প্রতি বছর আমাদের পাড়ায় খুবই ধুমধাম করে দুর্গাপূজা হয়। এই বছরও তার বাতিক্রম হল না।
কিন্তু ঝামেলা শুরু হল পুজার থিম নিয়ে। আমাদের পাড়ার নেপোদাদু হল সব কিছুর হরতা কর্তা
বিধাতা। সবাই যখন সাবেকি থিমে দুর্গাপূজার কথা বলতে লাগল কিন্তু নেপোদাদু তাতে বেঁকে
বসল। দাদুর এই থিম পছন্দ নয়। ক্লাবে মিটিং ডাকা হল। সেইখানে নেপোদাদুর স্পষ্ট করে জানিয়ে
দিল থিম হতে হবে সবার থেকে হাটকে, যাতে দূর দুরান্ত থেকে লোক দেখতে আসে। সবাই বাজেট
কথা বলতে শুরু করল। তখনই নেপদাদুর প্রানের সখা পানু খুড়ো বলে উঠল, এই পুজার সমস্ত
খরচ তার। এই শুনে নেপোদাদু তো প্রায় ধেইধেই করে নাচতে শুরু করে দিল নিজের লুঙ্গি তুলে।
সবাই এনজয় করছিল দাদুর নাচ। হটাৎ পোটলা বলে উঠল লাইভ ঠাকুর হোক এই বার । এই টা
শুনে সবাই তো পোটলাকে মারতে যায় আর কি, এমন সময় দাদু নিজের নাচ থামিয়ে পোটলার
গালে একটা চুমু খেয়ে বলে এই থিমই হবে এবাবের পুজাতে। টাকা যখন সব দেবে পানু খুড়ো তাই
কেউ কিছু বলল না। এবার শুরু হল কে কে লাইভ ঠাকুর সাজবে তার খোঁজ। দাদুই দায়িত্ব নিল
লাইভ ঠাকুর খোঁজার। পাড়ার মদনদা যিনি নিজেকে পাড়ার দাদা মনে করে, সে দাদুকে হুমকি দিয়ে
বলে গেল যে সেই যেন অসুর এর রোলটা পায়। দাদু ভয়ে তার কথায় রাজি হয়ে গেল। পাড়ার
হার্টথ্রব চিনি লক্ষ্মী আর তার বোন মিনি সরস্বতী, মোড়ের মিষ্টির দোকানের ময়রা গনেশ, আর
বলিউডের স্বপ্নে বিভোর ঋত্বিক কে কার্ত্তিক হিসাবে ঠিক করেছিল দাদুই। কিন্তু দুর্গা কে হবে সেটা
নিয়ে সবাই খুব চিন্তিত ছিল। অবশেষে দাদু সবাইকে চমকে দিয়ে তার নাতনি বিন্দুবাসিনিকে দুর্গা
সাজিয়ে ছিল। পুজার প্যান্ডেলটি খুব ভালো করেই সাজানো হয়েছিল আর লাইভ ঠাকুরেরা অবস্থান
নিয়েছিল ঠাকুর মন্দিরে। পঞ্চমী থেকে নবমী বেশ ভালোই কেটেছিল। লোকজন হয়েছিল প্রচুর।
দশমীর সকালে ঘণ্টার রিং শুনে ঘুমটা ভেঙে গেল। ফোনটা ধরতেই আমায় গালাগালি দিল, তারপর
ঠাকুর মন্দিরে তাড়াতাড়ি আসতে বলল। আমি কোন রকমে দাঁতটা ব্রাশ করেই দৌড় দিলাম। গিয়ে
দেখি অনেক মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়ে হাসছে। আর দেখি নেপোদাদু ভেই ভেই করে কাঁদছে, আর
মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে হাতে একটা চিরকুট নিয়ে। চিরকুট টা হাতে নিয়ে দেখলাম, তাতে লেখা-
“আমরা চললাম বিয়ে করতে, ইতি দুর্গা ও কার্ত্তিক”।
রচনাকাল : ৯/২/২০১৪
© কিশলয় এবং Dibyendu Chatterjee কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।