আয়নায় নিজেকে আর এক বার দেখে নেয় আরতি। কি নেই তার মধ্যে যে কিছুতেই সে অজিতের মনের মানুষ উঠতে পারছেনা। বিয়ের পর দিন থেকেই সে তার প্রাণ মন দিয়ে অজিত কে ভালবাসতে চেষ্টা করেছে, হয়ত পেরেছে ও কিছুটা কিন্তু অজিত, কেন অজিত এমন ছাড়া ছাড়া থাকে! তার কি অন্য কোনও প্রেয়সী আছে, বা অন্য কোনও মেয়ে মানুষ, নয়ত এমন ব্যবহার কেন?
বাবা মায়ের পছন্দ করা পাত্রীকে বিয়ে করেছে অজিত; বাধ্য হয়ে ভুলে যেতে হয়েছে তার প্রথম প্রেম মানসীকে, তার মনের মানুষ মানসী। মানসীর জন্য পৃথিবীর সবার সঙ্গে লড়তে পারত অজিত, কিন্তু মৃত্যুর সঙ্গে কি করে যুদ্ধ মাত্র তিন দিনের অজানা জ্বরে মারা গেছিল মানসী আজ থেকে তিন বছর আগে। পৃথিবী থেকে মুছে গেলেও, অজিতের মন থেকে কেউ সরাতে পারবেনা তার মানসী কে , কেউ না আর তাই নিজের বৌয়ের বিরুদ্ধে এক অযৌক্তিক বিদ্বেষে তার মন ভরে থাকে।।
অজিত কাগজের থেকে চোখ না তুলেই ডাকে- মায়াদি, এক কাপ চা দাও না।
দূর থেকে সারা আসে "এই দিচ্ছি দাদাবাবু" ।
উঃ অসহ্য , মনে মনে ভাবে অজিত । শাড়ি, গয়না, সাজ-গোজ, আর টেলিভিশনের প্যান প্যানে ধারাবাহিক, এর বাইরে কোনও জগত নেই তার বৌএর। এই যে দেশে এত বড় ঘটনা ঘটল, বিজেপি এত বছরের দল জাতীয় কংগ্রেসকে গো হারান হারাল, কোনও অভিব্যক্তি আছে তার জন্য। শুধু মাত্র একটা সুন্দর শরীর ।
বৌ কে নিয়ে ‘শব্দ’ দেখতে গেছিল অজিত, মাঝ খানেই আরতি বলে ওঠে, এ কিসব দেখাচ্ছে বলত, শুধু নানা রকম শব্দ । সেদিন থেকে অজিত প্রতিজ্ঞা করেছে
আরতিকে নিয়ে আর সিনেমা দেখতে যাবেনা, যেতে হলে নিজে একা যাক পাগলু, খোকা চারশো বিশ। নিজের চেনা জগতের বাইরে ও যে কোনও জগত থাকতে পারে, ভাবনার চিন্তার নিজের ভিতরের মানুষটাকে জানার, এ সব আরতির জগতে নেই। দেহ সর্বস্ব মেয়ে মানুষ। মোটা পাছা আর ভারি বুক আর একটা সুন্দর মুখ নারী কে আকর্ষণীয় করে তোলেনা এটা বোঝেনা কেন কে জানে।
চা শেষ করে চটিতে পা গলায় অজিত।
"কোথায় যাচ্ছ?"
"হাঁটতে, কেন?"
"একটা ওডিকলোনের শিশি এনো না গো বাবুর দোকান থেকে।"
"ঠিক আছে।"
বেশ রাত করে ফেরে অজিত , তার খাবার সাজিয়ে বসে আছে আরতি।
খাওয়া শেষ করে কিছু ক্ষণ খবর শোনে অজিত তারপরে শুতে যায়।
রোজকার মতন আজও খবর চালিয়ে বসল টিভির সামনে । এ সময় আরতি, রাতের প্রসাধন সারে, চুল বাঁধে, গায়ে গন্ধ মাখে। তারপর বিছানায় অপেক্ষা করে। অজিত খবর শুনে, হাত পা ধুয়ে শোবার ঘরে ঢোকে। আজ ঘরে একটা চাপা ওডিকলোনের গন্ধ, সদ্য কিনে এনেছে অজিত দোকান থেকে ।
ঘরের আলো নেভানোই ছিল। পাজামার দড়ি আলগা করে খাটে ওঠে অজিত, পাশে সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় উদগ্রীব আরতি। সেই নরম গরম লোভনীয় শরীরেরআহ্বান অবজ্ঞা করার শক্তি তার নেই। চাপা গালাগাল দিয়ে শরীর নিয়ে খেলা শুর করে ক্রমশ ঘৃণার নারীতে প্রবেশ করে সে আর তার প্রতি রোম রোম কামনা আর সুখে কাঁপতে থাকে। ক্রমশ আরতির শীৎকার ও চাপা গোঙ্গানি আর অজিতের শরীরের ওঠানামা শেষ সীমায় এসে থেমে যায়।
অজিত উঠে একটা সিগারেট ধরায়, ঘৃণা ঘৃণা আর ঘৃণা করে সে নিজেকে আর আরতি কে ।
এই কাম তাকে প্রতি রাতে হারিয়ে দেয় ঘৃণার মেয়ে মানুষটার কাছে।
রচনাকাল : ১৮/৮/২০১৯
© কিশলয় এবং সান্ত্বনা চ্যাটার্জী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।