ভিজিটিং আওয়ার্স শুরু হতে তখনও পনেরো মিনিট দেরি। ঘড়িতে তিনটে পঁয়তাল্লিশ । নার্সিংহোমের আউটডোরে বসে আছেন এক মহিলা। মাঝে মাঝে রুমালে চোখ মুছছেন ।তার পাশে এসে বসলেন আরেকজন । দুজনেই সধবা।
প্রথম মহিলা -আপনার কে ভর্তি আছেন?
দ্বিতীয় মহিলা -আমার স্বামী। আপনার?
প্রথম মহিলা -আপনারও? আমারও স্বামী।
দ্বিতীয় মহিলা- কি হয়েছে আপনার স্বামীর?
প্রথম মহিলা -হার্ট অ্যাটাক। আমি জানতাম না। ব্যাঙ্গালোরে থাকি তো, চাকরি করি ওখানে। জানতেই পড়ি কি মরি ছুটে এলাম। আপনার স্বামীর কি হয়েছে?
প্রথম মহিলা -আপনারও? আজ্ঞে আমার স্বামীরও হার্ট অ্যাটাক।
দ্বিতীয় মহিলা- ও কত নম্বর ওয়ার্ড ?
প্রথম মহিলা -ওয়ার্ড নাম্বার 420।
দ্বিতীয় মহিলা- কি বলছেন? আপনার স্বামী ও 420? আমারও তো স্বামী 420....
ওদের কথার মাঝখানেই নার্স ঢুকে পড়লেন। বললেন- এবার পেশেন্ট কে দেখতে যেতে পারেন ।চারটে বেজে গেছে।
ঢুকেই ভেতরে তিন নম্বর বেড।শুয়ে আছেন লম্বা-চওড়া গোঁফওয়ালা এক ভদ্রলোক ।প্রথম ও দ্বিতীয় মহিলা ঘরে ঢুকেই সমস্বরে ভদ্রলোকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন ।
-ওগো তোমার এ কি হলো গো? তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কেমন করে থাকবো গো?
1 মিনিটের নীরবতা।
অ্যাঁ?কি হল এটা? দুজনেই মুখ চাওয়াচাওয়ি করছেন।
প্রথম মহিলা -সাহস কি করে হয় আপনার? উনি আমার স্বামী।
দ্বিতীয় মহিলা -লজ্জা করে না আপনার ?অন্যের স্বামীকে নিজের বলতে ?ছি ছি।
প্রথম মহিলা -কে কার স্বামী সব প্রমাণ আছে ।
দ্বিতীয় মহিলা - যা যা আমার কাছেও সব প্রমাণ আছে। উনি আমার স্বামী কি না দেখিয়ে দিচ্ছি ।এসব কি হচ্ছে প্রদীপ?
প্রদীপবাবু ঘাপটি মেরে চোখ বুজে পড়ে রইলেন। আমি কিছু শুনিনি আমি কিছু জানি না ।
আসল কথাটা বুঝতে বাকি রইল না ।দমকা হাওয়ার মত
প্রায় পেত্নীর স্পিডে বেরিয়ে গেলেন দুই পত্নী ।
যাবার সময় সমবেত কণ্ঠে দুজনে বলে গেলেন -
ওরে হতভাগা চিটিংবাজ তুই একবার বেঁচে ফের ।তারপর তোকে কে বাঁচায় দেখব।
এরপর তা প্রায় অনেক মাস হয়ে গেল ।শুনেছি প্রদীপ বাবু এখনো ঘাপটি মেরে কোমায় আছেন।
রচনাকাল : ৫/১/২০২০
© কিশলয় এবং স্বাগতা সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।