রোমাঞ্চ সন্ধানী [পরিচ্ছেদ ০২]
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখক : সাগীরুদ্দিন মণ্ডল
দেশ : India , শহর : Kolkata

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১১ , জুন
প্রকাশিত ২৭ টি লেখনী ৪২ টি দেশ ব্যাপী ৫৬৫৭৭ জন পড়েছেন।
পরিচ্ছেদ ০২

ধন্দ বাড়ল 


এই চুরি টা আজ প্রথম না । এর আগে গত চার মাসে মোট পাঁচ টা মোবাইল আর 
গত মাসে একটা ল্যাপটপ হারিয়েছে এই মেসের সদস্যরা , অনেক সতর্কতা নিয়ে 
চলছিল সবাই । তার উপর বাপির মোবাইল চুরি হওয়াটা খুব একটা সহজ ভাবে 
কেউই নিচ্ছে না। ছেলেটার কাছে মোবাইল টা তার সবচেয়ে প্রিয় ছিল, কেমন যেন 
আগলে আগলে রাখত। সেদিন-ই আমায় বলেছিল, এটা ওর মা সেলাই করে যা
 টাকা পেয়েছিল তাই জমিয়ে কিনে দিয়েছে। আজ তাই আমার কথাটা মনে পড়তে
 ভীষণ রাগ হল । ভাবলাম এই চোরটা শুধু ধরা পড়ুক, এমন কেলান কেলাবো 
না। এর মাঝে একটা জিনিস অদ্ভুত ভাবে লক্ষ্য করলাম , এই চুরি 
যাওয়ার ঘটনাটা সবাই যখন আলোচনা করছে হিমাদ্রি একেবারে ভীষণ ভীষণ
 মনোযোগ দিয়ে শুনছে ।

