হরিপদ গোঁয়ার
আনুমানিক পঠন সময় : ৩ মিনিট

লেখক : কবীন্দ্র চ্যাটার্জী
দেশ : India , শহর : Kolkata

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৮ , ডিসেম্বর
প্রকাশিত ৩ টি লেখনী ২০ টি দেশ ব্যাপী ২০৭৪ জন পড়েছেন।
হরিপদ'র মন টেঁকে না ঘরে। ছুকছুক করে। কোথাও একটু বেড়িয়ে এলে হয়। কিন্তু সাহসে কুলোয় না। একটা হাঁটু অপারেশন হয়েছে। সে পা টায় বিশেষ অসুবিধে নেই। অন্যটায় যন্ত্রণা খুব। ভেবেছিল সেটা হয়ে গেলে দিব্যি বেড়িয়ে পড়তে পারবে যখন তখন। বিধি বাম। জেনারেল হেলথ নাকি ভাল নয়। দ্বিতীয় পা এখনই অপারেশন করা ঠিক হবে না। ঝুঁকি হ'য়ে যাবে।

হরিপদ বরাবরই যাকে বলে একটু বেপরোয়া। নিজের মতে চলে। যদি মনেও হয় যে পরামর্শটা নেওয়াই যায়, তবু ওর কোথায় যেন আটকায়। আসলে কখনোই তেমন বিপদে পড়েনি আর তাইতেই ওর বেপরোয়া ব‍্যাপারটা অনেকসময় গোঁয়ার্তুমির পর্যায়ে পৌঁছেছে। এভাবেই কেটে গেছে সত্তরটা বছর। 

সেদিন সকাল সকাল দাড়ি কামাতে দেখে হরিপদ'র স্ত্রী জিগ্যেস করলেন, কিগো এইসময় দাড়ি কামাচ্ছো যে ! না শোনার ভান ক'রে হরিপদ মন দিয়ে গোঁফ ছাঁটতে লাগলো ঠিক নাপিতরা যেমনভাবে ছাঁটে। বাঁহাতে চিরুনি, ডানহাতে কাঁচি। ওই কাঁচিটা নাকি ওর ছাত্রাবস্থায় বায়োলজি বক্সের কাঁচি। কাউকে ওটা ও ধরতে দেয় না। স্ত্রী আবারও জিগ্যেস করলেন। এবার উত্তর দিল, শংকরদার বাড়ি যাব। "কার সাথে যাবে, ওনার বাড়ি তো অনেকদূর।"

দূর আবার কি! এই তো বোড়াল। অটোতে অটোতে চলে যাব।

যাবে যাও তবে একটা ট্যাক্সি ক'রে যাও।

হরিপদ মুখে বললো, আচ্ছা, কিন্তু ওর স্ত্রী জানেন, ওটা ওর মুখের কথা, যেভাবে যাবে স্থির করবে সেভাবেই যাবে। স্ত্রী বললেন, পারো তো থেকে যেও, রাত করে না আসাই ভাল। স্ত্রী জানেন, হরিপদ রাতেই ফিরবে।

শংকরদা'র সাথে কথা বলতে এবং ওঁর কথা শুনতে হরিপদ'র ভালই লাগে। বেশ খানিকটা সময় কাটিয়ে হরিপদ ফেরার জন্যে তৈরী হয়। "এত রাতে যাবি। কাল সকালে যাস।" হরিপদ ভাবে পরামর্শটা মন্দ নয় কিন্তু ওর ওই বিশেষ ব্যাপারটা চাগাড় দিয়ে ওঠে। "শোন না, আমি ঠিক পৌঁছে যাব আর একটা ট্যাক্সি পেয়ে গেলে অতি উত্তম।" শংকরদা পীড়াপীড়ি করেনি।

স্ট‍্যান্ডে কোন ট্যাক্সি না পেয়ে একটা অটোতে উঠে বসে হরিপদ। কিছুদূর যাবার পর হঠাৎ প্রচন্ড ঝাঁকুনি। এবং কানটা থেতলে রক্তপাত।

কানের তলায় হাত পেতে হরিপদ নিজের তাজা রক্ত দেখতে দেখতে ভাবে, বাঃ এতটা বয়সেও রক্ত একটুও ফিকে হয়নি। বুঝতে পারে আঘাতের অভিঘাত কানের পিছনে মাথায়ও পৌঁছেছে। ঝিমঝিম করে মাথা। একটি মেয়ে এগিয়ে এসে ওর হাতটা ধরে বলে, 'দাদু, ইস, আপনার তো খুব রক্ত পড়ছে, আস্তে আস্তে চলুন, সামনেই ডিসপেনসারি।' মেয়েটির দিকে তাকিয়ে দেখেনি হরিপদ, ও আর পাঁচটা মেয়ের মতোই দেখতে কিনা নাকি অন্যরকম। মেয়েটি ঠায় বসে রইলো ফার্স্ট-এড হওয়া পর্যন্ত। 'দাদু, একটা ট্যাক্সি করে বাড়ি চলে যান। আপনি বসুন। আমি ডাকছি।' তখন আর রক্ত পড়ছে না। গাল বেয়ে গড়াচ্ছে উষ্ণ নোনা জল।

ট্যাক্সিতে বসে স্ত্রীকে জানালো হরিপদ যতটুকু না জানালে নয়। 

ফেরার একটু পরে আরো কেউ কেউ এলো বাড়িতে। আঘাত কতটা, কেউ দেখতে বা জানতে চাইলো না। হরিপদ তখন অপরাধী। কেন গেছিল, গেলই যখন ট্যাক্সিতে কেন যাতায়াত করেনি, কেন রাতে ফিরে এল, এভাবে কেন কোন অধিকারে সে সবাইকে ডিসটার্ব করছে, সবাই তখন তীরন্দাজ।

হরিপদ'র তখন শুধুই আফশোস, মেয়েটির মুখটা সে দেখেনি।
রচনাকাল : ১৭/১/২০১৯
© কিশলয় এবং কবীন্দ্র চ্যাটার্জী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger
সমাপ্ত



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 3  Canada : 15  China : 21  Germany : 2  Hungary : 4  India : 347  Ireland : 46  Japan : 1  Latvia : 1  Russian Federat : 7  
Saudi Arabia : 15  Ukraine : 19  United Kingdom : 12  United States : 386  Vietnam : 2  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 3  Canada : 15  China : 21  Germany : 2  
Hungary : 4  India : 347  Ireland : 46  Japan : 1  
Latvia : 1  Russian Federat : 7  Saudi Arabia : 15  Ukraine : 19  
United Kingdom : 12  United States : 386  Vietnam : 2  


© কিশলয় এবং কবীন্দ্র চ্যাটার্জী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
হরিপদ গোঁয়ার by Kabindra Chatterjee is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১১০০৯৯২৩
fingerprintLogin account_circleSignup