সুদীর্ঘ দশমাসের একটি অপেক্ষা,
তারপর কোনো এক ভোরে অথবা শ্রাবণের সন্ধ্যাবেলায় ঘর আলো করে আসে স্বপ্নধাবক;
সদ্যভূপতিত হওয়া সাকুল্যে ইঞ্চিদশকের স্বপ্নধাবকের দাঁতকপাটি লেগে যাওয়ার মতো একটি নাম এবং বিলিতি জিবের জন্য একটি রেডিমেড ডাকনাম বাধ্যতামূলক।
এরপর শুরু হয় প্রথম প্রহসন।
মানুষকে মানুষ করার প্রহসন।
আধোআধো বোলে প্রথম বারন "মা নয়, বলো মাম্মা"
কোনো এক ব্যস্ত রাতে স্ক্রিনের সামনে বসে প্রথম আক্ষেপ
"জানো, মিসেস চ্যাটার্জী বলছিলেন ওনাদের বেবি মাত্র ছমাসেই হাঁটছিলো, আমাদের তোজোর তো আটমাস হয়ে গেলো।
হ্যাঁ তোজো, ভালোনাম জ্যোতিরাদিত্য, বলেছিলাম না!
এরপর শুরু হয় শূন্যস্থান পূরন।
শূন্য স্থান পূরন।
লিস্ট করা শুরু হয়,
কোন জিনিসগুলো হতে চেয়েছিলাম,
কোনগুলো হলে ভালো হয়,
কোনগুলো হওয়া উচিত।
জটিলসব হিসেব-নিকেশের পর একটি সহজ উত্তর আসে।
সেই মতো শুরু হয় প্রস্তুতি।
প্রথমে প্রিস্কুল টিউশন, তারপরে স্কুল আ্যডমিশন, তারপরে টিউশন, তারপর আভিজাত্য প্রদর্শনের জন্য কেনা গাড়ির ই.এম.আই।
এসবের খরচ জুগিয়ে, মাসের শেষে কপালে ভাঁজ।
কিন্তু করতে তো হবেই, যতবড় স্কুল তত চকচকে ভবিষ্যত।
এরপর ফাঁক ভর্ত্তি করার পালা।
মঙ্গলবার সন্ধের দিকে দুঘন্টা ফাঁকা!
গুঁজে দেওয়া হলো আঁকা।
অথবা শনিবার আড়াইটে থেকে চারটে!
চিন্তা কি আছে তো ক্যারাটে।
সমস্তকিছুর পর আত্মতুষ্টির
হাসি হেসে, কপালের ঘাম মুছে চারিদিকে তাকাতেই,
ওমা! ছেলে যে বাংলা বলে!!
দুুচারটে বিলিতি ভাষা না শিখলে রক্ষে আছে!
এতসব করে, স্বপ্নধাবকের প্রাথমিক প্রস্তুতি শেষ হলো।
ধাওয়া করতে শুরু করলো পিঠে ঝোলানো স্বপ্নগুলোকে।
নড়বড় করতে করতে,ঠেকনা দিতে দিতে, কোনোরকমে এগিয়ে চললো।
ওজন সামলাতে না পেরে গোঁত্তা খেয়ে আছড়ে পড়লে, আরো দশটা স্বপ্নধাবক জন্ম নেবে ওই জঞ্জাল থেকে।।
রচনাকাল : ২/১/২০১৯
© কিশলয় এবং ROMEO Fardeen কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।