• ৩য় বর্ষ ২য় সংখ্যা (২৬)

    ২০১৩ , জুলাই



ছায়া ও ছলনা
আনুমানিক পঠন সময় : ৮ মিনিট

লেখক : Sk. Tarik Ahmed
দেশ : India , শহর : Kolkata

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৩ , জুন
প্রকাশিত ২ টি লেখনী ২৩ টি দেশ ব্যাপী ২২৭৪ জন পড়েছেন।
আমি নিজেকে একজন সফল মানুষ বলিয়া পরিগনিত করি। সাফল্য বলিতে 
তথাকথিত বাড়ি-গাড়ি-নারি নহে, সাফল্য বলিতে আমি এই বর্তমান যুগেও 
অত্যান্ত শান্তিতে সংসার ধর্ম পালন করিতেছি। বহুকাল ধরেই বহু গুনিজন নারীর 
মনস্তত্ত্ব নিয়ে বহু অভিক্রিয়া করিয়াছেন। কিন্তু তাহাদের ওই সকল গবেষণার 
ফলহেতু তাহাদের কাছে নারিরা ততোধিক জটিল ও অতরল হইয়া উঠিয়াছে। 
ঠিক যেমনটি রবি-গবেষকের কাছে রবি-সাহিত্য। রবিঠাকুর হইত অমরকানন 
হইতে অপহাসি দেন আর ভাবিতে থাকেন, তিনি কি সত্যি এতোকিছু 
ভাবিয়াছিলেন তাহার রচনাটি লিখিবার সময়। তেমনি ভাবে আধুনিক বিদ্বান্ 
ব্যাক্তির ঊর্বর মস্তিষ্কে নারীর অতীব সহজ-সরল আশা-আকাঙ্কা জটিল রূপে 
প্রতীয়মান। আমি নিজেকে পয়মন্ত় মনে করিয়া থাকি যৌবনের প্রারম্ভে ঘটিয়া 
যাওয়া এক ঘটনার হেতু।

 

আজ হইতে প্রায় ১২ বৎসর পূর্বে আমি জলপাইগুড়ি তে ইঙ্গিনিয়ারিং অধ্যয়ন 
করিতে আসিয়াছিলাম। আমার জীবনের লক্ষ্য ছিল পেশাতে অগ্রগতি করা আর 
নেশা ছিল প্রকৃতিকে ক্যামেরা বন্দি করা। বিকেলে ক্লাস শেষে ক্যামেরা হাতে 
বেরিয়ে পড়িতাম প্রকৃতির আহ্বানে। আর রাত্রি জাগিয়া  পাঠ্যবিষয় গলদ্গরন 
করিতাম। জলপাইগুড়ির আবহাওয়া যেমন ছিল মনোরম, প্রকৃতি ছিল তেমনি 
নয়নাভিরাম। কলেজ হইতে অদূরে চিরপুলকিত চা-বাগান ও সারিসারি প্রশান্ত-
স্নিগ্ধ বৃক্ষ আর মাঝ দিয়ে প্রবাহিত কল্লোলিনী ‘করলা’ নদী কে দেখিয়া মনে 
হইত যেন মৌন গিরিরাজের মুখর বাণী, বিষণ্ণা বনানীর আনন্দ-কলগান, স্থিরা 
ধরিত্রির অস্থির আঁখিজল। মধ্য-রাত্রির পরে বহুদূর হইতে বিষাদঘন মিষ্টি বাঁশীর 
ধ্বনীটি ছিল দুঃখের দিনে

সুখের স্মৃতির মতো বিষাদময়। সে দিনটি ছিল বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের সপ্তম 
দিন। তখন রাত্রির শেষঘটিকা। অর্ধখন্ড চন্দ্র পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়িয়াছে। স্বচ্ছ ও 
অস্বচ্ছ মেঘের খেলায়  আলোআঁধারির পরিবেশ সৃষ্টি হইয়াছে। আমি এই 
মোহময় পরিবেশ উপভোগ করিবার জন্যে হোস্টেলের ছাদে গেলাম। চন্দ্রমা তখন
 অস্ত যাহিবার উপক্রম। সমগ্র প্রান্তর জুড়ে আলোআঁধারির খেলা আর বুনো 
গাছের দীর্ঘ-দীর্ঘ

