• বিষয় ভিত্তিক সংকলন

    মাতৃ দিবস


মায়েরা সব পারে
বৈশাখী রায়
দেশ : India , শহর : কোলকাতা

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , জানুয়ারী
প্রকাশিত ১৪ টি লেখনী ২৬ টি দেশ ব্যাপী ১০৪৬৩ জন পড়েছেন।
মা: নে নে, শিগগিরি ওঠ।। ৮ টা বেজে গেলো।।
মিতুল: উমমম।।
মা : উঠে পর মিতুল অনেক কাজ আছে।।
মিতুল: দাঁড়াও না মা।। আরেকটু।।
মা: না আর সময় নেই, ওবেলা ছেলে দেখতে আসবে, প্রচুর কাজ, উঠে পর বলছি।।
মিতুল এর ঘুম এক ধাক্কায় চটকে চ হয়ে যাওয়ার জোগাড়।।।।মা কি বলছে এসব?? এই করোনার বাজারে এসব কি করতে উঠে পড়ে লেগেছে..??
মিতুল (ধর মড়িয়ে উঠে বসে): কি বললে??ছেলে??কোন ছেলে? কার ছেলে??
মা: নেকামো কম কর, বয়স টা হওয়াতেই হয়েছে না?? তাড়াতাড়ি ওঠ, আমায় সবজি গুলো কেটে দিবি আয়।।আর হ্যাঁ, আজ একটু হেনা করিস তো মাথায়।।
(মা নিজের মনে কথা গুলো আউরে যাচ্ছে, মিতুলের মাথায় দাউ দাউ করে জ্বলছে কিছু)
মিতুল: শোনো মা, পাগল হয়ে গেছো নাকি?? এই লক  ডাউনের বাজারে কে আসবে বাড়িতে? পাড়ার লোক জানতে পারলে কি হবে জানো? আর কারাই বা আসবে বলেছে? তাদেরই বা কি আক্কেল??
মা: হ্যাঁ, সব আক্কেল তো তোর আর তোর বাবার জমিদারি। বাকিরা তো গণ্ড মূর্খ।।
মিতুল: যদি সত্যিই বুঝতে তাহলে এসব করতে না এর মধ্যে?
মা: কি ভাবিস টা কি তুই আমায়? আমি তোর পেটে হয়েছি না তুই আমার? (এটা মায়ের সিগনেচার পাঞ্চ লাইন, দিনে বার পাঁচেক তো ধরাই থাকে, লক ডাউন এ স্ট্যাটিসটিক্স টা চড় চড় করে ঊর্ধ্বমুখী)  
------ বাড়িতে কেউ আসবে না।। সব ভিডিও কল এ হবে।।
সাত সকালে খালি পেটে মিতুলের ভিরমি খাওয়ার জোগাড় প্রায়।।
মিতুল: কি??? ভিডিও কলে ছেলে দেখা??মানে টা কি??
মা: হ্যাঁ কেনো? কোন কাজ টা আটকে আছে শুনি?? দিন নেই, রাত নেই, বাড়িতে থেকে অফিস অফিস করে মাথা খেয়ে নিচ্ছিস।। কিসব ভিডিও কনফারেন্স কল সব চলতে পারে।। আর ছেলে দেখার বেলাতেই তোমাদের যত গায়ে জ্বর আসে না??
মিতুল: মা কিন্তু...
মা: শোন মিতুল, উঠে আয় বলছি, অনেক কাজ, মিনু টাও আসছে না, দুপুরে আবার সিঙ্গাড়া ভাজতে হবে।।
মিতুল: সিঙ্গাড়া?? কে খাবে? (মিতুলের এবার কান্না পাচ্ছে, মনে হচ্ছে কোমায় চলে যাবে)
মা: উফফ গা পিত্তি জ্বলে যায় প্রশ্ন শুনলে।। হাড় মাস কালি হলে গেলো একেবারে তোদের সাথে সংসার করতে করতে।।
মিতুল: দাঁড়াও দাঁড়াও এই তো বলেল অনলাইন ছেলে দেখা, এসব করে কি করবে টা কি??।।
মা: হ্যাঁরে, বয়স টাতো আর কম হলোনা? এই বুদ্ধি নিয়ে সংসার করবি টা কিকরে?  হাজার হোক, হলেও হতে পারা কুটুম বাড়ি।।ফোনের সামনে প্লেটে করে একটু সাজিয়ে রাখতে হবেনা??
মায়ের এসব লজিক শুনে মিতুলের মাথা ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে বার পাঁচেক ঘুরে গেলো প্রায়।। কথা বলার সমস্ত রকম শক্তি ইচ্ছে হারিয়ে যাচ্ছে।।
যাক, বাবার সাথে কথা বলে জানা গেল সেই বাড়ির মা ভদ্রমহিলা টিও সমান উৎসাহী।। এরকম এক ধরনের অভিনব দেখাশোনা দুই বাড়ির মা প্রায় এক হাতে এমন ভাবে সামলে দিতে উদ্যোগী যেন দেশপ্রিয় পার্কের মহিলা সমিতির দুর্গাপুজো।। সারাদিন মাথা গরমেই সবজি কেটে, সিঙ্গাড়া ভেজে দিন কাটলো।।
