(একটি ধারাবাহিক উপন্যাস)
পরিচ্ছেদ ০১
তিন নম্বর বেড
আজ রাতে অনেক রাত পর্যন্ত জাগলাম। কারন আগামীকাল সকালে প্রথম ক্লাসটা মিস করে টানা বারোটা
পর্যন্ত ঘুমাব সবাই। তারপর ল্যাব করতে যাবো। মেসে থাকলে ঘড়ি না দেখে হঠাৎ টাইম কত হল ধারনাই
থাকেনা। শুধু টাইম নয় মাঝে মাঝে এখন আকাশে সূর্য না চাঁদ তা জানার জন্য জানালার দিকে তাকাতে
হয়। আগামীকাল সকালে যেই দরজা ঠুকুক, সে জল দিতে আসা বিরেনকাকু কিংবা পাশের মেসের দাদা
ফোনের চার্জার চাইতে আসুক দরজা যে আমরা খুলবনা , টানা ঘুমাব সেই সিদ্ধান্ত নিলাম। তারপর
রাত তিনটে পর্যন্ত আড্ডা , তাস খেলা সেরে সাড়ে তিনটে তে চোখ বোজালাম ।
বাইরে ঝলমলিয়ে বৃষ্টির আওয়াজ পাচ্ছি, দরজায় কে যেন ধাক্কা দিচ্ছে। এই ত সবে শুলাম, ধুর কে
বলতো ? রাহুলকে জিজ্ঞেস করলাম । জবাব এলো আমি বড় বড় মিষ্টি খাবো । অবাক হতে গিয়েও হলাম
না। কারন মনে পড়ল ঘুমোতে ঘুমোতে ভুল বকা নামক রোগটা রাহুলের আছে। যতই সংকল্প করি, দরজা
ঠোকার বাহার দেখে মনে হল, না খুললে দরজা ভেঙে যেতে পারে। উঠে ছিটকিনি তা খোলার আগে ঘড়ির দিকে
তাকাতে, দেখি আটটা বাজে ! ঘুমের ঘোরে দরজা খুলে ভাবলাম বিরেনকাকু। তাই রোজকার মতো দরজা খুলে
জলের ড্রাম টা নিতে হাত বাড়াতেই হাতে একটা ভারী ব্যাগ ধরিয়ে দিল একটা অচেনা ছেলে । হ্যালো !
আমি জবাবে হ্যালো! কিন্তু কে , মানে ..., ঘুম ঘোরে এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারলাম না ।
উত্তরে একটা শক্তিশালী হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল আমি হিমাদ্রি খান-এইরকম
কনফিউসিং নামের সাথে এই রকম শক্ত হাতের করমর্দন এ আমার ঘুমটা প্রায় ভেঙে গেলো।
সে ঘরে ঢোকার এক মিনিটের মধ্যে কাকিমা, আমাদের মেস মালকিন ঘরে ঢুকলেন ।
আচ্ছা রাহুল কি সারাদিন ঘুমায় ? আমার দিকে তাকিয়ে কাকিমা বললেন ,
আমি বললাম সারাদিন ঘুমায় আর সারারাত জাগে
পেঁচা নাকি ? কাকিমার কথায় অল্প করে কাউন্টারে সবাই হাসলাম ।
ও তোমাদের নতুন রুম-পার্টনার । তিন নম্বর বেড এ একটা বাক্স দেখছি, ওটা কার ? কাকিমার কথায়
আমি বললাম , ওটা আমার আমি এক্ষুনি সরিয়ে দিচ্ছি ।
হাঁ নামিয়ে দাও , আর ওকে বাথরুম আর ছাদ টা একটু দেখিয়ে দিও । আর এখানকার নিয়ম গুলি একটু
বলে দিয় । হিমাদ্রি আমি তাহলে যাচ্ছি । কোনোরকম অসুবিধে হলে আমায় জানিও ।এতদিন মেসে
আছি কত সহস্র অসুবিধে হল আর তার একটিও কাকিমাকে শোনানো হলনা ভেবে নিজে নিজেয়ি একটু
হাসলাম । এতদিন এখানে আছি কাকিমা কাউকে নিজে থেকে অসুবিধা হলে জানিয়ো এমন কথা
বলেছেন বলে মনে পড়ছেনা, ব্যাপার কি ঠিক বুঝতে পারলাম না বলেই নিজে নিজে ভেবে নিলাম, এই
মালটা কাকুর কোনো দূর সম্পর্কের শালা টালা কেউ হবে নিশ্চয়ই ।
নিজের বাক্সটা একটা জায়গায় সরিয়ে রেখে জিজ্ঞেস করলাম , হিমাদ্রি তুমি কোথায় থাকো ? কোথায়