ছায়া। তখন লক্ষ্য করিলাম দূরে চা-বাগানের অতি নিকটে এক শ্বেত-শুভ্র বসনা
 পরিহিতা এক নারী রেললাইনের পাশ দিয়া যাইতেছে। ঊল্টো দিক হইতে 
একখানি ট্রেন আসিতেছিল। তাহার পড়ে মহিলাটিকে আর দেখিতে পাইলাম না। 
তাহলে বধহয় মহিলাটি ট্রেনে কাটা পড়িয়াছে। অস্পষ্ঠ আলোতে আর কিছুই 
দেখিতে পাহিলাম না। আমি ভয় পাহিয়া গিয়িছিলাম। এমনিতেই আমি কোনরূপ 
দুর্ঘটনা দেখিতে পারিতাম না। তাই কোনোমতে নিজরুমে আসিয়া ঘুমাবার ব্রথা 
চেষ্ঠা করিলাম। সকালে আমার একবন্ধুর সাথে গেলাম

যেখানে ওই মহিলাটি আত্মহত্যা করিবার জন্যে গিয়েছিল। সেখানে গিয়া কিছুই 
চোখে পড়িল না। ভাবিলাম হইত কাল রাত্রে আনিদ্রা জনিত করনে অথবা 
আলোর যৎসামান্যতার জন্যে আমারই ভ্রম হইয়াছে। সেই সাথে আরও ভ্রম 
হইতে লাগিল যে কে যেন আমাকে লক্ষ করিতেছে। যাইহোক আমি আমার রুমে 
চলিয়া আসিলাম।

 

এই ঘটনার প্রায় একপক্ষ কাল অতিক্রান্ত হইয়াছে। একদিন আমার রুমমেট অরূপ 
বলিল,”তুই কি রুমে মেয়ে মানুষ নিয়ে আসিস। আমার ঘুমটা কড়া বলে 
একরুমেই তুই...... ছি ছি ছি”। আমি তদরূপ বিস্মিত হইয়া জিগাইলাম কি 
ঘটেছে তা জানিবার জন্যে। সে বলিল আজ কয়েকদিন যাবৎ সে লক্ষ করিতেছে 
কোন অল্পবয়ষ্ক মহিলা রাতের বেলায় আমার রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তাহার 
পরনে থাকে কখনও লাল কখনও বা সাদা আবার কখনও বা কমলা রঙের 
শাড়ী। সে ভাবিল আমি এখানে চাবাগানের শ্রমিকদের মেয়ের সাথে

