• বিষয় ভিত্তিক সংকলন

    নারী দিবস


।। ভালোবাসার ক্ষত।।
সুমিতা গাঙ্গুলি
দেশ : India , শহর : দূর্গাপুর

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , জানুয়ারী
প্রকাশিত ১৩ টি লেখনী ২৫ টি দেশ ব্যাপী ৮২৩৪ জন পড়েছেন।
রুপা সারাদিন ঘরের কাজ সামলে দেখলো অনেক দেরী হয়ে গেছে মেয়েকে আনতে যেতে হবে স্কুল থেকে। তাড়াতাড়ি কোনরকমে চুড়িদারটা পড়ে দৌড়াতে লাগলো। দুটো বাস পাল্টে তারপর মেয়ের স্কুল। ওদিকে ছুটি হয়ে গেলে মেয়ে মাকে দেখতে না পেয়ে কাঁদতে শুরু করে দেবে। রাহুল অনেকবার বলেছে পুলকারের কথা কিন্তু রুপা পুলকারের ভরসায় ছাড়তে মন চায় নি, তাই বাধ্য হয়ে রুপা নিজেই যায় মেয়েকে আনতে। মেয়ে ছাড়া রুপার আর কেউ নেই। রুপা আর রাহুল দুজনে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল দুজনের বাড়ির অমতে। তাই রুপার বাপের বাড়ি বলে কিছু নেই। মেয়েকে স্কুল থেকে এনে রুপা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। রাহুলের আজ ছুটি তাও রুপা একবারের জন্য ও রাহুলকে বলেনি মেয়েকে নিয়ে আসার জন্য। রাহুল খুব ভালো একটা কোম্পানিতে ম্যানেজারের পোস্টে কাজ করে। বিয়ের পর ওদের জীবন খুব আনন্দে আর সুখে কাটছিল। তারপর যখন জানতে পারলো রুপা মা হতে চলেছে তখন খুব আনন্দ হয়েছিল দুজনের। 
এরপর যতো দিন যায় রাহুলের কাজের ব্যস্ততা বাড়তে থাকে। রোজ সকালে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায় আর ফেরে অনেক রাত করে। রুপা সারাদিন কি করে কেমন আছে জানার প্রয়োজন মনে করে না। ওই অবস্থাতেও রুপাকে তার শয্যাসঙ্গিনী করে। রুপার কস্ট হয় আবার ভয় ও পায় এই অবস্থার জন্য। পাছে তার সন্তানের কোন ক্ষতি না হয়ে যায়। কিন্তু রাহুলের কাছে এগুলো কোন চিন্তার বিষয় নয়। শারীরিক তৃপ্তিটাই আসল। এরপর রুপার সন্তান পৃথিবীর আলো দেখে। কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় রুপা। রুপা মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে এলে রাহুলের অনেক পরিবর্তন চোখে পড়ে রুপার। কোনসময়ে মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করা বা রুপা শরীর কেমন আছে সেটা জানার কোন আগ্ৰহ ই নেই রাহুলের। ওই সারাদিন ঘরের কাজ তারপর মেয়েকে সামলানো রাত জেগে মেয়েকে খাওয়ানো এসব করে রুপা খুব ই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। মনে হয় যদি একটা রাত একটু নিশ্চিন্তে ঘুমানো যেত কিন্তু না এরপর ও থাকে রাহুলের শারীরিক ক্ষিদে মেটানোর চাহিদা। একদিন রাহুল স্নান করতে গেলে রাহুলের ফোন বেজে ওঠায় রুপা ফোন ধরে অন্য প্রান্ত থেকে মেয়ের কন্ঠস্বর শুনে বলে পরে ফোন করতে। মেয়েটির কথাগুলো শুনে রুপার মনে সন্দেহর বীজ বুনতে শুরু করে। এই ব্যপারে রাহুলকে প্রশ্ন করলে রাহুল এড়িয়ে যায়। এতে সন্দহ আরো বাড়তে থাকে। সেই সকালে বেড়িয়ে যাওয়া আর রাত করে বাড়ি ফেরা । আর বাড়ি ফিরে এসে শারীরিক ক্ষিদে মেটানোর চাহিদা। তখন একবারের জন্য মনে পড়ে না নিজের স্ত্রী ও মেয়ের কথা যে ওরা সারাদিন কেমন থাকে কি খায় এসব জানার দরকার পড়ে না। কস্ট হয় দেখেও বাধা দিতে পারে না রুপা কস্ট আর যন্ত্রনায় সারারাত রুপা কেঁদে চলে তার উপর মেয়েকে দেখা প্রায় সারারাত এইভাবেই কেটে যায় রুপার। একদিন রাহুলেরএক বন্ধু মেয়েকে দেখতে ঘরে আসে এবং সে রুপাকে বোনের মতো স্নেহ করে তাই রুপাকে জানায় অফিসে রাহুল আর ওই মেয়েটির কথা। ওরা খুব ই ঘনিষ্ট হয়ে উঠেছে। আর এও জানায় ওরা দুজনে অফিসের কাজের নাম করে কোথায় বেড়াতে যাচ্ছে। এসব কথা শুনে রুপা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে নি। এর ঠিক দুদিন পরেই রাহুল