বাবু আমার মস্ত বড়োলোক,
অনেক বাড়ি গাড়ি;
গিন্নিমা তো রোজই পরেন
নতুন দামি সারি ।
আলমারিটা ঠাসা থাকে
শাড়ি আর গয়নাতে;
ঠাকুর জানেন, আমার মনে
লোভ জাগেনা তাতে।
এসব নিয়ে... কি করব আমি!
বাপ মা হারা মূর্খ ছোটো জাত,
বরটা আমার মাতাল বদ্জাত।
ভাত দেয় না
কিল মারার গোঁসাই।
ভাতের খিদে কাজ করে মেটাই।
এক সকালে খবর এল ,
আমার বরের নাকি জ্বর!
লিখল আমার মানুষ,
লক্ষ্মী ফিরে এস সত্বর।
মরার আগে ক্ষমা চাইব গো বৌ!
প্রাণ মন জুরে নোনা জলভাঙ্গা ঢেউ!
গিন্নি মায়ের পায়ে গিয়ে,
পড়লাম আমি কেঁদে!
কিছু টাকা দাও মাগো ,আমার
স্বামীর যে খুব জ্বর!
বাঁকা হাসি হেসে গিন্নিমা বলে,
সে কি! স্বামী আছে নাকি তোর ?
সবই তো জানো মা!
কাটা ঘায়ে কেন নুনের ছিটা দাও!
সেবা করে আমি সারিয়ে তুলব,
মাগো কিছু টাকা কড়ি দাও।
তোর টাকা নিয়ে দেশে পালাবার ফন্দি,
বুঝিনা ভাবিস তুই ।
করোনা ধরেছে বর তোর মরবেই।
তার চেয়ে কাজ কর মন দিয়ে
কাজ নেই দেশে গিয়ে।
এমন কথা বোলোনা মা গো,
দেশে আমি যাবই যাব,
মাইনা টা দাও হাতে।
এতো বছরের খাওয়া পরা,
কত খরচ হয়েছে জানিস!
বেতন আর বাকি কিছু নেই ।
মাগো শুধু অভাবের তাড়নায়,
এক হাতে আমি সামলেছি
যত কাজ!
রাঁধুনি , ধোপানি, বাসন মাজার ঝি,
দোকান বাজার ঝারা পোঁছা
আরো কত কাজ সংসারে
সবই তো করেছি!
খাওয়া পরা ছাড়া কিচ্ছুটি
পাব নাকি !
খুব বড় গলা দেখি তোর!
আমি কি বুঝিনা টাকা করি
সোনা দানা,
লুকিয়ে পাঠাস দেশে,
চোর!!
পেয়ে যাব ঠিক ঝি আর চাকর,
আছে টাকা রোগে পাব ডাক্তার!
মাগো এতো কোরোনা অহংকার!
সাহস কতো ছোটোলোক কোথাকার,
ভাত ছড়ালে কাকের অভাব
হয়না জানিস কি তা।
দয়া করো মাগো থামো !
আজই যাব চলে,
টাকা ছাড়া শুধু কপাল ঠুকে !
এতো টা কঠিন প্রাণ!
হায় ভগবান,
কখনো বুঝিনি তা ।
খালি হাতে
ফিরে
এক কাপড়েতে যমের সাথে লড়ে,
ফেরালাম ঘরে,
ঘরের মানুষ
গৃহদেবতার বরে।
ঘর ছেড়ে আর যাসনি রে বৌ,
আজ থেকে আমি
করব রে কাজ
আমার ........ঘরের
লক্ষ্মী তুই ।
চোখের সামনে রামধণু।
আর জলে থৈ থৈ মন ।
শহরে তে এক অজনা জ্বরে
ধনী দরীদ্র কত মানুষের গেল প্রাণ!
করোনা কোনো অসুখের নাম,
কখনো শুনিনি আগে।
গিন্নিমা সেই করোনায় মৃত
শুনে
তীর যেন বুকে লাগে ।
রচনাকাল : ৩০/৪/২০২০
© কিশলয় এবং সান্ত্বনা চ্যাটার্জী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।