প্রেম করিতেছি ও তাহার সাথে রাত্রিযাপন করিতেছি। আমি তাহাকে আসবাস্থ 
করিলাম আর বলিলাম আমি কোন বাজে কাজে জড়িত নহে এবং সে যাহা 
দেখিয়াছে তা তাহার চোখের ভরম। আরও কয়েকদিন পরে এক রাত্রে কিছু পড়ে 
যাবার শব্দে আমার ঘুম ভাঙ্গিয়া গেলো। দেখিলাম এক সাদা রঙের কুকুর 
আমার রুম থেকে বেরিয়ে যাইতেছে। হালকা আলোয় দেখিলাম ধপধপে সাদা 
রঙের কুকুর। আজ কয়েকদিন হইল আমার ঘুম খুব সজাগ হইয়াছে। তাই আজ 
ক-দিন হইতে দেখিতেছি, রাত্রে একটা সাদা কুকুর কোথা হইতে আসে- অনেক 
রাত্রে আসে, ঘুম ভেঙ্গে দেখি সেটা বিছানার কাছেই কোথায় ছিল- আমি জেগে 
শব্দ করিতেই পালিয়ে যায়- কোনও দিন জেগে উঠিলেই পালায়। সে কেমনে 
বুঝিরে পারে যে, এইবার আমি জেগেছি। সেদিনকে Assignment এর চাপ 
ছিল। সারা রাত্রি জেগে তাহাই করিতেছিলাম। বোধ হয় শেষ রাতের দিকে একটু
 তন্দ্রা আসিয়া থাকিবে-হটাৎ কাছেই একটা কিসের শব্দ শুনে মুখতুলে 
চাহিলাম-দেখি আমার খাটের নিচে কি একটা ঢুকিতেছে। মাথা নিচু করিয়া 
খাটের নীচে দেখিতে গিয়াই চমকে উঠিলাম। আধ-আলো আধ-অন্ধকারে প্রথমটা 
মনে হইল, একটি মেয়ে যেন গুটি-সুটি মারিয়া খাটের তলায় বসে আমার 
দিকে হাসিমুখে চাহিয়া আছে।। আমি ভালো করে দেখিব বলে লাইট জ্বালালাম।
 দেখি কি একটা প্রাণী ছুটে খাটের তলা হইতে বেরিয়ে পালাতে গেল। দোরের
 কাছের আলোতে দেখিলাম একটা বড় কুকুর, কিন্তু তাহার আগাগোড়া সাদা, 
কালোর চিহ্ন কোথাও নেই তাহার গায়ে। খুব সকালে উঠিয়া খাটের নীচটা 
একবার কি মনে করে ভাল করে খুঁজতে গিয়ে সেখানে একগাছা কালো চুল 
পেলাম। কোথা হতে এল এ চুল? দিব্যি কালো কুচকুচে নরম চুল।। কুকুর-
বিশেষতঃ সাদা কুকুরের গায়ে এত বড়, নরম কালো চুল হয় না। এই ঘটনাটি 
আমার রুমমেট এর মনে এরূপ আতঙ্ক সৃষ্টি করিয়াছিল যে সে রূম ছাড়িয়া বাড়ি


চলিয়া গেলো।  যাহার ফলস্বরূপ ৩ নং হোস্টেলের গেস্ট রুমে আমি একা 
পড়িয়া গেলাম। হোস্টেলের একলা নিজের ঘরটিতে শুইয়া বাহিরের ধপধপে 
সাদা,ছায়াহীন, ঊদাস, নির্জন জ্যোৎস্নারাত্রির দিকে চাহিয়া কেমন একটা 
অজানা আতঙ্কে প্রান কাঁপিয়া উঠিল, মনে হইল এ-সব জায়গা ভাল নহে, এর 
জ্যোৎস্নাভরা

নৈশ-প্রকৃতি রূপকথার রাক্ষসী রাণীর মত। তোমাকে ভুলাইয়া বেঘোরে লাইয়া 
গিয়া মারিয়া ফেলিবে। এই সাতপাঁচ ভাবিতে ভাবিতে কখন তন্দ্রাচ্ছন্ন হইয়া 
পড়িয়াছিলাম মনে নাই। ঘুম ভাঙ্গিয়া দেখি, কুকুরটা আস্তে আস্তে ঘর থেকে বের
 হইয়া যাচ্ছে। আমি তাহার পেছনে ধাওয়া করিলাম। পলক ফেলতেই দেখি এক 
মেয়েমানুষ সিঁড়ি দিয়ে নামিয়া রামদার ক্যান্টিন এর পাশ দিয়ে চলিয়া 
যাইতেছে। আমি তাহার পিছু নিলাম। শ্বেত-শুভ্র বসন পরিহিতা মহিলাটি 
চাবাগানের পাশের রেললইনের পাশে এসে দাঁড়াইল। আমি তাহার অল্প কাছে 
গিয়া দাঁড়াইলাম। ধিরে ধিরে সে আমার পানে ফিরিল। অত্যান্ত সুন্দর সে 
মুখখানা পূর্নিমার আলোতে মায়াবী জাল রচনা করিতেছে। আমি মোহিত, 
বাকরুদ্ধ হইয়া পারিলাম। ভুলিয়া গেলাম জগতখানা, ভুলিয়া গেলাম স্থান-
কাল-পাত্র, ভুলিয়া গেলাম কিছুক্ষণ আগের উর্দেক। আমি অপলক দৃষ্টিতে 
চাহিয়া রইলাম। হালকা ঘুমজড়ানো সে অতলভেদী মহময় দৃষ্টি আমার মনে 
হইতে লাগিল এ দৃষ্টি ভাল নহে-বিস্মৃতের মহাসাগরে নিয়া ফেলিবে, যেখানের 
কোন কূলকিনারা তোমার জানা নাই।

