অনেকদিন পর আজ সকালটা অন্যরকম লাগছে বিপিনের। গেল বার ঝড়ে ঘরের চাল উড়ে গেলো। চাষের জমিতে নোনা জল ঢুকে ফসল সব নষ্ট হয়ে গেলো। নদীর ধারে যে দোকান ছিল তাও শেষ। জীবনে লড়াই করার ইচ্ছেটাই হারিয়ে যাচ্ছিল ক্রমশ। যাই হোক, কেটে গেলো কয়েক মাস। জমির জল নেমেছে। ঘরের চাল আবার সারানো হয়েছে সরকারি সহযোগিতায়। দোকানটাও এবার শক্ত পোক্ত ভাবেই তৈরি করেছে তারা। মহামারী বিদায় নিয়েছে পৃথিবী থেকে। লকডাউনও উঠেছে তাই , ছেলে মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে। মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরিয়েছে আজ । মেয়ে ভালোভাবে পাশ করেছে। তাদের বংশে এই প্রথম কেউ মাধ্যমিক অবধি পৌঁছল। এতদিনে যেনো বিপিনের আর স্ত্রী মালার কষ্ট কিছুটা হলেও সার্থক। এতো বাধার পরেও যে তাদের মেয়েটা মাধ্যমিক পাশ করতে পারবে এ যেনো স্বপ্নেরও অতীত। ছেলেটা নাইন এ পড়ে। তাকে নিয়েও স্বপ্ন অনেক। অভাবের কারণে নিজেদের পড়াশোনা করা হয়ে ওঠেনি। মালার তো সুযোগই জোটেনি। বিপিন তাও ক্লাস ফোর অবধি পড়েছিল টেনেটুনে। তারপরেই তো বাবার সাথে ক্ষেতে যেতো। এটাই তাদের দাদুর আমল থেকে হয়ে আসছে। কিন্তু তার খুব জেদ ছিল ছেলে মেয়েকে শিক্ষিত করার জন্য। সেই ইচ্ছে ডানায় ভর দিয়ে নিজের চেষ্টা আর সরকারি সাহায্য দিয়েই আজ এতদূর পড়াতে পেরেছে ছেলে -মেয়েকে। মনের সাধ তার আরও অনেক দূর অবধি পড়বে ছেলে মেয়ে। বড়ো চাকরী করে তাদের দুঃখ ঘোচাবে।আজ মনে হচ্ছে অতীতের সব কালো দিন গুলো আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে জীবন থেকে। মনে জাগছে আশা,জীবন আবার হয়ে উঠবে সোনালী, প্রাণবন্ত।।
রচনাকাল : ২৮/৬/২০২১
© কিশলয় এবং পূর্বালী চক্রবর্তী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।