মানুষ কেন আত্মহত্যা করে?
আত্মহত্যা তো কাপুরুষরা করে, বোকারা করে। ইচ্ছে হল না খেতে তাই খেলামনা, পড়তে ইচ্ছে করছেনা তাই পড়ব না।তেমনি বাচঁতে ইচ্ছে করছেনা তাই বাচঁবনা এমনটাই কি?
বোধহয় না। এত সুন্দর একটা পৃথিবীতে মানুষ জন্মায় খুব ছোট্ট কোন কারণে মরার জন্য নয়। শুনেছি আশি জনম পেরিয়ে মনুষ্য জনম লাভ করে (শোনা কথা) আর সেটা হেলায় হারাতে বোধহয় কেউই চায়না। প্রত্যেকটা মানুষ বাচঁতেই চায়, বাচাঁর জন্য মানুষ কি না করে। কত কঠিন কঠিন কাজ হাসি মুখে করে শুধু বাচাঁর জন্য। অথচ কেউ আত্মহত্যা করলে আমরা এক নিমেষে তাকে কাপুরুষ বলে আখ্যায়িত করি।
কিন্তু এটা ভাবিনা যে ঠিক কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাকে। ঠিক কি ঘটেছিল তার সাথে, কেন এমন একটা ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাকে। না একদমই ভাবিনা আমরা। মানুষ কিন্তু বাচঁতেই চায়, যতক্ষণ না দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় ততক্ষণ পর্যন্ত নিজের সাথে লড়াই করে চলে। বাচাঁর পথ হাতড়ে বেড়ায়। সব পথ যখন বন্ধ হয়ে যায়, যখন আর কোন কূল কিনারা খুঁজে না পায় ঠিক তখনি একটা মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নেয়। ব্যতিক্রম সবকিছুর মধ্যেই থাকে। কিছু অল্পবয়সী ছেলে মেয়ে হয়ত অভিমান করে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবে, বা খুব ছোট ছোট কারণে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। কারণ তারা জীবনটাকে সেভাবে চিনতেই শেখেনি। কিন্তু এই মুষ্টিমেয় কিছু ছেলেমেয়ের দেখে বাকিদের বিচার করতে পারিনা বোধহয়। আত্মহত্যা কোন সমস্যারই সমাধান হতে পারেনা। কখনোই এটা বলছিনা যে জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে। কিন্তু যারা লড়াই করে আর কোন পথ খুঁজে না পেয়ে এই সুন্দর পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাকে মৃত্যুর পর এক নিমেষে কাপুরুষ বলে আখ্যায়িত করাও বোধহয় উচিত নয়। সে যে বেঁচে থাকার জন্য কোন চেষ্টাই করেনি, বা খুব সহজেই হেরে গেছে এটা আমরা জোর দিয়ে কি করে বলতে পারি? যাদের কাছে বেঁচে থাকার থেকে মৃত্যুর যন্ত্রণা বেশি সুখের মনে হয় যাদের কাছে জীবনের প্রতিটা মূহুর্ত অসহনীয় হয়ে ওঠে তারাই জীবনের গতিপথে আমরা এই সমাজের চোখে এই পৃথিবীর চোখে সমাপ্তির দাগ টেনে দেয় আর নিজেদের বোকা, কাপুরুষ প্রমান করে অকালে ঝরে যায়।
বি:দ্র: কারো যদি মনে হয় লেখাটা নেতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে বা যে লিখেছে সে আত্মহত্যাকে সমর্থন করে তবে তার সেই ধারণা নিয়ে লেখাটা এড়িয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানাই।এই লেখা কখনোই আত্মহত্যাকে সমর্থন করেনা শুধু সবটা না জেনে যিনি চলে যায় তাকে বা তাদের অযাচিত ভাবে কাপুরুষ আখ্যায়িত করা থেকে বিরত থাকার কথাই বলা হয়েছে।
রচনাকাল : ৯/৩/২০২১
© কিশলয় এবং মনি রায় ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।