 

সে দুইখানা বাহুযুগল প্রাসারিত করিয়া আমাকে আহ্বান করিল। আমি নিজেকে 
সামলাইয়া লইয়া অতিপরিচিতের মত বলিলাম, “তুমি কিন্তু অপরূপ সুন্দরি, 
ঠিক যেন প্রজাপতির মতো-দূর থেকে দেখিলে ভালো থাকে, ধরিতে চাহিলে 
উহার সৈন্দর্য নষ্ঠ হয়।” আমার কথাটি শুনিয়া সে তাহার হাঁসির ঝংকারে 
চারিদিক মুখরিত করিয়া বলিল, “সমস্থ পুরুষ একরকমের, তাহাদের সুধু একটি 
বস্তুই কাম্য। আর সেটা বলিতে এতো ছলনা কেন?”। আমি কহিলাম, “তুমি 
ঠিকই বলিয়াছো। সমস্থ পুরুষের একটি বস্তুই কাম্য। আর তাহা হইল পৌরুষত্য। 
কিন্তু আমার মনে হইতেছে তুমিও কিছু মুষ্টিমেয় পুরুষের মতো ভ্রান্তধারনাই 
রহিয়াছ। পৌরুষত্য বলিতে আত্মসম্মনা, দ্বায়িত্যবোধ, কর্তব্যপরায়নতা, 
সংবেদনশীলতা, প্রেমময়তা। ” সে ব্যাঙ্গাত্মক হাসি দিয়া বলিল, “তাহাই 
বৈকী? তাহলে আমি আমার জীবনি শুনাচ্ছি। এখান থাকিয়া বিচার কর তাহলে”

 

সে বলিতে লাগিল, “আমি অতিসাধারণ পরিবারে জন্মেছিলাম। কিন্তু আমার 
বাবা-মা কোনও দিন আমাকে সাধারন করিয়া রাখেননাই। আমার সৈন্দর্য সারা 
গ্রামে চর্চার বিষয় ছিল। আমি নিজের সৈন্দর্যে নিজে দেখিতাম আর ভাবিতাম 
পৃথিবীর সমস্ত উদ্ধত পৌ্রুষের মুখে রাশ লাগাইয়া মধুরভাবে বাগাইয়া ধরিতে 
পারে আমার এই রূপ। তাই আমার ঠাকুর দা আমার নাম দিয়েছিলেন মহুয়া,
 ঠিক যেন মহুয়া ফুলের ন্যায় মধুময়।‍‌

 

একদিন বাদলার দিনে আমার জ্বর হইয়াছে। অসুস্থতার কারনে সন্ধাবেলাই আমি 
ঘুমিয়েছিলাম। সেই সন্ধ্যালোকে কোমল বালিশের উপরে একটি ঈষৎক্লিষ্ট মুখ, 
অসংযমিত চূর্ণকুন্তল ললাটের উপর আসিয়া পড়িয়াছে, আঁখিযুগল গভীর নিদ্রায় 
মগ্ন। সপ্নে দেখিলাম এক রাজপুত্র সাদাপক্ষিরাজে চেপে আমার কাছে আসিয়াছে 
আর আমার সাথে কথা বলিতেছে। ‘বাড়িতে কেউ আছেন’, হটাৎ এক সুন্দর 
পুরুষালি কণ্ঠে আমি