পড় ? উত্তর এলো এখানে আমার মামার বাড়ি যাদবপুরে ,এখানে থেকেই পড়াশোনা করি, যাদবপুরে
কেমিস্ট্রি অনার্স, আমার জন্মস্থান বীরভূম আর আমাকে তুই বলে কথা বললে বেশি খুশি হবো।
ওকে, তুই ও আমাকে তুই ই বলিস, তুই ফ্রেস হয়ে নে আরও গল্প হবে, বাথরুম টা ওইদিকে। আমি
একথা বলেই ছাদে গেলাম, অসময়ে ঘুমিয়ে আর তার থেকে বড় কথা অসময়ে ঘুম থেকে উঠে আমার মাথাটা
কেমন ধরছিল । পাশের বিল্ডিং তার সেই মেয়েটি বোধহয় আজ স্কুল যাবেনা । এখন ও পড়ার টেবিলে বসে
আছে । ওকে দেখে মাথা ব্যাথাটা সেরে গেলো, মনটা কেমন ভাল হয়ে গেলো ।
নিচে নেমে এসে দেখি সবাই কি একটা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে সবাই বেশ গম্ভির ভাবে আলোচনা করছে ।
রাহুল আমাকে দেখেই বলে উঠল বাপি ওর মোবাইল টা খুঁজে পাচ্ছে না । আমি আরও
একবার অবাক হয়ে গেলাম ।
পরিচ্ছেদ ০২
ধন্দ বাড়ল
এই চুরি টা আজ প্রথম না । এর আগে গত চার মাসে মোট পাঁচ টা মোবাইল আর
গত মাসে একটা ল্যাপটপ হারিয়েছে এই মেসের সদস্যরা , অনেক সতর্কতা নিয়ে
চলছিল সবাই । তার উপর বাপির মোবাইল চুরি হওয়াটা খুব একটা সহজ ভাবে
কেউই নিচ্ছে না। ছেলেটার কাছে মোবাইল টা তার সবচেয়ে প্রিয় ছিল, কেমন যেন
আগলে আগলে রাখত। সেদিন-ই আমায় বলেছিল, এটা ওর মা সেলাই করে যা
টাকা পেয়েছিল তাই জমিয়ে কিনে দিয়েছে। আজ তাই আমার কথাটা মনে পড়তে
ভীষণ রাগ হল । ভাবলাম এই চোরটা শুধু ধরা পড়ুক, এমন কেলান কেলাবো
না। এর মাঝে একটা জিনিস অদ্ভুত ভাবে লক্ষ্য করলাম , এই চুরি
যাওয়ার ঘটনাটা সবাই যখন আলোচনা করছে হিমাদ্রি একেবারে ভীষণ ভীষণ
মনোযোগ দিয়ে শুনছে ।
রাহুলের যেদিন সন্ধে বেলায় বাজার করার দিন আসবে সেদিন ওর অজুহাতের জুত
দেখলে মনে হয় বন্ধুত্ব তন্ধুত্ব ভুলে সবাইকে উৎসাহ দিয়ে গণপিটুনি দিই মালটাকে
। আজ বলে কিনা ওর গারলফ্রেন্ড ওকে দিব্যি দিয়েছে, সারা সন্ধ্যে বেলায় ওর সাথে
ফোনে কথা বলতে হবে। আমি এই অজুহাতে হাসবো না রাগ দেখাবো ভেবে না
পেয়ে বেরিয়ে পড়লাম । আজ দুজনের ব্যাগ একা আমায় বয়ে আনতে হবে ভেবে
মনে মনে যতগুলি খিস্তি জানি একবার রিভাইস দিয়ে নিলাম । বাজার করিসনা
ঠিক আছে অন্তত স্নান তো কর । এইতো গত সপ্তাহে প্রায় পনেরো দিন পরে চান
করল । রোজ গায়ে একগাদা বডিস্প্রে মেরে এখানে সেখানে বেরোচ্ছে । আবার
বলে, আমার মতো সময়ের দাম দিতে পারা ছেলের জন্য বডিস্প্রেডিজাইন করা
হয়েছে। সিঁড়ি থেকে নামছি দেখি হিমাদ্রি উঠে আসছে, আমাকে দেখেই জিজ্ঞেস
করল কোথায় যাচ্ছিস ? আমি বললাম বাজারে । ও বলল চল আমিও যাবো।
আজ ফ্রি আছি আর তুইও তোহ একাই যাবি। বরং দুজনে যাই ।
চল তাহলে ।
এবার হিমাদ্রি বলে উঠলো, তোকে কতগুলি প্রশ্ন করবো একদম পারফেক্ট উত্তর
দিবি । আমি ভাবলাম কি প্রশ্ন আবার ? মুখে বললাম হ্যাঁ কর ।
আমাদের ফ্লোরে মোট পনেরো থাকে রাইট ?
