ঘড়িতে তখন রাত দুটো। মধ্য কলকাতার একটি দশ তলা ফ্লাটের ন' নম্বর তলায় এত রাতেও থিক থিক করছে লোকজন ।পুলিশ এসেছে। থানার দারোগা অনন্ত বাবু বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পেয়েছেন ওই ফ্ল্যাটের অনেকগুলো খুন হয়ে গেছে ইতিমধ্যে ভীষণ রহস্যজনকভাবে। ওসি অনন্ত বাবু ও তাঁর প্রিয় কনস্টেবল রামনিধি সরদার পৌঁছে গেছেন অকুস্থলে। ফ্ল্যাটে পৌঁছে দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করার কিছুক্ষণ পর ভিতর যা দেখলেন তাতে দারোগার তো চক্ষু চড়কগাছ ।ফোনে ধরলেন পারভেজকে।
- পারভেজ ফোর্স পাঠাও। জলদি। অ্যাড্রেস বলে দিচ্ছি।
বিছানার উপর পড়ে আছে এক তরুণী গৃহবধূর লাশ। গলায় ফাঁস দিয়ে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে তাকে। চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসছে কোটর থেকে। জিভ বেরিয়ে গেছে ।খাটের নিচ থেকে উদ্ধার হল আর একজন যুবকের মৃতদেহ ।তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে গ্যাজার মত সাদা তরল পদার্থ। চোখ স্থির। পুলিশের কাজ করলেও কনস্টেবল রামনিধি বেশ ভীতু। একটা একটা করে লাশ আবিষ্কার হচ্ছে। আর হাউমাউ করে আঁতকে উঠছে রামনিধি ।রান্নাঘর সার্চ করতেই আর একটা লাশ। কি মর্মান্তিক ।দেখে মনে হলো বাড়ির কাজের মেয়ে। দেয়ালে হেলান দিয়ে পা ছড়িয়ে বসে আছে। রান্না ঘর ভেসে যাচ্ছে রক্তে।বুক আমূল বিদ্ধ করে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে গেছে ভোজালির মত একটা ধারালো অস্ত্র। দারোগা নাকে রুমাল চাপা দিলেন।
কাঁচা রক্তের উটকো গন্ধ আসছে । জীবনে বহু কেস দেখেছেন তিনি কিন্তু এ যেন মৃত্যুর মিছিল ।তিনি বললেন-
কি বুঝছো রামনিধি?
রামনিধির ততক্ষণে হাওয়া শুকিয়ে গেছে। দারোগা তাকে শক্ত করার জন্য বললেন- পুলিশের চাকরি করছো, মানছি নতুন নতুন।তাও এতো দুর্বল হয়ে পড়লে চলবে না। যাও পাশের ঘরটা সার্চ করে এসো। দারোগা ঘরের অন্যান্য দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখলেন ।যদি আততায়ী কোন চিহ্ন ছেড়ে যায়। পাশের ঘর থেকে রামনিধির বীভৎস চিৎকার ভেসে এল। ওসি ছুটে গেলেন। খাটে পাশাপাশি চিত হয়ে শোয়া দুই বৃদ্ধ বৃদ্ধার লাশ। দুজনেরই কপাল ফুটো করে বেরিয়ে গেছে দুটো বুলেট। খবর পেয়েছিলেন বাড়ির সদস্যসংখ্যা মোট ছয়জন। এ পর্যন্ত পাঁচটা লাশ পাওয়া গেছে। ছয় নম্বর টা কোথায়?
দারোগা বললেন -কি অদ্ভুত দেখো রামনিধি। এতগুলো খুন একসঙ্গে ।কিন্তু ঘরের প্রত্যেকটা জিনিস পরিপাটি করে সাজানো ।একটা জিনিসও ওলটপালট নেই। রামনিধি উত্তর দিল না। কড়ে আঙ্গুল দেখাল ওসির দিকে। ভয়ে তার প্যান্ট ভিজে যাওয়ার জোগাড়। দারোগা বললেন -ওই যে টয়লেট যাও করে এসো ।আর কি।সাবধানে ।এভিডেন্স নষ্ট করে ফেলোনা আবার ।
দারোগার সতর্ক দৃষ্টি মেপে নিচ্ছে ঘরের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জিনিস ।মাথার মধ্যে কিলবিল করছে হাজার প্রশ্ন ।তাই দৃষ্টি সন্ধিগ্ধ ।আরেকটা লাশ কোথায় ?হঠাৎ বাথরুম থেকে রামনিধির আর্তনাদ--
ও বাবা গো --------
ওসি ছুটে গেলেন ।রামনিধি নিশ্চয়ই আর একটা লাশ দেখতে পেয়েছে ।বাথরুমের দরজায় ধাক্কা মেরে চেঁচিয়ে বললেন- হোয়াট হ্যাপেন্ড রামনিধি? কোন সাড়া নেই।
দারোগা উত্তরোত্তর ধাক্কা মারতে লাগলেন দরজায়।
-রামনিধি open the door। open the door I say। what happened? open the door damn it.
সাড়া দিচ্ছনা কেন? রামনিধি--- চিৎকার করতে লাগলেন দারোগা।
কিছুক্ষণ পর রামনিধি দরজা খুলল। ওসি তার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন- where is the dead body ? ভয়ে কুঁকড়ে গেছে রামনিধি ।
হাউ মাউ করে বলল ,দুর ডেড বডির নিকুচি করেছে । বাথরুমে বড্ড আরশোলা ।
ওসি অনন্ত বাবু মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। বললেন যা: কলা ।বাথরুম থেকে রক্তাক্ত লাশ উঠে স্বয়ং বেরিয়ে এলো । আশপাশের বাকি লাশেরা সব উঠে হেঁটে এগিয়ে আসছে ।কারোর সারা গায়ে রক্ত। তো কারো গলায় ফাঁস।
কেউ একজন চেঁচিয়ে বলল-
কাট।
তুই কি ধরনের পুরুষ মানুষ হে? মেয়েদের মত আরশোলা দেখে ভয় পাস ? দিলি তো সিন টার বারোটা বাজিয়ে।দূর ...**.বিপ।বিপ।
-অ্যাল।এই সরি সুজয়দা। কি করবো বাথরুম ভর্তি আরশোলা। সে জিভ কেটে বলল।
থাক আর বেশি দাঁত কেলিও না।রামু কাকা ও রামু কাকা-- ঠিক করে সেট টা পরিষ্কার করতে বলেছিলাম তোমাকে। বাথরুমটা কি আমার বাপে পরিষ্কার করবে?
-এজ্ঞে এক্ষুনি করছি । করছি সাহেব।
ওকে। আপাতত একটা টি ব্রেক।
রচনাকাল : ৫/১/২০২০
© কিশলয় এবং স্বাগতা সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।