...শান্তনু......।
কথায় আছে স্বপ্নবিলাসী। তা সবাই বলে আমাদের বিলাস রায় অরফে মন্টু এই খেতাপ সহজেই অর্জন করতে পারে ।
ছোটোবেলায় হাফপ্যান্ট পরা অবস্থা থেকেই মন্টুকে দেখেলেই আমরা বলতাম এই যে স্বপ্ন বিলাসী এসে গেছেন । তা মন্টু
ঠাট্টা তামাশা গায় মাখতনা কোনোকালেই। স্বপ্ন দেখা অত সোজা নয় বুঝলি, স্বপ্ন দেখতে এলেম দরকার । আমি কি রকম
টেকনিকালার স্বপ্ন দেখি তোরা জানিস! শুনলে তোরা হিংসায় কাঁচা পেয়ারা হয়ে যাবি । তোরা হাজার চেস্টা করলেও
আমার মতন স্বপ্ন দেখতে পারবিনা, বুঝলি – অনুভুতি দরকার, বুঝলি অনুভুতি – তোদের মতন কেঠো পাজীদের কম্ম নয় ।
কেনরে বেটা ! কি এমন স্বপ্ন দেখিস, যে আমরে দেখতে পারবনা । রতন তো রেগে আগুন ,আর রঙিন স্বপ্ন দেখাটা
কি এমন ব্যাপার, এই তো সেদিন আমি দেখলাম লাল সালোয়ার পরে পরী চলেছে রাস.. এয়, এয় শরু হল প্রেমাক্ষান-
চুপ- চুপ কর বলছি –আমরা সবাই তেড়ে উঠলাম । সত্যি একে নিয়ে আর পারা যায় না, দেখ না দেখ পরী কে
টেনে আনে । তুই বেটা পরীর স্বপ্ন দেখার কেরে ? তোকে পাত্তা দেয়? একবারো তোর দিকে ফিরে তাকায় ?
ফেকলু কোথাকার । পরীর স্বপ্ন দেখতে হলে বিমান দেখবে , পরীর সংগে ওর হেভি ইয়ে, পরী এখান দিয়ে যাবার সময়
আড় চোখে কেমন তাকায় দেখেছিস বিমানের দিকে ! ছটকু ফোরোন কাটে ।বেটা বিমানের চামচা , আমাদের ভাল না
লাগলেও কেউ কিছু বলিনা । কি করে বলব – বিমানের চেহারাটা দেখলে গলা দিয়ে আর কথা বেরোয় না। এই লম্বা,
ইয়া চওরা বুক, একেবারে অরন্যদেব ;আমরা তো সব ছুঁচো ওর কাছে ।আমাদের কি ইয়ে আছে শালা যে পরী বিমানকে
ছেড়ে আমাদের দিকে তাকাবে ।
মনে মনে বিমানকে পরীর সামনে এক চড়ে নর্দমায় ফেলে দিলাম । এ ছাড়া আর উপায় কি , আর কি বা করতে পারি ।
পরী আমাদের পাড়ার সম্পদ । যেমন দেখতে, তেমনি লেখাপড়ায়, তেমনি খেলাধুলায় , এক্কেবারে, সর্বগুনসম্পন্না যাকে বলে ।
পাড়ার সব যোয়ান ছেলেদের বুকে পরীর নামে ব্যাথা আছে । আমার ব্যাথাটা অনেক গভীর, অনেক বড় ক্ষত ।
এরা সে ব্যাথার কি বোঝে , এক একটা গন্ডার ।পরীর বাড়িতে একমাত্র আমার যাওয়া-আসা আছে, তাই এরা আমাকে
অনেকটা সমীহ করে । পরীর ছোটোভাই এবার মাধ্যমিক দিচ্ছে, তাকে অঙ্কটা পড়াই আমি। আমাদের মধ্যে, ছটকুতো
পানওয়ালা, গো-মুখ্যু আর বিমান অর্ধশিক্ষিত টাকাওয়ালা বাপের সুপুত্তুর , স্কুলের দশক্লাসের গন্ডী পাড় হয়নি ।
রতন গ্র্যাডুএট কিন্তু ওর বাবার সোনার দোকানে বসে । আমি আর মন্টু একসঙ্গে আষুতোষ কলেজ থেকে ফিজিক্সস অনার্স
নিয়ে পাশ করে , কলকাতা বিশ্ববিদ্যাল থেকে নাইটে এমবিয়ে করেছি । গত ছ-মাস ধরে বেকার ।
বিমানকে কিছু না বলার আরো কারন আছে ।ওর বাবা শালা প্রমোটার ,অনেক কালো টাকা পকেট সব সময় গরম। কারনে,
অকারনে ধার দেয়, রেসটুরেন্টে নিয়ে খাওয়ার । এক্ষুনি দরাজ গলায় বল্ল –চল নবীনায় ম্যাটিনি শো-টা মেরে আসি ।
বিমান থাকলে আমরা কেউ পকেটে হাত দিই না । আজ আমার মুড নেই ।বললাম –না, রে তোরা যা , আমি আজ
যেতে পারবনা ।
কেনরে তোর কি রাজকার্জ আছে ?