আমি বললাম হ্যাঁ।
আচ্ছা একটা ছেলেকে দেখি রোজ একটা মাদুর নিয়ে ছাদে যাচ্ছে ও ঠিক কে ?
ও তো নীচের মুদির দোকানে কাজ করে আর রাতে হাওয়া খেতে ছাদে যায় ।
ও মুদির দোকানের পাশে গুদাম টায় থাকে ।
এসব প্রশ্ন কেন ?
একটা কারন তো আছে, বুঝে নে ।
আমি প্রশ্ন করলাম, আচ্ছা তুই খুব গোয়েন্দা গল্প পরিস না ?
উঁহু শুধু পড়িনা গল্প বানাই ও। বলেই একটা অহংকার মেশানো মৃদু হাসি হাসল
আর তার পর বলল, পাশের বাড়ির দোতলার জানালায় পড়তে বসে অই
মেয়েটির নাম জানিস ?
খুব কষ্ট করে রাগ দমন করে করে উত্তর দিলাম, কোণ বাড়ি কোন মেয়েটি
বল তোহ ? ও বলল,
আরেননা ! তাহলে একজন প্রতিদন্দি কমল, বলে অদ্ভুত একটা ঝাঁট জালানো
হাসি হাসল । হঠাৎ মন টা কেমন খারাপ হয়ে গেলো ।
ওই দিন বাজার করার সময় , একটা অদ্ভুত জিনিস দেখা গেলো, মুদির দোকানের
মালিক এর সাথে কথা বলতে বলতে রাতে ছাদে ওঠা ছেলেটির সম্পর্কে অনেক
কিছুই কোনো এক ছলে বলে জেনে নিল ।
আসার সময় অঞ্জনার বাড়ির সামনে এসে হঠাৎ থমকে দাড়িয়ে , আমার দিকে
তাকাল আর আবার সেই হাসি ।
অন্যদিন ভারী ব্যাগ নিয়ে আমি সিঁড়িতে অনায়াসে উঠে পড়ি, কিন্তু জানিনা কেন
আজ একটা ব্যাগ নিয়ে উঠতে পাঁচ গুন বেশি কষ্ট হল। বাজারের ব্যাগ রেখে
হিমাদ্রি বাপিদের রুম এ ঢুকল, আমিও সঙ্গে গেলাম।
চুরির খবরটা কনফার্ম হবার পর থেকে বাপি শুনলাম একটাও কথা বলেনি এখনও।
হিমাদ্রি বাপিদের ঘরে ঢুকেই বলে উঠল, কৌশিক তোর ফোনটা একটু দেখতে
পারি? বলেই কৌশিকের উত্তরের অপেক্ষা না করেই টেবিলে রাখা ওর ফোন টা
নিয়ে দেখলাম কল লিস্টএ ঘাটাঘাটি করছিল ।
কৌশিক বলল, বেশি চার্জ নেই, দে চার্জ এ বসাই, আর এসব গয়েন্দাগিরি করে
কি হবে, নতুন এসেছিস একটু রেস্ট নে, যা।
দেখলাম হিমাদ্রি মুচকি হেসে ফোন টা ফেরত দিল , আর তারপর বাপিকে বলল,
দুপুরে একটা জিনিস জানা হয়নি, কাল রাতে এই ফ্লোরে আর কি এমন কাউকে
দেখা গেছে যে এই ফ্লোরে থাকেনা ?
আমি বুঝলাম আজ দুপুরে হিমাদ্রি এখানে এসেছিল, বাপির সঙ্গে সে কথা ও
বলেছে, আমি হঠাৎ বলে উঠলাম, কিন্নর দা ! কাল রাতে মেস মালিক কাকিমার
আদরের ছোট ছেলে ভাড়ার টাকা নিতে এসেছিলো। ঠিক কটা নাগাদ হবে ?
এই ধর এগারো !