জাগিয়া উঠিলাম, চোখ মেলে তাকালাম, পক্ষিরাজটি একটি সাইকেলে 
রূপান্তরিত হইয়াছে আর তাহার চালক এক সুদর্শনা যুবক। সন্ধ্যার রক্তিম 
আভায় আমার রঞ্জিত মুখমণ্ডের প্রতি অপলক দৃষ্টিতে চাহিয়া রহিয়াছে। আমি 
তাহাকে জীগাইলাম, ‘কি দরকার?’ সে বাকরুদ্ধ অবস্থায় দাঁড়াইয়া রহিল। 
আমি আর হাঁসি

ধরিতে না পারিয়া জোরে হাঁসিয়া ফেলিলাম। সে অত্যান্ত বিব্রত হইয়া সেখান 
হইতে চলিয়া গেল।”

 

আমি কহিলাম, “তা হওয়া তো খুবই স্বাভাবিক, তোমার অশরির দেখিয়াই 
আমি নির্বাক হইয়া গিয়েছিলাম। আর সে তো তোমাকে স্বশরীরে দেখিয়াছে”
 

সে বলিতে লাগিল, “পরদিন দেখিলাম সেই সুর্দসনা যুবকটি আমার বাবার 
সাথে কোনও এক বিষয় নিয়ে আলোচনা করিতেছে। পরে জানিতে পারিলাম ও 
সামনের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ে আর সে কোন নকশাল আন্দলনের সাথে 
জড়িত। সে চাবাগানে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে সচেতন করার জন্যে আলোচনা 
সভা করিতে চায়। আমার বাবার কথা গ্রামের কেউই অমান্য করিত না তাই 
এই অন্দলনের জন্যে প্রায়ই আমাদের বাড়িতে আসিতে লাগিল।

 

আমার না আগে কখনও এমনটি হইনি জানো, কারোর ব্যাপারে এতচিন্তা আমি 
কখনও করিনি,জানিনা আমার কি হইয়াছিল তখন কিন্তু কিছু যে হইয়াছিল সে 
ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। তখন কেমন সব ওলট-পালট হয়েগেল, আকাশও লাল 
হইল না-উত্তরের হাওয়া ও বইলনা। শুধু মনের মধ্যে একটা সুন্দর মিষ্টি বৃষ্টি 
হয়ে আমার সবকিছু বইয়ে নিয়েচলে গেল। আস্তে আস্তে তাহার তাকানো, 
হাঁটাচলা, দায়িত্যবোধ, বুদ্ধিমত্তা সব আন্দলনের প্রতিভালবাসা আমার মনের 
সেই বৃষ্টিটাকে তাহার প্রতি ভালবাসাই পরিনত করিয়া দিল। কখন যে দিল 
সেটা জানিতেই পারিলাম না। আমি তাহাকে নিজের থাকেও বেশি বিশ্বাস 
করিতে লাগিয়াছিলাম।

 

প্রতিদিন বিকেল বেলাই সে আসিত আর আমি তাহার সঙ্গে নানান বিষয় নিয়ে 
কথা বলিতাম, আন্দলনের কারন, তাহার ফল নিয়ে জিজ্ঞাস করিতাম, কখনও 
কখনও তাহার সহিত সান্ধ্যভ্রমনে বেরাইতাম। ধীরে ধীরে আমরা খুব কাছাকাছি 
আসিয়া পড়িয়াছিলাম।

 