জানায় অফিসের কাজে ওকে পুরী যেতে হবে ওখানে তিন চার দিন থাকতে হবে, এতে রুপার সন্দেহ সত্যি বলে মনে হয়। তাই রুপাও মেয়েকে নিয়ে একাই ওই এক ই ট্রেনে চলে আসে পুরীতে। অফিসের ওই বন্ধু রুপাকে সমস্ত কথা জানায় যে ওরা কোন হোটেলে উঠেছে। রুপাও নাম বদল করে এক ই হোটেলে ওঠে। রুপা হোটেলের ঘর থেকে দেখতে পাচ্ছে সেই মহিলা আর রাহুর একে অপরের হাত ধরে অন্তরঙ্গ অবস্থায় যাচ্ছে সমুদ্রের দিকে। এরপর একদিন রুপা ওদের ঘরের দরজায় গিয়ে ঠকঠক করে দেখে দরজাটা ভেজানো আছে লক করতে ভুলে গেছে তাই কোন সারাশব্দ না পেয়ে সোজা ঘরে ঢুকে দেখে ওই মেয়েটি ও রাহুলকে বিছানায় শারীরিক চাহিদা মেটানোতে ব্যস্ত। এই দেখে আর স্থির থাকতে পারেনি রুপা কোন কথা না বলে মেয়েকে নিয়ে সোজা ঘরে চলে আসে।রুপা যে দেখেছে বা কি মনে করছে এসব নিয়ে কোন উত্তর দেবার প্রয়োজন বোধ করে নি রাহুল। রুপা চিন্তা করে এই মানুষটাকে ই ভালোবেসে সবার অমতে পালিয়ে বিয়ে করেছিল যার জন্য আজ বাবার বাড়ি ফিরে যাবার পথ ও বন্ধ। আর এই সুযোগটাই রাহুল আজ পর্যন্ত ব্যবহার করে চলেছে। না রাখে মেয়ের খেয়াল না রাখে স্ত্রীর খেয়াল। এতো কিছু হয়ে যাবার পর ও রাহুলের শারীরিক ক্ষিদে মেটাতে রোজ দরকার পরে রুপাকে। তাই মেয়েকে স্কুল থেকে আনা বা মেয়ের সমস্ত দায়িত্ব কর্তব্য রুপা একাই করতে চায়। যে মানুষটাকে একদিন ভালোবেসেছিল আজ সে রুপার চোখে ঘৃন্য মানুষ। রুপার কিছু করার ও তো নেই যে সব ছেড়ে বাবার কাছে গিয়ে থাকবে তাই মেয়েকে বড় করতে গিয়ে রোজ হতে হচ্ছে ধর্ষিতা।আজ আর রাহুলের প্রতি টান বা ভালোবাসা কোনটাই নেই রুপার। কারন অফিসের সেই মহিলাটির সঙ্গে এখনো রাহুলের ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে আবার বাড়িতেও রুপার মতো স্ত্রী ও আছে। তাই রুপা নিজেকে সম্পূর্ণ গুটিয়ে নিয়েছে। মেয়ে ছাড়া আর কোন অবলম্বন নেই রুপার। তাই এই মেয়ের জন্য প্রতিদিন রুপা ধর্ষিতা হয় কার কাছে না নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছে। আজ রুপা বুঝতে পেরেছে রাহুলের এটা ভালোবাসা কোনদিন ই ছিল না শুধু ছিল শারীরিক ক্ষিদে মেটানোর চাহিদা ।রুপা ভেবেছিল রাহুলকে ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলবে। এই ভালোবাসা যে ধর্ষনে পরিণত হবে সেটা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারে নি।এই ভালোবাসার নাম ই হয়তো "বৈবাহিক ধর্ষন"।
রচনাকাল : ৮/৩/২০২০
© কিশলয় এবং সুমিতা গাঙ্গুলি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Australia : 1  Canada : 4  China : 12  Germany : 6  India : 159  Ireland : 26  Saudi Arabia : 6  Ukraine : 3  United States : 226  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Australia : 1  Canada : 4  China : 12  Germany : 6  
India : 159  Ireland : 26  Saudi Arabia : 6  Ukraine : 3  
United States : 226  
পরিচিতি -
                          সুমিতা গাঙ্গুলি ১৯৭৭ সালের ১৫ই নভেম্বর দূর্গাপুরে জন্মগ্ৰহন করেন। 
তিনি একজন গৃহবধূ। 
ছোটোবেলা থেকেই তিনি সাহিত্য চর্চা নিয়ে খুব ই আগ্ৰহী। ছোট গল্প এবং কবিতা লেখা তাঁর খুব প্রিয় বিষয়। তিনি বাস্তবকে নিয়ে লিখতে ভালোবাসেন। বিভিন্ন পত্র- পত্রিকায়  এবং অনলাইন পত্র-পত্রিকাতেও তিনি লেখেন। এর পাশে তিনি সমাজ সেবামূলক কাজের সাথেও যুক্ত আছেন। 
                          
© কিশলয় এবং সুমিতা গাঙ্গুলি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
।। ভালোবাসার ক্ষত।। by Sumita Ganguly is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.


fingerprintLogin account_circleSignup