বাপি আর কৌশিক দুজন কেই হাসিমুখে বিদায় দিয়ে হিমাদ্রি যখন রুম ছেড়ে বের
হচ্ছিল তখনও আমি বাপিকে একটি কথা বলতে দেখলাম না । তবে কৌশিক এর
মুখ টা গোমড়া মত কেন দেখাচ্ছে ঠিক বুঝে উঠলাম না। তাহলে কি ... ?
এই হিমাদ্রির সঙ্গে একদিন কিছু মুহূর্ত কাটিয়ে নিজের একটা পরিবর্তন খেয়াল
করলাম, এতদিন যা কিছু ছোট ব্যাপার ছিল আজ সেগুলোই বড় এবং প্রয়োজনীয়
বলে মনে হচ্ছে ?
ঘর থেকে বেরোনোর সময় আমি হিমাদ্রি কে প্রশ্ন করলাম, বাপি কি বলেছিল?
হিমাদ্রি কিছু বলতে যাবে এমন সময়েই মুদির দোকানের ছেলেটা একটা মাদুর
নিয়ে সিঁড়ি থেকে উঠে একটা বাঁক ঘুরেই আমাদের মুখোমুখি হল । হিমাদ্রি ওকে
প্রশ্ন করল তোর নাম কি?
পরিচ্ছেদ ০৩
সচেতন
অ্যায়-ই-য়্য-হ্যাঁ , আমার নাম পটা,
হিমাদ্রি একটু খোলা গলায় জিজ্ঞেস করল , এখানে কোথায় চাবির ডুপ্লিকেট বানায় জানিস ?
প্রশ্ন টা শুনতেই ছেলেটার আচরন এর মধ্যে অদ্ভুত একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম মনে হল ।
কেমন একটা ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে বলল হ্যাঁ ওই যে মার্কেট আছে , রাগিনি সিনেমার উল্টো দিকে,
ওখানে । হিমাদ্রি মুচকি হেসে বলল , আচ্ছা তুই যা ।
ও চলে যাওয়ার পর,
আমি একটু অস্বস্তিতেই বলে উঠলাম , একদম পাগলের মত আচরণ করে বেরাচ্ছিস । কি হচ্ছে এসব ?
তুই যেটুকু বুঝবি ওই টুকুই তোর ক্ষমতা , বেশি বুঝতে যাসনা সময় হলে ঠিক জানতে পারবি ।
হিমাদ্রি বলল। আমার বয়ে গেলো । বলে আমি একটু রাগ নিয়ে দ্রুত নিজের ঘরে এসে কম্পিউটার
এ বসলাম। হিমাদ্রি আবার বাইরে কোথায় চলে গেল । রাহুলের কাকু যেদিন তার প্রফ্রেসানাল ক্যামেরা
টা নিয়ে রাহুলের সাথে দেখা করতে এসেছিলো আমি সেদিন কতগুলো ছবি তুলেছিলাম ওই ক্যামেরাটায়।
তার মধ্যে একটা ছবি অঞ্জনার ও ছিল । আমাদের ছাদ থেকে একেবারে ৭০মিমি লেন্স দিয়ে ওর পড়ার
টেবিলে জুম করে। ছবিটা আমার কম্পিউটার এর হিড্ডেন ফোল্ডারে রাখা থাকে, ছবিটা খুলতেই মনটা
ঝকঝকে হয়ে গেলো । হাল্কা গোলাপি রঙের ড্রেস টা বেশ মানায় ওকে । রাহুল ঘুমাচ্ছে , প্রায় ৫মি
ছবিটার দিকে তাকিয়েও মন ভোরলোনা ।
তিন দিন পর...