তোরা তার কি বুঝবি রে, আকাট মুখ্যুর দল ! আমার আজ একটা চাকরীর ইন্টারভিউ আছে। বেশ গর্বের সঙ্গে
কথাটা ছুঁড়ে দিয়ে আমি উল্টোদিকে হাঁটা দিলাম । মনটা শালা এখন নিমতিত । আমার তো সবি ছিল, শিক্ষা, পরিচয় ,
চেহারা –সবাই তো বলে আমাকে নাকি অনেকটা হৃতিকের মতন দেখতে । চাকরীও পেতে চলেছি । তবে আমি শালা
বিমানের থেকে কম কিসে । যদি না ভগবান মেরে না রাখত । শালার ভগবানের কি আর কোনো কাজ নেই, লোক
বেছে বেছে বাঁশ দেওয়া ।আমার ইন্টারভিউ দুপুর আড়াইটে ।এখন বাজে দশটাচল্লিশ , হাতে অনেক সময় । ঘুরে আসবনাকি
কবিরাজের কাছ থেকে । শুনলাম বেটার ছেলে ধন্বন্তরী, একটা ট্রাই নেব নাকি!
আরে , আরে, কে রে ধাক্কা মারছিস । চমকে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখি ,মন্টুটা দাঁত কেলাচ্ছে – হাঁফ নিয়ে বল্ল –কোথায়
ইন্টারভিউ রে তোর ! কিছু বলিসনিতো আগে ! আমি ভয়ানক মুখ করে বললাম –যাচ্ছি একটা শুভ কাজে, দিলি তো
বাধা শালা আহাম্মক । মারব পাছায় এক লাথি । মুখ কাঁচু মাচু করে মন্টু – রাগ করছিস কেন রে । জানিস তো
আমার বাড়ির অবস্থা । ছোট বোনটা শালা রোজ বিনুনি দুলিয়ে, ব্যাগ ঝুলিয়ে আপিস যাচ্ছে । প্রেস্টিজে আলকাতরা ।
তোর ছোটমামা তো ইনফোসিস এ –একটু বলিস না আমার হয়ে । তুই না আমার হাফ-প্যান্টের ইয়ার ! স্বপ্ন-টপ্ন সব
ছাই রঙা হয় গেছে রে , রং-টঙ সব মুছে যাচ্ছে ।থালার মতন গোল মুখটাকে যথা-সাধ্য করুন করল ।
আমি চোখ সরু করে দেখলাম ওকে । বটে, এই নাকি স্বপ্নবিলাসী ।বেটাচ্ছেলে ছ-মাসেই টেকনিকলার থেকে সাদা-কালোতে
নেমে এসেছে ।জীবনে রঙ না থাকলে স্বপ্নে দেখেনা যে, সে আবার স্বপ্নের, অনুভবের রেলা নায় ।
আমাকে দেখ, দ্যাখ শালা আমার দিকে তাকিয়ে । আমি স্বপ্নে পরীকে দেখেছি, শালা আমার বিছানায় । আমি পেরেছিরে,
স্বপ্নে পেরেছি রে শুয়ার । ঘুমের থেকে উঠে তোদের মতন পা-জামা কাচতে দিতে হয়না রে আমায়, তবু আমি স্বপ্নে
পেরেছি রে শালা ।
মন্টুর ঝুলে পরা হতভম্ব মুখের দিকে তাকিয়ে একরকম আত্মপ্রাসাদে মনটা ভরে উঠল । বোঝো এখন, ভাব শালা,
ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ কর । আমার মতন ইয়েরা স্বপ্নে করতে পারে কিনা জেনে নে । আমি তো শালা বলেই খালাস ।
পিছন ফিরে না তাকিয়ে হন হনিয়ে বাস স্টপের দিকে চললাম । বাঁশদ্রোনীর মহুয়া সিনেমা হলের পিছনের গলিতে বাড়ি,
সেখানেই রোগী দেখেন ।যাই একবার লাক ট্রাই করে আসি ।
........................
