পথ চলতি ডিজেল অটোরিকশায় মুখোমুখি সিট। তিনজন বসে গেলে আরামসে যাওয়া যায়। কিন্তু বেচারা টোচালকদেরই বা দোষ দিই কি করে? যা বাজারদর। সংসার চালাতে চেপে চেপে চারজন প্যাসেঞ্জার না নিলে চলে না। সেই নিয়ে প্রতিদিন প্যাসেঞ্জারের সঙ্গে ড্রাইভারের বচসা লাগে।
সেদিন ডায়মন্ড হারবার যাচ্ছি। বাড়ি থেকে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়েছি। তারই মধ্যে মুখে মাস্ক পরতে হবে। খেয়াল করে মাস্ক পরে গাড়ির পিছনের সিটে বসেছি। একটা সিট ফাঁকা। আমার ঠিক সামনের সিটে একজন ভদ্রলোক এসে বসলেন। মাস্ক ছাড়াই দিব্যি বসে পরলেন।
আমি ভালো ভাবে বললাম "দাদা, এই করোনার বাজারে মুখে মাস্ক না পরেই উঠেছেন। দেখছেন গাড়ি ভর্তি লোক। সবার মুখ ঢাকা।"
ভদ্রলোক একটু হেঁয়ালি করেই বললেন, "তাহলে আর চিন্তা কি? তোমাদের আর করোনা হবে না। যা হবার না হয় আমারই হোক। এত জ্ঞান দিতে হবে না। সব জানা আছে আমার।"
যেচে ভালো কথা বলতে গেলাম। শুনতে হলো কটূকথা। ভদ্রলোক গাড়িতে বসেই কাশছে। গাড়ির প্রত্যেকের অস্বস্তি হচ্ছে বুঝতে পারছি। তবু কেউ কিছু বলছে না। তারপরই মুখ থেকে কেশে লালা বের করে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলার চেষ্টা করলেন। প্রচন্ড বিরক্তি আর রাগে চেঁচিয়ে উঠলাম-
"খুব সাবধান। এই নাকি আপনি সব জানেন ! এটুকু জানেন না কাশি হাঁচি হলে নাক মুখ ঢেকে রাখতে হয়। শরীর খারাপ হতেই পারে। তা বলে প্রকাশ্যে জনসমাজে এভাবে কাশতে আপনার লজ্জা করছে না। মাস্ক নেই পকেটে? রুমাল ও কি নেই?"
নিজের ব্যাগ থেকে নতুন একটা রুমাল এগিয়ে দিয়ে বললাম, 'ধরুন। আর অন্যের জ্ঞান নিতে কষ্ট হলে নিজের জ্ঞানটা নিজেই কাজে লাগান। সমাজের উপযুক্ত মানুষ হয়ে উঠুন। তাহলে আর কারোর কথা শুনতে হবে না।'
লজ্জিত ভদ্রলোক নিজের পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে ঢেকে নিলেন মুখটা।
গাড়ি থামলো। নেমে পড়লাম।
ভদ্রলোক মাথা নিচু করে বসে রইল। গাড়িটা এগিয়ে চলল গন্তব্যের দিকে।
রচনাকাল : ২৮/৬/২০২১
© কিশলয় এবং অঞ্জনা গোড়িয়া কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।