বিশ্বাস করুন এরকম ভয়ংকর রাত আমার জীবনে আগে কোনো দিন আসেনি।
সেদিন রাত সাড়ে বারোটা হবে। জিও শাভনে অরিজিৎ চালিয়ে বিছানা ঝাড়ছি। ছুঁয়ে দে আঙুল, ফুটে যাবে ফুল, ভিজে যাবে গা।, লা লা লা। লা ল্লা লা লা লা, হেঁড়ে গলাতেই গান টা বেশ গুনগুন করতে করতে শুয়ে পড়লুম।
তারপর বেশ ঘুমিয়েও পড়েছি। হঠাৎ কি একটা খসখস শব্দে ঘুম টা গেল চটকে। অদ্ভুত অনুভূতি। ঘরের মধ্যে কেউ কি হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে?
ঘুমের মধ্যে চোখ খুলে কোনো রকমে দেখলুম, না কেউ তো নেই। আবার চোখ টা লেগে গেল। রাত প্রায় তিন টে হবে। ঢং ঢং করে উঠল বারান্দা র পুরোনো ঘড়ি টা। আবার শব্দ। খসখস। ঘসঘস।
এমনি তে আমি আবার খুব ভূতে ভয় পাই। অনেকে ই বলেছে, অ্যা বেটা ছেলে আবার ভূতের ভয়? আমি বাপু ভাত মাছ খেকো বাঙালি, শনি মঙ্গলবারে নিরামিষ খাই, শেতলা মার বিশাল বড় ভক্ত। আমার ভগবানে ভক্তি,ভূতে ভয়। তা তোমরা যত ই হাসো বাপু্।দীক্ষে নেওয়া আছে। মনে মনে গায়ত্রী মন্ত্র জপ করছি, ওং ভুর.... ভাবছি এতক্ষণে ভূত বাবাজি নিশ্চয়ই পটার পারে,
ওমা,ভূতের উপদ্রব দেখি ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। এবার বুকের ওপর যথেষ্ট চাপ অনুভব করছি, মনে হচ্ছে বড় বড় ধারালো নখ ওয়ালা সরু সরু আঙুল আমার সারা মুখে খেলা করে যাচ্ছে, আমি ভয়ে চোখ খুলতে পারছি না, যত রামনাম জপ করছি, বুকের ওপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে।
কি কেস? খনখনে মেয়েলি গলায় এবার হেসে উঠল ভূতটা।আমি চোখ টিপে ঘাপটি মেরে পড়ে আছি আর মরার অপেক্ষা করছি। তখনো সরু সরু ধারালো আঙুল আমার ঘাড়ে, গলায়, ঠোঁটে ....
আবার ফ্যাসফ্যাসে মেয়েলি গলা বলল, চোখটা খোলো, খোলো না। আমার ঘাড়ে কটা মাথা যে ভূতের কথা রাখব না?
চোখ খুলে দেখি, মৃদু আলোয় লম্বা লম্বা চুল মুখের ওপর,আমার বুকের ওপর বসে দাঁত বের খিলখিল করে হাসছে এক পেত্নী। আর নিজেকে সামলাতে না পেরে, ভূ... ত ভূ.. ত বলে বাবাগো মাগো বলে চেঁচিয়ে উঠলাম।
কি কপাল, পেত্নী টা গলার বদলে মুখ চেপে ধরল। ফ্যাসফ্যাস করেই বলল, মরণ দশা, পেত্নী হব কেন?আমি তোমার বৌ।কাল অগ্নিসাক্ষী করে বিয়ে করলে মনে নেই?
কি সর্ব নাশ, পেত্নী টা যে আমার পত্নী ছিল বুঝতে ই পারিনি। কি করে বুঝব বলুন, আজ আমাদের কালরাত্রি। মা না আলাদা শুতে বলেছিল।
পেত্নী থুড়ি পত্নী তখনো আমার বুকের ওপর। একে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের বিয়ে, তার ওপর আমি আবার ইয়ে মানে খুবি ক্যালানে মানে ন্যালাখ্যাপা মানে লাজুক মানে....
বেশী সময় নষ্ট করল না আমার পেত্নী থুড়ি পত্নী। গলা জড়িয়ে চকাস করে আমার ঠোঁটে ঠোঁট ঢুকিয়ে,...তারপর আবার ঠোঁটে একটা বিষাক্ত কামড় দিয়ে ..মাগো উপসস, জোরসে লাগা,,আহ, আবার একবার ঘাড়ে..... এমা ছি ছি আর বলবনা কি লজ্জা ইস ।
সাক্ষাৎ কালরাত্রি। এতক্ষণ মরার অপেক্ষা করছিলাম। ফাইনালি পেত্নী মেরে দিয়ে চলে গেলেন। বিশ্বাস করুন এরকম ভয়ংকর রাত জীবনে আগে আসেনি। আমার মত সদা সিংগেল ন্যালাখ্যাপা এরম কালরাত্রি জম্মে ও দেখিনি শুনিনি বাপু।
রচনাকাল : ৫/১/২০২০
© কিশলয় এবং স্বাগতা সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।