সামনেই পুজো তাই মেয়েকে নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছে বাবা।মেয়েটির বয়স খুব জোর দশ কি এগারো।
বাবার হাত ধরেই ঘুরছে আর এটা সেটা কিনছে।
হঠাৎ একটা মূর্তির গায়ে পরানো সুন্দর ঝকঝকে জামা দেখে মেয়েটি ওখানেই দাড়িয়ে পরে বাবার হাত ছেড়ে।বাবা পেছন ঘুরে দেখে মেয়ে মূর্তি টার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।মেয়ের কাছে জিজ্ঞেস করল, কিরে দাড়িয়ে পরলি যে?চল এবার আমার একটা জুতো কিনলেই কেনাকাটা মোটামুটি শেষ হবে।কিন্তু না মেয়েটি সেখান থেকে কিছুতেই নড়ছেনা।এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে মূর্তি টির দিকে।
বাবা আবারও জিজ্ঞেস করল কিরে কি দেখছিস হা করে,চল মা নয়ত ফিরতে দেরী হয়ে যাবে যে।
মেয়েটি আস্তে আস্তে বলল,বাবা এই জামাটা কিনে দেবে,দেখ কি সুন্দর জামাটা,আমায় পড়লে খুব মানাবে।কথাটা বলে মেয়েটির চোখে একটা জিজ্ঞাসা চিন্হ ফুটে উঠল।বাবার কাছ থেকে উত্তরের প্রতীক্ষায় মেয়েটি ঘাড় উঁচু করে বাবার দিকে তাকিয়ে রইল।ইতিমধ্যে অন্য দোকান থেকে মেয়ের জন্য জামা জুতো কেনা হয়েছে।বাজেটও শেষ এবার শুধু নিজের জন্য একজোড়া জুতো কিনতে হবে।গতবছরও কেনা হয়নি তার আগের বছরও না।বেশ কয়েকবছর ধরে এক জুতোতেই চলছে।সংসারের জাতাঁকলে নিজের সব চাহিদা গুলো কখন যেন চাঁপা পড়ে গেছে টেরও পায়নি।ছেলে মেয়ে স্ত্রী এদের ইচ্ছে পুরন করতে করতে নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছের কথা আর ভাবা হয়ে ওঠেনা একজন বাবার।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বাবা হেসে বলল, ঠিক আছে চল কিনে দিচ্ছি।শুনেই মেয়ে আনন্দে বাবা কে জড়িয়ে ধরলো।পূজোর সময় মেয়ে টাকে কষ্ট দিয়ে জুতো কিনতে চায়না তার মধ্যবিত্ত বাবা।থাক্ এবারেও না হয় পুরোনো জুত টা দিয়েই কাজ চালিয়ে নেয়া যাবে।পছন্দের জামাটা পেয়ে মেয়ের এই হাসি মুখ টা দেখে বাবা আবারও তার নিজের খুশির কথা বেমালুম ভুলে গেল।
বাবা শব্দ টার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে একটা ভরসা।একটা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ।
ওপর থেকে দেখে যত কঠিন মনে হয় মানুষ টাকে আদতে মানুষ টার ভেতরটা ভর্তি থাকে তার ভালোবাসার মানুষ গুলোর সুখ আর আনন্দ দিয়ে।
পরিবারের সুখেই সুখ খুঁজে নেয়।তাদের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে নিজের সমস্ত চাহিদা ভুলে যে মানুষ টা তাকে বাবা বলে।
আন্তর্জাতিক পিতৃ দিবসে সকল বাবা দের জানাই সশ্রদ্ধ প্রনাম।ভালো থাকুক সকল বাবা।সুস্থ থাকুক সকলের নিরাপদ আশ্রয়।
রচনাকাল : ১৫/৬/২০২০
© কিশলয় এবং মনি রায় ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।