......মন্টু......
যাচ্চলে । কিসের থেকে কি ! এত রাগের কি আছে রে বাবা । মনটা খারাপ হয়ে গেল । আমার ছোট বেলাকার বন্ধু,
কিছু আর জানতে আমার বাকি নেই ওর বিষয়ে । করুনা হল আমার, রাগ এল না। আমি জানি তো শান্তনুর ব্যাথাটা
কোথায় । বেচারা , স্কুলের শেষের দিকে যখন আমাদের সকলের ঠোঁটের উপর হাল্কা গোঁফের রেখা উঠছে, শরীরের
বিশেষ স্থানে বিশেষ আবেদন, গলার স্বর ভাঙ্গা ভাঙ্গা, শান্তনু কেমন যেন অন্য রকম । মেয়েদের শরীর নিয়ে আলোচনায়
যোগ দেয় না, মনমরা মতন হয়ে ঘুরে বেড়ায় ।
একদিন আমি চেপে ধরলাম – কি হয়েছে রে শান্তনু , এমন আলাদা আলাদা হয়ে ঘুরিস কেন ? বাড়িতে কোন ঝামেলা
হল নাকি আবার । শান্তনুর বাড়িতে নানা অশান্তি । ওরা চার ভাই-বোন । ওদের বাবা ফুটবল প্লেয়ার ছিলেন, কালীঘাট
ক্লাবে খেলতেন । একটা প্র্যাকটিস ম্যাচে বুক দিয়ে বল আটকাতে গিয়ে গুরুতর আহত হন । অনেকদিন বিছানায় শোয়া
ছিলেন, কোনরকম রোজগার নেই, সংসার চলেনা । সেই সময় বাবার বন্ধু শান্তনুর পল্লবকাকা এসে ওদের সংসারের হাল
ধরলেন । ওদের বাড়িতেই থাকতেন, ওদের মা-কে বৌদি বলে ডাকেন । ভাই-বোনেদের মধ্যে শান্তনু সবথেকে বড়, তাই
ওর অনেক কিছুই চোখে পড়ে যা বাকিরা বোঝেই না ।শান্তনু কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারল, ওদের মা আর পল্লব
কাকার মধ্যে একটা অন্য রকম সম্পর্ক আছে আর সেই নিয়ে বাবার সঙ্গে মার অনেক কথা কাটাকাটিও শুনতে হয়েছে
তাকে রাত্রিবেলায় । এখন আমার মনে হয় হয়ত মাসীমার কিছু করার ছিলনা । চারটে ছেলে মেয়ে, অসুস্থ স্বামী, সংসার
চলবে কি করে । হয় ঝিগিরি করতে হত নয় তো রাস্তায় নামতে হত, তার চেয়ে অনেক সহজ রাস্তা বেছে নিয়েছিলেন
মহিলা । কিন্তু এমন অপমানের জীবন মেসমশাই বেশীদিন সহ্য করতে না পেরে একদিন গলায় দরি দিলেন । কিছুদিন
পাড়ায় লোকেদের ফিস-ফাস, ছিছিকার, একদিন থেমে গেল, কিন্তু একটি সরল-সোজা কিশোর মনে একটা বিরাট ধাক্কা ।
সে সময় শান্তনু বহুদিন আমাদের বাড়িতে রাত কাটিয়েছে । স্কুল ফেরত আমাদের বাড়ি চলে আসত । ধীরে ধীরে এ-সব
দুর্বলতা কাটিয়ে উঠেছিল , কিন্তু কেমন যেন অন্তর্মুখী, তিক্ত আর অসহিষ্ণু ।
আচ্ছা মন্টু, একটা কথা জিগ্যাসা করব, কারুকে বলবি না তো ?
কি কথা রে?
