(একটি ধারাবাহিক উপন্যাস)
পরিচ্ছেদ ০১ - তিন নম্বর বেড
আজ রাতে অনেক রাত পর্যন্ত জাগলাম। কারন আগামীকাল সকালে প্রথম ক্লাসটা মিস করে টানা বারোটা
পর্যন্ত ঘুমাব সবাই। তারপর ল্যাব করতে যাবো। মেসে থাকলে ঘড়ি না দেখে হঠাৎ টাইম কত হল ধারনাই
থাকেনা। শুধু টাইম নয় মাঝে মাঝে এখন আকাশে সূর্য না চাঁদ তা জানার জন্য জানালার দিকে তাকাতে
হয়। আগামীকাল সকালে যেই দরজা ঠুকুক, সে জল দিতে আসা বিরেনকাকু কিংবা পাশের মেসের দাদা
‘ফোনের চার্জার’ চাইতে আসুক দরজা যে আমরা খুলবনা , টানা ঘুমাব সেই সিদ্ধান্ত নিলাম। তারপর
রাত তিনটে পর্যন্ত আড্ডা , তাস খেলা সেরে সাড়ে তিনটে তে চোখ বোজালাম ।
বাইরে ঝলমলিয়ে বৃষ্টির আওয়াজ পাচ্ছি, দরজায় কে যেন ধাক্কা দিচ্ছে। ‘এই ত সবে শুলাম, ধুর কে
বলতো ?’ রাহুলকে জিজ্ঞেস করলাম । জবাব এলো ‘ আমি বড় বড় মিষ্টি খাবো ’। অবাক হতে গিয়েও হলাম
না। কারন মনে পড়ল ঘুমোতে ঘুমোতে ভুল বকা নামক রোগটা রাহুলের আছে। যতই সংকল্প করি, দরজা
ঠোকার বাহার দেখে মনে হল, না খুললে দরজা ভেঙে যেতে পারে। উঠে ছিটকিনি তা খোলার আগে ঘড়ির দিকে
তাকাতে, দেখি আটটা বাজে ! ঘুমের ঘোরে দরজা খুলে ভাবলাম বিরেনকাকু। তাই রোজকার মতো দরজা খুলে
জলের ড্রাম তা নিতে হাত বাড়াতেই হাতে একটা ভারী ব্যাগ ধরিয়ে দিল একটা অচেনা ছেলে । ‘হ্যালো !’ ।
আমি জবাবে ‘হ্যালো! কিন্তু কে , মানে ...’, ঘুম ঘোরে এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারলাম না ।
উত্তরে একটা শক্তিশালী হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল ‘আমি হিমাদ্রি খান’-এইরকম
কনফিউসিং নামের সাথে এই রকম শক্ত হাতের করমর্দন এ আমার ঘুমটা প্রায় ভেঙে গেলো।
সে ঘরে ঢোকার এক মিনিটের মধ্যে কাকিমা, আমাদের মেস মালকিন ঘরে ঢুকলেন ।
‘আচ্ছা রাহুল কি সারাদিন ঘুমায় ?’ আমার দিকে তাকিয়ে কাকিমা বললেন ,
আমি বললাম ‘সারাদিন ঘুমায় আর সারারাত জাগে’
‘পেঁচা নাকি ?’ কাকিমার কথায় অল্প করে কাউন্টারে সবাই হাসলাম ।
‘ও তোমাদের নতুন রুম-পার্টনার । তিন নম্বর বেড এ একটা বাক্স দেখছি, ওটা কার ?’ কাকিমার কথায়
আমি বললাম , ‘ওটা আমার আমি এক্ষুনি সরিয়ে দিচ্ছি’ ।
‘হাঁ নামিয়ে দাও , আর ওকে বাথরুম আর ছাদ টা একটু দেখিয়ে দিও । আর এখানকার নিয়ম গুলি একটু
বলে দিয় । হিমাদ্রি আমি তাহলে যাচ্ছি । কোনোরকম অসুবিধে হলে আমায় জানিও’ ।এতদিন মেসে
আছি কত সহস্র অসুবিধে হল আর তার একটিও কাকিমাকে শোনানো হলনা ভেবে নিজে নিজেয়ি একটু
হাসলাম । এতদিন এখানে আছি কাকিমা কাউকে নিজে থেকে ‘অসুবিধা হলে জানিয়ো’ এমন কথা
বলেছেন বলে মনে পড়ছেনা, ব্যাপার কি ঠিক বুঝতে পারলাম না বলেই নিজে নিজে ভেবে নিলাম, এই
মালটা কাকুর কোনো দূর সম্পর্কের শালা টালা কেউ হবে নিশ্চয়ই’ ।
নিজের বাক্সটা একটা জায়গায় সরিয়ে রেখে জিজ্ঞেস করলাম , ‘হিমাদ্রি তুমি কোথায় থাকো ? কোথায়
পড় ?’ উত্তর এলো ‘এখানে আমার মামার বাড়ি যাদবপুরে ,এখানে থেকেই পড়াশোনা করি, যাদবপুরে
কেমিস্ট্রি অনার্স, আমার জন্মস্থান বীরভূম আর আমাকে ‘তুই’ বলে কথা বললে বেশি খুশি হবো’।
‘ওকে, তুই ও আমাকে তুই ই বলিস, তুই ফ্রেস হয়ে নে আরও গল্প হবে, বাথরুম টা ওইদিকে ’। আমি
একথা বলেই ছাদে গেলাম, অসময়ে ঘুমিয়ে আর তার থেকে বড় কথা অসময়ে ঘুম থেকে উঠে আমার মাথাটা
কেমন ধরছিল । পাশের বিল্ডিং তার সেই মেয়েটি বোধহয় আজ স্কুল যাবেনা । এখন ও পড়ার টেবিলে বসে
আছে । ওকে দেখে মাথা ব্যাথাটা সেরে গেলো, মনটা কেমন ভাল হয়ে গেলো ।
নিচে নেমে এসে দেখি সবাই কি একটা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে সবাইকে বেশ গম্ভির ভাবে আলোচনা করছে ।
রাহুল আমাকে দেখেই বলে উঠল ‘বাপি ওর মোবাইল টা খুঁজে পাচ্ছে না’ । আমি আরও
একবার অবাক হয়ে গেলাম ।
(চলবে......)
রচনাকাল : ২৯/৮/২০১১
© কিশলয় এবং সাগীরুদ্দিন মণ্ডল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।