কালবৈশাখী তে ঝড়ে র সাথে একটা কিছু উড়ে এসে পড়লো ব্যালকনি তে,কাছে গিয়ে রিক্তা দেখলো একটা ছোট্ট বুলবুলির বাচ্চা।
কি করে ,ঘরেই বা ওকে কি করে রাখবে!ভাবতে ভাবতে ওকে তুলে নিলো বৃষ্টি ভেজা জাইগা থেকে।
ঘরে যেই নিয়ে গেছে রাভি র তো মহা উৎসাহ,মা একে কি খাওয়াবে,কোথাও থাকতে দেবে ,কি সুন্দর ছোট ছোট ডানা--_-
হাজার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যখন ঘড়ি দেখলো"অবাবা ন' টা বেজে গেছে ভাত করা হইনি....যেইনা উঠতে যাবে দেখলো বুলবুলি র ছানা ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে উড়ছে।। রাভী তখন জিজ্ঞেস করছিল ও কি খাবে ...মাথায় আসেনি। এই টুকু ছানা কে কি দেবে..ওর মা খুঁজবে না তো!হাজারো চিন্তা র মধ্যে ওকে কি দেবে ...মাথায় আসছে না।সকালে ওকে গাছে দিয়ে আসলে ও যদি মা কে খুঁজে না পায়....
তার মধ্যে মেয়েটা বাইনা করেই চলেছে_-_ মা একে আমি রাখবো ,তুমি চলে গেলে ওর সাথে খেলবো:...অনেক বোঝানোর পর পাশে বুলবুলি কে রেখে খেয়ে নিল....
যে মেয়েকে খাওয়াতে বেগপেতে হয়,কি সুন্দর খেয়ে নিল!!!!এর পর আসল কথা বুলি কি খাওয়াবে...এত খেতেও শেখেনি--- মাথায় আসলো ছোট বেলায় সে ও ছাতু র নরম বল করে পাখিদের দিত..
ছাতুর কথা বলতেই হাতের কাছে ছাতু র কৌটা, মেয়ে হাজির নিয়ে...অগত্যা মা মেয়ে এক অসম বয়সি খেলায় বুদ হওয়া গেলো।।।যদি ও খাওয়ানোর বৃথা চেষ্টা করে বড় ঝুড়ির মধ্যে বুলি কে রেখে ঘুমাতে গেলো।
কিছুক্ষণ পরে বকতে বকতে রাভি ঘুমাল,কিন্তু রিক্তার চিন্তা যায় না...কি করবে ছানা টা কে!!!ছেড়া ছেড়া ঘুম হলেও মাঝে মাঝে সে ও এক অমোঘ টানে গিয়া দেখে এসেছে বুলি কি করে....নিজেই ভাবে ওও কি ছোট হয়ে গেল না শৈশব কে স্পর্শ করতে চাইছে...হাজারো কাজের ভিড়ে ভুলেই গেছে তার ও মধ্যে কোথাও বাচ্চামি আছে- যেটা র নাগাল কেউ পাইনি তার--- আপাত দৃষ্টিতে কেউ দেখলে অহংকারী ভাববে ।। হয়ত এটা তার নিজেকে রক্ষা করার ঢাল কারণ তাকে একাই মেয়ে কে নিয়ে থাকতে হয় রাভির বাবা তারার দেশে যাওয়ার পর...অবলম্বন এই একটুকরো পৃথিবী তার মেয়ে;
এই সব ভাবতে ভাবতে আলোর আভা দেখা দেওয়ার আগেই সে ঠিক করে নিল ছানা কে পাশের শিউলি গাছে র উঁচু ডালটা য় রেখে আসবে।।না হলে কাক উপরে আর নিচে পড়ে গেলে কুকুর খাবে।তার আগে সে ঝুড়ি তে কিছু কাপড়ের টুকরো নিয়ে পরম মমতায় পুচকে কে বসালো।গাছে ঝুড়ি বেঁধে ওকে রেখে দিল আর অনিমেষে তাকিয়ে রইলো যাতে ও বেঁচে থাকে।।
আসলে সে যে মা ..যতক্ষণ সন্তান সুরক্ষিত না থাকে মা এর চিন্তা কমে না।তারপর সে তো একাই রাভি র বাবা মা...
একটু পরেই তার অন্যমনস্কতার ফাঁকে কিচির মিচির শব্দে হুস ফিরতে দেখলো মা বুলবুলি তার ছানা কে খাওয়াচ্ছে।পরম মমতায় তার চোখে জল চলে আসলো, এতক্ষণে সে শান্তি পেলো যে বুলি কে সে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে।
আঁচলে টান পড়তেই দেখলো তার বুলবুলি ছানা পিট পিট করে হাসছে সেই দিকে তাকিয়ে।।।পরম মমতায় মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে উপলব্ধি করল ..
পশু পাখি মানুষ ...
সব মা ই এক,মাতৃত্ব এর কোনো ভেদাভেদ নেই। তাই তো স্কুলে যাবার পথে গাড়ি চাপা পড়ে কুকুর ছানা টা যখন মারা গেলো ,কুকুর মায়ের হৃদয় বিদারক চিৎকারে তার ও চোখের কোণে জল এসে গেছিল। স্কুলে গিয়ে ও তার বারবার হৃদয় আর্দ্র হাসছিল ।।কিছুটা ভুলে ছিল ওখানে র ছেকেমেয়ে দের পেয়ে।
তবে তার মাথা উচু করার পিছনে তার মায়ের ভূমিকা সে ভুলবে না,না হলে এই দুর্দিনে সে মেয়ে কে নিয়ে কখনো মানুষ করতে পারতোনা স্কুলের চাকরিটা না করলে।
হঠাৎ happy mother's day ... চিৎকারে তার চিন্তা খানখান হয়ে গেলো।।।
রাভি তার জন্য তার প্রিয় স্বর্ণচাঁপা নিয়ে মাতৃ দিবস পালন করল.. এক অজানা ভালো লাগায় তার মন আনন্দে ভরে গেলো।।10 থ মে সে ভুলেই গেছিল।।বুলি কে সে মাতৃদিবসে মায়ের কাছে ফিরিয়া দিয়েছে।মন থেকে সে ঈশ্বর রের কাছে প্রার্থনা করল ...
পৃথিবীর সব মা..কয়লা খাদানে কাজ করা মা,পাহাড়ে রাস্তা করা মা,লোকের বাড়ি কাজ করে খেটে যাওয়া মা, রোদে সব্জি বিক্রি করা মা,ঝাড়ুদার মা,সকালে মাঠে রোদে কাদায় কাজ করা মা সবাই যেনো ভালো থাকে।
তারপর কিছুটা সময় যেতে সে বুলি কে স্কুল বাস এ তুলে এসে পিং আওয়াজে মুঠো ফোন এ দেখলো ।।।।
Happy Mother's day mam।। Mam as like a mother.
সত্যি সে কখন যে ব্যপ্তি তে রাভির মা,সুপ্তি তে সে ছাত্রছাত্রীদের ও মা হয়ে গেছে।
রচনাকাল : ১০/৫/২০২০
© কিশলয় এবং নন্দিতা সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।