কেনরে বেটা, কি কথা না বললে , প্রমিস করবি না ।
কি মুশকিল, এত চটে যাস কেন । এমনি জিজ্ঞাসা করলাম , না বলবনা কারুকে, কি হয়েছে বলনা ।
শোন, শুধু তোকে বলছি, আর কেউ জানেনা ,যদি কারুকে বলেছিস, তোকে কিন্তু গলা টিপে মেরে ফেলব বলে দিচ্ছি ।
এবার আমার ভয় এসে গেল । কেনরে তুই কি কোনো মার্ডার-টার্ডার ্প্ল্যান করেছিস নাকি ! না ভাই আমাকে বলতে
হবেনা, তুই আর কারুকে বল বরঞ্চ । আমি স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি ক্রিমিনাল নই ।আমার ওপর আমার মা, বোন
তাকিয়ে আছে, তুই আর কিছু বলিস না। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ । আমি একটু ভিতু প্রকৃতির মানুষ ।
শান্তনু কেমন অবাক হয়ে আমার দিয়ে তাকিয়ে রইল । তুই ভাবলি কি করে আমি কারুকে
মার্ডার করতে পারি । যাঃ শালা , ভাগ এখান থেকে , তুই আমার বন্ধু হবার যোগ্যই নস। ভিতুর ডিম কোথাকার,
স্বপ্ন দেখেই জীবন কাটিয়ে দে, জীবনের কঠিন সমস্যার কথা তোকে কি বলব, আমি ই পাগল যে তোর কাছে সাহায্য
চাইতে এসেছিলাম ।
এবার আমি শান্তনুকে জরিয়ে ধরলাম, আমার ভুল হয়ে গেছে রে আমাকে ক্ষমা করে দে ।বল না । তুই তো জানিস
তোর কোন কথা আমি কারুকে কোন দিন ও বলিনি । বল জানিস না?
শান্তনু কেমন ভাবালু মুখে তাকিয়ে ছিল । এবার চোখ মাটির দিকে নামিয়ে নিচু স্বরে জিগ্যাসা করল – তোর পুরুষাঙ্গ
কি শক্ত হয় ? প্রথমটা আমি ঠিক বুঝিনি –কিছুক্ষন ওর দিয়ে তাকিয়ে থেকেও যখন দেখলাম শান্তনু মাটির থেকে চোখ
তোলেনা , হঠাত কথাটার অর্থ আমাকে যেন চাবুক মারল ? কেন রে, তোর বুঝি...মানে তুই কি...আমি কি বলব
বুঝতে পারলাম না ।
হ্যাঁ আমার মনে হচ্ছে আমি কোনদিন পারবনা ।
আমি হতভম্ব ভাবটা কাটিয়ে বললাম –না না তা কেন ভাবছিস ! হয়ত তোর এখনো সময় হয়নি, মানে অনেকের তো
পরেও হয় । তুই ডাক্তার দেখা না ।
কোন কথা না বলে শান্তনু ফিরে গেল । ওর যাবার পথের দিকে তাকিয়ে থেকে আমার ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস
বেড়িয়ে এল – বেচারা ।
এ বয়সে এসে আমার মাঝে মাঝে মনে হয় শান্তনুর গন্ডোগোলটা হয়ত শারীরিক নয়, মানসিক । ছোটবেলা থেকে যে
এত কিছু দেখেছে, এমন কি এক রাত্রে নাকি পল্লবকাকা আর মাসীমাকে একসঙ্গে এক বিছানাতেও দেখেছিল, সেই রাত্রির
পরে পনেরদিন বাড়ি ফেরেনি রাত্রি বেলায় । আমার মা বাবা খুব স্নেহ করতেন, কিচ্ছুটি জিজ্ঞাসাও করেন নি, বাড়ি
ফিরতেও বলেন নি । একদিন নিজে থেকেই বাড়ি ফিরেছিল । আমার খুব সন্দেহ হয়, অনেকবার ভেবেছি ওকে মানসিক
ডাক্তার দেখাতে বলব, কিন্তু যা রাগী, বলতে সাহস হয় নি ।
হ্যাঁ ‘বেচারা’ আমি এখনো ওর অপ্সৃয়মান শরীরের দিকে তাকিয়ে এই কথাই ভাবছিলাম ।
...পরী...