কিন্তু একদিন রাত্রিবেলা কেহ যেন আসিয়া বলিল সে নাকি আহত অবস্থায় 
চা-বাগানে পড়িয়া রয়েছে, তাহার বাঁচিবার কোন আশা নাই, সে সুধু আমাকে 
দেখিতে চায়। আমি দ্রুতপদে গেলাম তাহাকে দেখিবার্থে। কিন্তু সেখানে গিয়া 
দেখিলাম ঠিক অন্য ঘটনা। দেখিলাম সে ও তাহার কয়েকজন বন্ধু মিলিয়া সেখানে সুরাপান করিতেছে, আমি জিজ্ঞাস করিতেই সে বলিল আমাকে ডাকার 
পরিকল্পনা। তুমি হইত বুঝিতে পারিতেছ আমাকে কেন ওরা ডাকিয়াছিল। ওরা 
আমার হাত-পা-মুখ বাঁধিয়া দিল। কিন্তু তাহারা এতটাই মদের নেশাই বিভর 
ছিল যে আমার মুখের সাথে নাসিকা ও অবরুদ্ধ করিয়া দিয়াছিল। অল্পসময়ের 
মধ্যে আমি মৃত্যুর কোলে ঢলিয়া পড়িলাম। তারপর তিন পশু মিলিয়া আমার 
নথর প্রানশূন্য দেহটাকে নিয়া আদিম ক্রিয়াই মাতিয়া গেল। যখন তাহাদের গ্যান
 আসিল তখন ওরা আমার দেহটাকে নিয়ে ঠিক এই যাইগায় রেললাইনে 
ফেলিয়া দিল। তারপর...”

 

আমি বলিয়া উঠিলাম, “ব্যাস, আর নয়, আমি আর শুনতে পারছি না।”

 

সে বলিয়া উঠিল, “তুমি ইহা শুনিতে পারিছনা। আর আমি উহা সহ্য 
করিয়াছি। যাহাইহোক আমি কিন্তু তাহাদের কে ছাড়িনাই। সবাই কে আমি শেষ 
করিয়া দিয়াছি। আর আমি এই ভাবে ডেকে দেহললুপ পুরুষের প্রাননাশ 
করিয়াছি। তোমাকে কে এনেছিলাম হত্যা করিবার জন্যে। কিন্তু তোমাকে দেখিলাম
 তুমি অন্যরকমের”

 

আমি কহিলাম, “তোমার জীবনী সত্যি মরমান্তিক। কিন্তু তুমি দুএকজন কে 
দেখিয়া সবাই কে একগোষ্ঠিতে ফেলিতে পার না। তোমার এই মরমান্তিক কাহিনি
 শুনে বেশীরভাগই মানুষের ঘৃ্না জন্মাবে সেই পশুসুলফ মানুষ্টির প্রতি।”

 

সে কহিল, “তুমি না আসলে হইত আরও অনেক গুলি প্রান আমার হাতে 
যাইত। আমি এই সত্য উপলব্ধি কোনও দিন করিতে পারিতাম না। সূর্য উঠিতে 
আর বেশি সময় নেই। আমি চলিলাম। ভালো থেক।”
রচনাকাল : ১৩/৬/২০১৩
© কিশলয় এবং Sk. Tarik Ahmed কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 35  Canada : 33  China : 39  Finland : 12  Germany : 40  Iceland : 16  India : 316  Ireland : 1  Israel : 12  Netherlands : 13  
Norway : 12  Romania : 2  Russian Federat : 9  Russian Federation : 12  Saudi Arabia : 5  Ukraine : 36  United Kingdom : 4  United States : 495  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 35  Canada : 33  China : 39  Finland : 12  
Germany : 40  Iceland : 16  India : 316  Ireland : 1  
Israel : 12  Netherlands : 13  Norway : 12  Romania : 2  
Russian Federat : 9  Russian Federation : 12  Saudi Arabia : 5  Ukraine : 36  
United Kingdom : 4  United States : 495  
  • ৩য় বর্ষ ২য় সংখ্যা (২৬)

    ২০১৩ , জুলাই


© কিশলয় এবং Sk. Tarik Ahmed কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
ছায়া ও ছলনা by Sk. Tarik Ahmed is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৪০৯৫৭
fingerprintLogin account_circleSignup