কোথা থেকে ফিরে এসে হিমাদ্রি বলে উঠল, একটা দারুন সমাধান পেয়েছি। আমি কিছুই বললাম না,
বিষয়টার প্রতি আমার যে কিউরিওসিটি রয়েছে এটা ভুলেও প্রকাশ যেন না হয় । এই তিন দিনে আমরা
একটি ও কথা বলিনি। হিমাদ্রি নিজে ও বলার চেষ্টা করেনি, যদিও আমি খুব ভাল করে জানি এটা ও
ইচ্ছে করে করছে। মাঝে মাঝে মুচকি হাসতে ও দেখেছি কয়েকবার । কিন্তু আজ ওকে খুব গম্ভীর দেখাল,
নিজে থেকেই বলল, মালকিন এর সাথে কথা বললাম, তারপর গলার স্বর টা বদলিয়ে, বলে উঠল চাবিই
একটা বিষয় এই রহস্যে । আমি ওমনি চাবি মানে ? উদ্বেগের সঙ্গে বলতেই বুঝে গেলাম, নিজের
সচেতনতার জায়গা ছাড়িয়ে আমার উত্তেজনা দেখিয়ে ফেলেছি । হিমাদ্রি এতে কিছু বুঝলনা তোহ ? বা ও
সবটাই জেনে গেছে তাইএরকম কথা বলে উঠল না তো ? কিংবা সন্দেহ টা সত্যি কিনা ঝালিয়ে নেওয়ার
জন্য ও এই কথার টোপ ফেলল না তোহ ? আর যদি তাই হয়ে থাকে আমি এই টোপ নিজের অজান্তেয়ি
গিলে ফেললাম তাহলে । ছেলেটা যে ভীষণ চালাক , এটা বুঝতে বেশি সময় লাগেনি আমার । ও বলে
উঠল, বলতে চাইলেও এখন কিছু বলবনা । যেহেতু আমি চুরির দিন রাতে ছিলাম না তাই একটু
সময় লাগবে সেই সময়ের আবহাওয়া বুঝতে........., বলেই হিমাদ্রি একটু অন্য মনস্ক হয়ে গেলো ।
এর আগে ওর সন্দেহের চোখ আমার দিকে যে একেবারেই ছিলোনা এটা বললে নিজেকে মিথ্যে বলা
হবে । কিন্তু চাবি বলতেই বুকের মধ্যে ছ্যাত করে উঠল । রাহুল একই রকম ভাবুক কিন্তু বাস্তব
সচেতন একটা মুখ করে ওর বেড এ চলে গেলো । নিজের ডায়েরি তেয় কিছু কথা লিখে ঘুমিয়ে পড়ল ,
কিন্তু আমি তখন ও ঘুমায়নি, আসলে একটা কথা ভাবছিলাম, যে তথ্য গুলো জানি একসঙ্গে করলে সবটাই
কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে, তার পর কৌশিক এর ফোনে কল এর ব্যাপার টা নিয়ে আমি একটু বেশি সঙ্কোচ
বোধ করছি । চুরির রাত্রিতে কালুদার নাম্বারের থেকে কৌশিকের ফোনে কল কেন এসেছিলো । আর তার
থেকে বড় কথা কালুদা যে এই মহল্লার সবচেয়ে বড় দাদা সেটা হিমাদ্রি জানল কি করে ? এসব ই
ভাবছিলাম, হঠাৎ হিমাদ্রি বলে উঠল , ভাই তুই এমন কেন করলি ?
পরিচ্ছেদ ০৪
আকস্মিক তথ্য
কাল রাতের পর আমি একটু গুটিয়ে গেছিলাম বলতে হয়, কিন্তু সকালে
ঘুম থেকে ওঠার পর হিমাদ্রির মধ্যে গতবেলার কোনও প্রভাব দেখতে না পেয়ে
বেশ স্বস্তি হল। না হয় বাপু চাবি চুরি করে ওর বাক্স খুলে গোপন ডায়েরিটা
একটু পড়েই নিয়েছি। তার ফলস্বরূপ যেমন দোষারোপ করল, যেন মনে হল
আমিই চুরি করেছি মোবাইল ল্যাপটপ ইত্যাদি ।
সকালে দাঁত মেজে একটু আলস্য লাগছিলো । অঞ্জনার কথা
ভাবছিলাম ল্যাদ খেতে খেতে । হিমাদ্রি বলল কালুকে দেখেছিস ? আমি বললাম
'হুম' । একবার দেখলে চিনতে পারবি ? হ্যাঁ হ্যাঁ জা বিদঘুটে চেহারা ! তার
উপর মুখে অতবড় ব্লেডের কাটার দাগ । কথাটা শেষ হতে না হতেই, হিমাদ্রির
মধ্যে চরম একটা উত্তেজনার আবির্ভাব হল। ব্লেডের দাগ কথাটা বলতেই দড়াম
করে টেবিলে চড় মেরে উঠে এদিক ওদিক করতে করতে জা বলল তার সারমর্ম