শান্তনুদা কেমন ভাল মানুষের মতন থাকে । দেখে মনে হয় ভাজা মাছটা উলটে খেতে জানেনা । কিন্তু আমি জানি,
সবকটা ছেলের মধ্যে সব চেয়ে চালু ছেলে । ভাইকে পড়াতে আসে যখন কতবার যাই ঘরে, চা নিয়ে, জলখাবার নিয়ে,
মাঝে মাঝে আমার নিজের অঙ্কটা দেখাবার ছল করে, মুখের দিকে তাকিয়েও দেখেনা ।লাজুক লাজুক মুখে টাবিলের দিকে
তাকিয়ে কথা বলে । কেন বাবা আমি কি বাঘ না ভাল্লুক । নাকি আমাকে দেখতে খারাপ । রাগে গা আমার জ্বলে যায় ।
দেখ বাবা বিস্বামিত্র, তোমার ধ্যান আমি ভাঙ্গাবই । এ আমার প্রতিজ্ঞা । ঈশশ...আমাকে উপেক্ষা !
ছটকুর পানের দোকানের সামনে আড্ডা মারা হচ্ছে । কি করে যে ওর মতন এমন শিক্ষিত ,মার্জিত ছেলে বিমানের মতন
একটা গুন্ডার সঙ্গে আড্ডা মারে কে জানে ! বিমান তো আমাকে বিরক্ত করে মারল । বদমাশ কোথাকার । ওর সঙ্গে
ফস্টি-নস্টি করা যায়, শারীরিক হয়য়া যায়, কিন্তু প্রেম- ম্যা গো । বাবার টাকা আছে , মনে করেছে সবাই কে টাকা
দিয়ে কিনে নেবে । মন্টুদাকে ধরতে হবে, ওর সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব । মন্টুদারও যেন কেমন কেমন ভাব ।ছোটবেলা থেকে
দাদা বলে ডাকি, দাদার মতনই ভাবি ,ওর বোন লাবনী ,যদিও আমার থেকে দু-বছরের বড়, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ।
ওর কাছেই শান্তনুদার সম্পর্কে অনেক কথা জানতে পারি । ওর জন্য আমার ভারি কষ্ট হয় । কেমন দুঃখের জীবন ।
আমার ভীষণ ইচ্ছে করে ওকে জড়িয়ে ধরে আদর করি, ভালবাসি , ওর সব দুঃখ, সব কষ্ট ভাগ করে নিই । আমার শান্তনু ।
একদিন ওকে আমার করে ছারবই । আমার জেদ তো জানেনা ।
ঐ তো শান্তনু আসছে এদিকে, ডাকব নাকি । ও শান্তনুদা কোথায় যাচ্ছ ? একবার তাকাও,
এখানে তো আর আমাকে অস্বীকার করতে পারবেনা বাবু, মনে মনে বলি ।
ওর থতমত ভাব দেখে আমার ভীষন মজা লাগছে ।
এই তো একটা ইন্টারভিউ আছে ?
কটার সময় ?
আড়াইটে ।
বাবা , সে তো অনেক সময় বাকী । চলনা চা খাবে ? এসনা প্লীজ । তোমার ইন্টারভিউ কোথায় গো ?
ক্যামাক স্ট্রীট
তাই নাকি ? চলনা আমরা জীবনকাকুর দোকানে চা-তেলে ভাজা খেয়ে নিই । আমি সেই সকালে বেড়িয়েছি, জান !
ভীষণ ক্ষিদে পেয়ে গেছে । এস এস । শান্তনুর হাতটা ধরে এগিয়ে গেলাম । বাপরে বাপ কি ঠান্ড হাত । এই বয়সী
ছেলের এমন ঠান্ড হাত হয় নাকি ?
