ভোরের প্রথম আলোর ছোঁয়া হালকা ভারমুক্ত ডানার পরে লাগল। তৎক্ষণাৎ সে তন্দ্রালু পলকহীন চোখে আকাশপানে তাকিয়ে বাসা ছেড়ে উড়ে চলল ডানার মৃদুমন্দ চলনে।
আকাশের গভীর লাল আভা ক্ষণে ক্ষণে লালচে ভাব কাটিয়ে সূর্যের তেজস্বিনী ধারায় হালকা নীলাভ বর্ণে ছেয়ে গেল। সে যেন সময়ের বহমান ধারার তালে গগণপারের মেঘের টুকরো টকরো দেশে ভেসে চলতে থাকল মিষ্টি, তীক্ষ্ম সুরের ঝুড়ি কণ্ঠে ধারণ করে। সে দিনের প্রথম আলোর ঝলকানিকে রাতের গভীর কালিমা কাটিয়ে আকাশ পানে হাসি ফোটাতে দেখেছে; সে ঠিক একইভাবে দিনান্তে বেগুনি আভার ছোঁয়া লাগতেও দেখেছে। সেই ছোঁয়া যেন ক্লান্ত, কর্মমুখর দিনের ম্লান ধুলোমাখা মুখে শান্ত শীতল জলের ঝাপটা।
সে দিনের প্রারম্ভ থেকে দিনের অন্ত পর্যন্ত আকাশের অসীম বক্ষ হতে পৃথ্বী পরে কর্মমুখর কর্মবিমুখ সময়ের অবিরাম নদীর পাহাড়ি সমতল ধারা দেখেছে। সে শুধুই তার ভারমুক্ত ডানা কে প্রসারিত করে উড়েই বেড়ায় নি, তীক্ষ্ম না বোঝা কণ্ঠে জীবন সঙ্গীতও গেয়ে চলেছে, যেন বিধিরাজের চারণ কবি।
কখনো কেউ তাকে ক্লান্ত, ম্লানময় মুখে ধরার ভার কাঁধে বসে পরতে দেখেনি। সে জীব- আঁখি নিয়েও পৃথিবীর উপরে নিঃশুল্ক বিচরণ করেছে। সে জীবনের বেগে প্রবাহিত লৌকিক স্বর্গীয় স্বত্বা, সে মুক্ত তার স্মৃতি হীন ডানার অক্লান্ত চলনের জন্য।
সে স্মৃতিময় জগতে স্মৃতির চিত্রপটে স্মৃতি হীন; সে ক্ষোভের জগতে ক্ষোভ হীন, নির্লিপ্ত, নিঃস্বার্থ এক প্রাণ। তাই সে ই বিধিরাজের রঙবেরঙের পালকে সজ্জিত দূত। লৌকিক ধর্মের বেড়াজালের উর্ধ্বে তাই সে মুক্ত অনন্ত আকাশে।
রচনাকাল : ২৭/১/২০২০
© কিশলয় এবং লোপা দাস কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।