খুব ছোট্টবেলায় হারানের মা বাবা দুজনেই মারা যায়। আত্মীয়-স্বজনদের কাছে গিয়ে দুবেলা দুমুঠো খাবার আর তার বদলে সমস্ত কাজ করে দেওয়ার আকুতি করার পরও এই বছর পাঁচেকের হারানকে কেও রাখেনি। দুর দুর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। নিরুপায় হয়ে নিজের পেটটাকে দুমুঠো অন্ন দিয়ে শান্ত করার জন্য যেখানে পেরেছে কাজ না দিলেও জোর করে কেঁদে পায়ে পড়ে কাজ করেছে। তার বদলে কেও হয়তো খুব বেশি হলে দশটা টাকা ছুঁড়ে দিয়েছে তার দিকে। একদিন তাকে একজন লোক কাজ আর দুবেলা খেতে দেবে বলে তাকে নিয়ে যায় শহরে। আজ সে শহরের কোনো এক জরাজীর্ণ হোটেলে বাসন ধোয়, টেবিল মোছে। আর সবার ফেলে দেওয়া এঁটো খাবার খুঁটে খুঁটে খায় পেটের জ্বালায়। পরে জানতে পারে যে তাকে এখানে নিয়ে এসেছিল সে অনেক টাকার বিনিময়ে তাকে বিক্রি করে দিয়েছে। প্রতিদিন সকালে হারান দেখতে পায় তার মতো কত ছেলেমেয়ে তাদের মায়েদের হাত ধরে স্কুলে পড়তে আসে। রাতের বেলা ফুটপাথে শুয়ে শুয়ে দেখে সামনের একটা বাড়িতে তারই মতন একটা বাচ্চা ছেলে আছে যাকে তার মা খাইয়ে দেয়, রাতে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। হারান শুয়ে শুয়ে ভাবে তারও তো ইচ্ছা ছিল স্কুলে পড়ার, মায়ের আদর খাওয়ার। কিন্তু মা তো তার উপর রাগ করে চলে গেলো। সে শুনেছে যে তার মতো ছেলেমেয়েদের নাকি পড়ানো উচিত, তাদের দিয়ে কাজ করানো খুব অপরাধ। কিন্তু কই সে তো কাজ করছে কেও তো বলেনা কিছু। এইসব ভাবতে ভাবতে হারান ঘুমিয়ে পড়ে রোজ। শুধু দেওয়ালে লেখাটাই রয়ে যায় "শিশুশ্রম গুরুতর অপরাধ। শিশুদের জীবন শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে উঠুক। আসুন সবাই শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।"
রচনাকাল : ৩০/৫/২০২০
© কিশলয় এবং কেকা হালদার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।