এই যে , ও কাল কাকিমা আর কালুকে একসাথে এস-বি-আই তে ঢুকতে দেখেছে।
হিমাদ্রি কে আবার ভাবুক হয়ে যেতে দেখে ওর চিন্তায় ব্যাঘাত না ঘটিয়ে ছাদে চলে
গেলাম ।
অঞ্জনা জানালার শিক ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আর আমি ওর দিকে তাকিয়ে
ভাবছিলাম কাকিমা কি তাহলে ? তাহলে কি ? সেটা ভেবে ওঠার আগেই অঞ্জনার চোখ
আমার চোখেতে ধাক্কা দিল । হটাত মনে হল কারন ছাড়া তাকানোর ভাললাগা আমার
মত অঞ্জনার মধ্যে ও পুঞ্জিভূত হচ্ছে । চোখাচুখি এর আগেও যে হয়নি তা নয় কিন্তু
এবারের টা বেশ কিছুক্ষণ স্থায়ী হল ।কারুর কোনও প্রশ্ন নেই কোন কথা নেই। শুধু
তাকানো । মনটা আর শরীরটা বেশ নিবিড় , তাই প্রথমটার প্রভাবে দ্বিতীয়টা ও ভালো
হয়ে গেল। নিচে রুমে এসে গুনগুন করছিলাম । হিমাদ্রির কথা-বার্তা শুনে মনে হল ও
কাউকে খুশি দেখতে পারেনা। নিশ্চয়ই পারেনা । বলল মেয়েদের মন ঝাউবন । বলেই মুচকি
হাসি । তারপর বলল ধর এই মনে হল তোকে ভালবেসে হাসছে, আসলে হয়তো ওর
চিরিয়াখানার বাদরের কথা মনে পরল তাই হাসছে ! আমি বললাম কেউ আমাকে দেখে
হাসেনি । ভাঁট বকিসনা । হিমাদ্রি বলল উঁহু হেসেছে । চোখ নামানর পর তুই যখন ওর
থেকে বেশি লজ্জা পেয়ে মাথা নামিয়ে নিয়েছিলি তখন ও তোর দিকে তাকিয়ে হেসেছিল।
কথাটা শুনে আমার এতই ভালো লাগল যে আমি মনের অন্তরদন্দ চেপে না রেখে বলেই
ফেললাম কৌশিক , কাকিমা , কালু , পটা এদের সমাধান ?
বারান্দা দিয়ে কৌশিক বোধহয় বাইরের দিকে যাচ্ছিল বা কোথাও থেকে আসছিল, কথাটা
বেশ চিৎকার করে বলে ফেলে এখন নিজেই আফসোস করছি ।ও ঘরে ঢুকে আমার দিকে
মুখ করে বলল অল্প বয়সে পাকলে চুল , জীবনভর সে করবে ভুল। তারপর বাকা
হাঁসি হেসে প্রায় থ্রেটের সুরে বলল, এসব করছ কর তবে খেয়াল রেখ বেফালতু কেলানি
না খেয়ে যেতে হয় । আর আমার নাম যে নিলি , কোনও প্রমান আছে যে আমি
বিন্দুমাত্র জড়িয়ে এতে ? হিমাদ্রির দিকে তাকিয়ে একটু সবর নামিয়ে আরও বলল আর
দেখ হিমাদ্রি এমনিতে পুলিশ মাস খানেক আগে থেকে নিয়মিত জেরা করে যাচ্ছে । হিমাদ্রি
বলল পুলিশ ? হ্যাঁ পুলিশ । ল্যাপটপ হারানোর পর ফোরটু ওর মিনিস্টার বাবা কে দিয়ে
একটা কড়া কমপ্লেইন করেছিল পুলিশে। তারপর থেকে এই ভুঁড়িওয়ালা আধা সি আই ডি
দেরকে সহ্য করে যেতে হচ্ছে। কমসেকম প্রতি সপ্তাহে একবার । সবাই বেশ হিমশিম খাচ্ছি,
আর আমার কিছু খোয়া যায়নি মানেই আমি চোর এতা কোনও কথাই নয় ! এর পর
আমার নাম নেবার আগে অবশ্যই দশবার ভাববে তোমরা ।
কৌশিক চলে যেতে আমি হিমাদ্রির দিকে তাকালাম । ও বেশ কুল-কাল হয়ে একদম মৃদু স্বরে
বলল , সেকেন্ড হ্যান্ড পুরনো ফোন লাগবে তোর ? বলেই ও বাপির হারিয়ে যাওয়া ফোনটা
বের করে আমার হাতে দিল । আমি প্রায় চমকে উঠে অবাক হয়ে জিগ্যেস করলাম কোথায়
পেলি ?
(পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায় !!)
রচনাকাল : ৬/৪/২০১২
© কিশলয় এবং সাগীরুদ্দিন মণ্ডল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।