যাক, দুপুরে কাজ সামলানো হলো,বিকেলের দিকে সিঙ্গাড়া, নিমকি চা কফি, ফোনের সামনে রেখে, ঠাকুরের প্রসাদের মত আবার নিজেদেরই গলধঃকরণ করতে হলো।। মিতুল মায়ের একটা জলপাই রঙের তাঁত পড়েছিল কনট্রাস্ট এ মেরুন ব্লাউজ। ছেলের বাড়িতে সবাই স্ক্রিনে উকি ঝুঁকি দিচ্ছিল।।বাবাহ, ছেলের মা তো একটা কাঞ্জিভরম পড়ে বসেছিল। ওর মা ই বা কম যায় কিসে?? গত বছরের গরদ টা.....। বাবারা নিতান্তই সাপোর্টিং ক্যারেক্টার।। পাঞ্জাবী পরে বসে হেসে আর মাথা নেড়ে সেশন উৎরে দিয়েছে।। মিতুলের খুব একটা খারাপ লাগেনি, ছেলেটা যা একটু শুধু কিরকম গোবর গণেশ টাইপ।। যাকগে, সে একটু ঘষে মেজে, শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে মিতুলের বেশিদিন লাগবেনা।।ফোন নাম্বার ও চালাচালি হয়েছে।। আশ্চর্যের বিষয়, ছেলের বাড়িতেও একিরকম ভেবে স্ক্রিনের সামনে রুহ আফজার তিনটে গ্লাস, আর তিন প্লেট মিষ্টি রাখা ছিলো।।যাক মিতুলের এটা ভেবে বেশ ভালো লাগলো যে, এই অনলাইনে দেখাশোনার সৌজন্যে অন্তত সব আপ্যায়ন মেয়ের বাড়ির ঘাড়ে চাপে নি।।
যাক, তবুও মাথার আগুন টা একটু ঢিমে আঁচে হলেও জ্বলছে, এভাবে হয় নাকি??
******
শাড়ি টারি ছেড়ে বসতেই, কলিং বেল টা বেজে উঠলো।। এর মধ্যে আবার কে এল??
উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে মিনুদি।।
মিতুল: মিনুদি, তুমি? এই তোমার না আসা বারণ??
মিনুদি: নিজে থেকে আর এলাম কই, কাকিমাই তো ফোন করে ডাকলো??
মিতুল: মা ডেকেছে??
মা: কে রে মিতুল?? মিনু এসছে?? 
মা তড়িঘড়ি করে রান্নাঘর থেকে দুটো টিফিন কৌটো নিয়ে দৌড়ে এসে মিনুদির হাতে ধরিয়ে দিল।।। সাথে হাজার টাকা।। 
"ছেলে টাকে দিস। রেঁধেছিস কিছু আজ ভালো মন্দ?"
" আর ভালো মন্দ কাকিমা? ওই ডাল আর দু রকম ভেজে দিয়েছি!!"
" বেশ, আর মন খারাপ করতে হবেনা, আয় এবার, বেশিক্ষণ দাঁড়াস না,  সাবধানে থাকিস।। আর শোন, কিছু দরকার হলে ফোন করবি।।"
মিতুল দেখলো মিনুদি র চোখ দুটো ছল ছল করছে।।কিছু বলতে পারলো না।।মা কে একটা ঢিপ করে প্রণাম করলো।।তারপর চলে গেলো।। 
মা দরজা লাগিয়ে মিতুলকে বলছে, "আরে মিনুর ছেলেটার আজ জন্মদিন, ভুলে গেছিস? প্রতিবার ছেলে টা কে পায়েস রেঁধে দি। আর মরণ দশা, এইসব জ্বালায় এবার কি কিছুই করা যাবে না বাপু?? সকালেই একটু পায়েস করেছিলাম।। আর ওই চারটে সিঙ্গাড়া, ওই দিলাম।। আরো একটু পায়েস আছে, রাতে দেবো, খাস..." 
বলতে বলতে মা রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো।।মিতুলের কথা সরছে না মুখে।। কেমন যেন মাকে খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।। ঢিমে আঁচে আগুনটায় কে যেনো এক বালতি বরফ জল ঢেলে দিয়েছে।। গলার কাছ টা ধরে আসছে মিতুলের।।
সাথে সাথে হোয়াটসঅ্যাপে একটা মেসেজ ঢুকলো
"হাই আমি, শৌর্য, বিশ্বাস করুন, আমি এসব এক্ষুনি করতে বলিনি, এই সব কিছু আমার মায়ের জন্য।। "
খানিকক্ষণ মেসেজ টার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলো মিতুল।।
"হুম্, মায়েরা সব পারে।।".......।।।।। টাইপ করছে এবার....
রচনাকাল : ১০/৫/২০২০
© কিশলয় এবং বৈশাখী রায় কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Australia : 1  Canada : 2  China : 22  France : 5  Germany : 1  India : 110  Ireland : 4  Mongolia : 1  Norway : 1  Russian Federat : 2  
Saudi Arabia : 4  Sweden : 12  Ukraine : 9  United States : 103  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Australia : 1  Canada : 2  China : 22  France : 5  
Germany : 1  India : 110  Ireland : 4  Mongolia : 1  
Norway : 1  Russian Federat : 2  Saudi Arabia : 4  Sweden : 12  
Ukraine : 9  United States : 103  
© কিশলয় এবং বৈশাখী রায় কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
মায়েরা সব পারে by Baishakhi Roy is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.


fingerprintLogin account_circleSignup