে এই বন্দরে।
এই বন্দর সাফিউল যে বড্ড ভালোবাসে।
রচনাকাল : ২৮/৬/২০২১
© কিশলয় এবং আকাশ দত্ত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।