রাহুলের যেদিন সন্ধে বেলায় বাজার করার দিন আসবে সেদিন ওর অজুহাতের জুত 
দেখলে মনে হয় বন্ধুত্ব তন্ধুত্ব ভুলে সবাইকে উৎসাহ দিয়ে গণপিটুনি দিই মালটাকে 
। আজ বলে কিনা ওর গারলফ্রেন্ড ওকে দিব্যি দিয়েছে, সারা সন্ধ্যে বেলায় ওর সাথে 
ফোনে কথা বলতে হবে। আমি এই অজুহাতে হাসবো না রাগ দেখাবো ভেবে না 
পেয়ে বেরিয়ে পড়লাম । আজ দুজনের ব্যাগ একা আমায় বয়ে আনতে হবে ভেবে 
মনে মনে যতগুলি খিস্তি জানি একবার রিভাইস দিয়ে নিলাম । বাজার করিসনা 
ঠিক আছে অন্তত স্নান তো কর । এইতো গত সপ্তাহে প্রায় পনেরো দিন পরে চান 
করল । রোজ গায়ে একগাদা বডিস্প্রে মেরে এখানে সেখানে বেরোচ্ছে । আবার 
বলে, "আমার মতো সময়ের দাম দিতে পারা ছেলের জন্য বডিস্প্রেডিজাইন করা
 হয়েছে। " সিঁড়ি থেকে নামছি দেখি হিমাদ্রি উঠে আসছে, আমাকে দেখেই জিজ্ঞেস 
করল কোথায় যাচ্ছিস ? আমি বললাম বাজারে । ও বলল ‘চল আমিও যাবো’ ।
‘আজ ফ্রি আছি আর তুইও তোহ একাই যাবি। বরং দুজনে যাই’ । 
‘চল তাহলে’ ।
এবার হিমাদ্রি বলে উঠলো, তোকে কতগুলি প্রশ্ন করবো একদম পারফেক্ট উত্তর
দিবি । আমি ভাবলাম কি প্রশ্ন আবার ? মুখে বললাম হ্যাঁ কর ।
‘আমাদের ফ্লোরে মোট পনেরো থাকে রাইট’ ?
আমি বললাম হ্যাঁ।
আচ্ছা একটা ছেলেকে দেখি রোজ একটা মাদুর নিয়ে ছাদে যাচ্ছে ও ঠিক কে ?
ও তো নীচের মুদির দোকানে কাজ করে আর রাতে হাওয়া খেতে ছাদে যায় । 
ও মুদির দোকানের পাশে গুদাম টায় থাকে ।
এসব প্রশ্ন কেন ?
একটা কারন তো আছে, বুঝে নে ।
আমি প্রশ্ন করলাম, আচ্ছা তুই খুব গোয়েন্দা গল্প পরিস না ? 
উঁহু শুধু পড়িনা গল্প বানাই ও। বলেই একটা অহংকার মেশানো মৃদু হাসি হাসল 
আর তার পর বলল, পাশের বাড়ির দোতলার জানালায় পড়তে বসে অই 
মেয়েটির নাম জানিস ?
খুব কষ্ট করে রাগ দমন করে করে উত্তর দিলাম, কোণ বাড়ি কোন মেয়েটি 
বল তোহ ? ও বলল,
আরেননা ! তাহলে একজন প্রতিদন্দি কমল, বলে অদ্ভুত একটা ঝাঁট জালানো 
হাসি হাসল । হঠাৎ মন টা কেমন খারাপ হয়ে গেলো ।
ওই দিন বাজার করার সময় , একটা অদ্ভুত জিনিস দেখা গেলো, মুদির দোকানের 
মালিক এর সাথে কথা বলতে বলতে রাতে ছাদে ওঠা ছেলেটির সম্পর্কে অনেক 
কিছুই কোনো এক ছলে বলে জেনে নিল । 
আসার সময় অঞ্জনার বাড়ির সামনে এসে হঠাৎ থমকে দাড়িয়ে , আমার দিকে 
তাকাল আর আবার সেই হাসি ।
অন্যদিন ভারী ব্যাগ নিয়ে আমি সিঁড়িতে অনায়াসে উঠে পড়ি, কিন্তু জানিনা কেন 
আজ একটা ব্যাগ নিয়ে উঠতে পাঁচ গুন বেশি কষ্ট হল। বাজারের ব্যাগ রেখে 
হিমাদ্রি বাপিদের রুম এ ঢুকল, আমিও সঙ্গে গেলাম।
চুরির খবরটা কনফার্ম হবার পর থেকে বাপি শুনলাম একটাও কথা বলেনি এখনও।
হিমাদ্রি বাপিদের ঘরে ঢুকেই বলে উঠল, কৌশিক তোর ফোনটা একটু দেখতে
 পারি? বলেই কৌশিকের উত্তরের অপেক্ষা না করেই টেবিলে রাখা ওর ফোন টা 
নিয়ে দেখলাম কল লিস্টএ ঘাটাঘাটি করছিল ।
কৌশিক বলল, বেশি চার্জ নেই, দে চার্জ এ বসাই, আর এসব গয়েন্দাগিরি করে 
কি হবে, নতুন এসেছিস একটু রেস্ট নে, যা। 
দেখলাম হিমাদ্রি মুচকি হেসে ফোন টা ফেরত দিল , আর  তারপর বাপিকে বলল, 
দুপুরে একটা জিনিস জানা হয়নি, কাল রাতে এই ফ্লোরে আর কেউ এমন কাউকে 
দেখা গেছে যে এই ফ্লোরে থাকেনা ?
আমি বুঝলাম আজ দুপুরে হিমাদ্রি এখানে এসেছিল, বাপির সঙ্গে সে কথা ও 
বলেছে, আমি হঠাৎ বলে উঠলাম, কিন্নর দা ! কাল রাতে মেস মালিক কাকিমার 
আদরের ছোট ছেলে ভাড়ার টাকা নিতে এসেছিলো। ঠিক কটা নাগাদ হবে ?
এই ধর এগারো !
বাপি আর হিমাদ্রি দুজন কেই হাসিমুখে বিদায় দিয়ে হিমাদ্রি যখন রুম ছেড়ে বের 
হচ্ছিল তখনও আমি বাপিকে একটি কথা বলতে দেখলাম না । তবে কৌশিক এর 
মুখ টা গোমড়া মত কেন দেখাচ্ছে ঠিক বুঝে উঠলাম না। তাহলে কি ?
এই হিমাদ্রির সঙ্গে একদিন কিছু মুহূর্ত কাটিয়ে নিজের একটা পরিবর্তন খেয়াল  
করলাম,  এতদিন যা কিছু ছোট ব্যাপার ছিল আজ সেগুলোই বড় এবং প্রয়োজনীয় 
বলে মনে হচ্ছে !
ঘর থেকে বেরোনোর সময় আমি হিমাদ্রি কে প্রশ্ন করলাম, বাপি কি বলেছিল?
হিমাদ্রি কিছু বলতে যাবে এমন সময়েই  মুদির দোকানের ছেলেটা একটা মাদুর 
নিয়ে সিঁড়ি থেকে উঠে একটা বাঁক ঘুরেই আমাদের মুখোমুখি হল । হিমাদ্রি ওকে 
প্রশ্ন করল ‘তোর নাম কি’?

(চলবে......)
রচনাকাল : ৩০/৯/২০১১
© কিশলয় এবং সাগীরুদ্দিন মণ্ডল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger
সমাপ্ত



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Anonymous Proxy : 12  Bangladesh : 14  Canada : 1  China : 53  Finland : 12  Germany : 16  India : 225  Israel : 16  Netherlands : 12  Russian Federat : 6  
Russian Federation : 31  Saudi Arabia : 9  Sweden : 12  Ukraine : 33  United Kingdom : 16  United States : 1793  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Anonymous Proxy : 12  Bangladesh : 14  Canada : 1  China : 53  
Finland : 12  Germany : 16  India : 225  Israel : 16  
Netherlands : 12  Russian Federat : 6  Russian Federation : 31  Saudi Arabia : 9  
Sweden : 12  Ukraine : 33  United Kingdom : 16  United States : 1793  


© কিশলয় এবং সাগীরুদ্দিন মণ্ডল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
রোমাঞ্চ সন্ধানী [পরিচ্ছেদ ০২] by Sagiruddin Mondal is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৯৭২৫
fingerprintLogin account_circleSignup