ড্রইং রুমে বসে তিনজনে দিব্যি হাড় কাঁপানো ভূতের সিনেমা অ্যানাবেল থ্রি দেখছি। হঠাৎ করে পাওয়ার কাট। যাব্বাবা ধুস ।আর ভাল্লাগেনা। -নীর এই নীর একটু মোবাইলের ফ্ল্যাশ টা জ্বালো না। আমি বললাম । কোন সাড়া নেই। গেল কোথায়?এই তো পাশে ছিল। -মিলি অ্যাই মিলি তোর বাবাকে বল না ফ্ল্যাশ টা জ্বালতে। তার ওসাড়া নেই । ভয় করছে আমার । ঘুটঘুটে অন্ধকারে গলা শুকিয়ে আসছে। আশ্চর্য- একটু আগে পর্যন্ত দুটো মানুষ- আমার বর আর মেয়ে আমার গা ঘেঁষে বসে ভূতের সিনেমা দেখছিল ।এক্কেবারে গায়েব। -নির ---- -মিলি ---- আমি আবার ডাকলাম । কারো নিঃশ্বাসের আওয়াজ পর্যন্ত পাচ্ছি না। অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে কোনরকমে একটা মোবাইল খুঁজে পেলাম। ফ্ল্যাশ জ্বালতেই সামনে যা দেখলাম-- তাতে আমার সারা শরীরের রক্ত হিম হয়ে গেল। অ্যানাবেলের ওই ভয়ঙ্কর ভুতুড়ে পুতুল টা স্বয়ং আমার সামনে দাঁড়িয়ে। দুপাশে দুটো বিনুনি। চোখ মুখ নাক ঠোঁট দিয়ে রক্ত পড়ছে। জামা ভিজে গেছে রক্তে।কি বীভৎস সেই চেহারা। আমার মনে হচ্ছে এক্ষুনি অজ্ঞান হয়ে যাব। গোঙানির মতো আঁ আঁ চিৎকার করতে যাব--- হঠাৎ-- কারেন্ট চলে এলো। দেখি আমার পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়ে মিলি হেসে কুটি পাটি হয়ে ওর বাবার গায়ে গড়িয়ে পড়ছে। আর ওর বাবার হাতে টমেটো সসের বোতল । সিন্ডারেলা চেয়েছিলাম ভগবান অ্যনাবেল দিয়েছেন দেখছি। সবই আমার কপাল । নিজেকে সামলে ক্ষুদে শয়তানটাকে বললাম -মা ভয় পেয়ে মরে গেলে ভালো হতো তো? একমাস তোর পিজ্জা চাউমিন পাস্তা সব বন্ধ । গাল ফুলিয়ে ছোট্ট অ্যানাবেল বলল- তুমি না খুব বাজে বাবা ।প্ল্যান করলে তুমি ।আর আমার চাওমিন পাস্তা পিৎজা সব বন্ধ হল । আমি রাগ করে বললাম -তোরা বাপ বেটি ঐ কর।আমি রাতে ভাত খাবো না। এতক্ষণ পর পালের গোদা অ্যানাবেলের বাবা এগিয়ে এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে চুমু খেয়ে সোহাগ করে বলল- আচ্ছা বাবা সরি ।খাওয়া-দাওয়ার উপর রাগ করতে আছে ?যা শাস্তি আছে দিন আমায় ম্যাডাম। মাথা পেতে নেব। আমি বললাম- শাস্তি ?হম দিচ্ছি।একমাস ওটা বন্ধ। অ্যানাবেলের বাবা বলল -হায় কপাল। আমার ক্ষুদে অ্যানাবেল আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল ।পাছে সে আরো গভীরে যায় তাই আমি তাড়াতাড়ি করে বললাম -ওটা বন্ধ মানে--- আমার হাত ধরা বন্ধ । আমাকে জড়িয়ে ধরা বন্ধ । আমাকে চুমু খাওয়া বন্ধ । আমাকে বউ বলাও বন্ধ । আমার অ্যানাবেল এবার একটু পৈশাচিক আনন্দ পেল বোধহয়। বাবার দিকে তাকিয়ে মুখ বেঁকিয়ে বলল- এবার ঠিক হয়েছে।রচনাকাল : ৫/১/২০২০
স্বাগতা সরকার ২রা মার্চ পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪-পরগণা জেলাস্থিত বিখ্যাত জয়নগর শহরের মাজিলপুর অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি প্রাণীবিদ্যা বিষয়ে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর বিভাগে পাঠরতা। ছোটোবেলা থেকেই সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি আবৃত্তিতে, শ্রুতিনাটকে, সঙ্গীতে, চিত্রাঙ্কনে তিনি সমানভাবে পারদর্শীনী। তার লেখা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সাহিত্যের বিভিন্ন বিভাগে যেমন কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, নাটক, শ্রুতিনাটক ইত্যাদিতে এনার লেখনীর পারদর্শীতা লক্ষ্য করা যায়। তিনি বিভিন্ন অনলাইন পত্র-পত্রিকাতেও লেখালেখি করেন।