আমাদের দেখে জীবনকাকু একটু অবাক হয়ে গেল দেখছি । কিরে তোরা দুজনে ? কি চাই ।
জীবন কাকু ভীষন ক্ষিদে পেয়ে গেছে । শান্তনুদাকে আমি ধরে এনেছি , ভাই কে পড়াতে গেছিল , একটু মিথ্যে কথা
বলতে হল , আড় চোখে দেখলাম শান্তনুকে, মুখটা কি একটু লাল ? বাড়িতে মা ছিলনা, চাপাতা শেষ । ভাবলাম তোমার
দোকানে চা খেয়ে যাই । এক প্লেট তেলেভাজা ও দিও ।
আমি এক তরফা অনেক কথা বলে গেলাম । তিনি নিরুত্তর । বিরক্তির একশেষ । চা তেলেভাজা শেষ, এবার কি করা ।
রাস্তায় নেমে একটু চাপা হেসে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম , কি হোল কি, এত চুপ চাপ । আমি কি এতই খারাপ
যে একটা কথাও বলতে ইচ্ছে করেনা । এবার দেখলাম পাথর গলেছে ।
নানা , তা কেন । কোনদিন তো এরকম কাছে আসনি , তাই অবাক হয়েগেছিলাম । তার উপর তুমি আবার বিমানের
ইয়ে ।বিমান রেগে গেলে আবার খুব মুশকিল কিনা ।
আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল । কে বলেছে আমি বিমানের ইয়ে । কে বলেছে বল শীগগিরি । আরে আরে এত রাগ
করছ কেন । ছটকুর দোকানে শুনলাম কিনা, তাই বললাম । না হলে তো ভাল ।
কেন ভাল কেন ? আমার হাসি পেয়ে গেল ।
না মানে, গুন্ডা মতন তো, তাই বলছি আর কি । আমতা আমতা করছে দেখে আমার কষ্ট হল বেশ । ঠিক আছে ।
এবার থেকে কেউ এরকম বললে বলে দিও , একদম বাজে কথা । কি বলবে তো ?
শান্তুনু নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল – ঠিক আছে ।
তোমার ইন্টারভিউ তো এখনো অনেক দেরী আছে, আমাদের বাড়ি চলনা , একটা অঙ্ক এমন আটকে গেছে কিছুতেই
পারছি না । শান্তনুর কোন আপত্তি না শুনে জোর করে নিয়ে এলাম বাড়ি । আমাদের পড়ার ঘরটা চিলেকোঠায় ।
সোজা উপরে নিয়ে গেলাম । উপরে উঠবার সময় দেখলাম মা রান্না ঘরে ব্যাস্ত । বাবা তো অফিসে । ছোট ভাই স্কুলে ।
ঘরে ডুকে আমি শান্তনুকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম । ভয়ানক চমকে নিজে ছাড়িয়ে আমার দিকে ফিরে তাকাল ।
কি করছ ? কি আবার, একটা মেয়ে আর একটা ছেলে যা করে তাই । বলেই আমি শান্তনুর মুখটা টেনে নামিয়ে
আনলাম, মুখটা উঁচু করে একটা গভীর চুমু দিলাম ওকে , আমার হাতটা ধীরে ধীরে ওর জামার বোতাম গুলো
খুলে দিছিল । লক্ষ করলাম ওর শরীর ক্রমশ নরম হয়ে আসছে, একেবারেই বিমানের মতন নয় । এরকম অবস্থায়
বিমানের নিম্নাঙ্গ শক্ত হয়ে আমার শরীরে আঘাত করতে থাকে । বিমানের হাত অস্থির হয়ে ওঠে আমার সারা শরীর জুরে ।
কিন্তু একি, শান্তনু কেমন নিস্তেজ, নির্বাক দাঁড়িয়ে । আমি ওকে ছেড়ে দিয়ে এক পা পিছিয়ে গেলাম । শান্তনুর মুখটা
ফেকাশে, নীলচে হয়ে গেছে । আমার চোখের দিকে তাকাতে পারছে না। মাটির দিকে মুখ নামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
কি হয়েছে শান্তনু ! অন্য কারুকে ভালবাস?
মাথা নাড়ল – না, আমি , আমি পারিনা ।
আমার সর্বাং ঘৃণায় রি রি করে উঠলা । মুখে বললাম- ছিঃ । চলে যাও এখান থেকে, চলে যাও, দাঁতে দাঁত চেপে
উচ্চারন করলাম ।
কিছু না বলে মাথা নিচু করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেল । আমার বুকের ভিতর থেকে একটা গভীর দীর্ঘনিঃশ্বাস বেড়িয়ে এল ।
মনে মনে বললাম - বেচারা ।।
রচনাকাল : ২২/১১/২০১৫
© কিশলয় এবং সান্ত্বনা চ্যাটার্জী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।