“কিরে একা একা বসে কেন রনি? পিকনিক পছন্দ হয়নি?” – দীপ রনিকে জিজ্ঞেস করল।
রনি একা একটা গাছের তলায় বসেছিল। তাদের private tuition এর থেকে এই
পিকনিকটা arrange করা হয়েছে। খাওয়া – দাওয়া র পর রনি একা একটা গাছের
তলায় বসেছিল। এমন সময় দীপ এল। রনি একটু হেসে বলল – “নারে, এমনি বসে আছি।”
দীপ ও তার পাশে বসে পড়ল তারপর বলল – না কিছুতো একটা হয়েছেই, না হলে একা
একা বসে এখানে। রনি আস্তে আস্তে বলল হ্যাঁরে, মন টা একটু খারাপই। দীপ রনির কাঁধে
হাত দিয়ে জিঙ্গেস করল কেন রে কি হয়েছে? রনি একটু থেমে বলল- না তেমন কিছু না,
দেখ আমরা এখানে কত মজা করছি, আনন্দ করছি কিন্তু ওদিকে দেখ একটা ছোট্ট ছেলে
চিপস বিক্রি করছে। ছেলেটার বয়স কতই বা হবে, নয়-দশ। আমাদের থেকে কত ছোট,
কিন্তু কত পরিশ্রমী। বেচেঁ থাকার জন্য ওকে কত কিছু করতে হচ্ছে। কিন্তু আমরা?
আমাদের আর কি! পড় – খেলো আর খাও। অবশ্য কজনই বা ঠিক-ঠাক পড়াশুনা করে,
তার জায়গায় অন্য কিছু করে বেড়ায়। কিন্তূ ছেলেটার দিকে দেখ চিপস বেচেঁ আর কটা
পয়সাই বা পায়! আর কজন’ই বা কেনে। হয়ত বাচ্চা বলে কেউ ঠকায়। যদি ওই জায়গায়
আমরা থাকতাম তাহলে কি হত? দীপ বলল- এই জন্য তুই মন খারাপ করছিস? রনি
আস্তে আস্তে বলল আমি কিন্তু আপার প্রশ্নের উত্তর টা পেলাম না। দ্যাখ এই গাছটার ছায়ায়
আমরা দুজনে বসে আছি তাই রোদ লাগছে না। কিন্তু ওই ছেলেটা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে
সেখানে কিন্তু কোন ছায়া নেই। যদি আমাদের পিছনে গাছটা না থাকতো তাহলে আমরাও
ছায়া পেতাম না। দীপ কিছুক্ষন মাথা নিচু করে সব শুনল, তারপর গাছের গুঁড়িতে হেলান
দিয়ে বলল – আমরা কিই বা করতে পারি বল! আমাদের সামর্থ কতটুকু! সত্যি এগুলো
দেখলে খারাপ লাগে কিন্তু আমাদের হাত পা যে বাঁধা। সমাজের একাংশ শোষিত হয়,
এক অংশ শোষণ করে, আর এক অংশ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। রনি বলল- এটা কি আমরা
পাল্টাতে পারিনা? দীপ- হয়ত পারি কিন্তু চেষ্টা করিনা। রনি মাথা নেড়ে বলল - হ্যাঁ
আমাদের এখন সময় কোথায়! স্কুলের পাশের মাঠে দেখিস না ছেলেগুলোর এখন পড়ার সময়
নেই কিন্তু ফুচকা খাওয়া বা খাওয়ানোর সময় আছে। আর কলেজের দাদা দের কথা তো
ছেড়েই দিলাম। অবশ্য দু-একজন ব্যাতিক্রম থাকে। বাদবাকিদের কি আর আশে পাশের পরিবেশ
দেখার সময় আছে। বা কি বা দরকার অন্যের কথা ভাববার। দীপ বলল - কেউ সাহায্য
করবেনা। সবাই সুধু নিজের টাই দেখে। তোর ভাবনা মনের মধ্যেই রয়ে যাবে, তুই এগিয়ে
এলেও তোকে সাহায্য করার জন্য কটা হাত এগিয়ে আসে দেখিস।
১০ বছর পর হটাৎ ডাইরীর পাতা নাড়তে নাড়তে একটা পাতা রনির চোখে পড়ল,
যা পড়ে সেদিন দীপ এর সাথে যা কথা হয়েছিল তা মনে পড়ে গেল তার। সে মুহুর্তটা পুরোটা
না হলেও কিছুটা যেন তার চোখের সামনে ভেসে উঠল। আজ রনি সমাজে প্রতিষ্ঠিত, আর্থিক
অবস্থা অনেক ভালো। কিন্তু ১০ বছর আগে তারযে মন টা ছিল সেটা এখন আর নেই।
ডাইরিটা পড়ে তার সেই মন টা যে হারিয়ে গেছে সেটাই সে অনুভব করল। একবার তার মনে
হল আমার আজ সব আছে, এখনই তো সেই সময়কার ভাবনা গুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়া
সম্ভব। না হলে আমার সেই ভাবনা গুলো মিথ্যে হয়ে যাবে। আবার পরক্ষনেই মনে হল কি
দরকার এইতো ভালো আছি, বেকার ওসব করে কি লাভ। তার চেয়ে নিজের পরিবার পরিজন
নিয়ে স্বচ্ছন্দে থাকাই ভালো। এক টানা পোড়েন চলতে থাকলো রনির মনে। কিন্তু তাহলে তার
কি সেই সময় টাই মিথ্যা হয়ে যাবে,যে দিন সে এগুলো ভেবে ছিল!!
আমরা অনেকে অনেক কিছু ভাবি, অনেক কিছু করতে চাই, কিন্তু হয়ত কোনো কারন বশতঃ
তা বাস্তবে রূপায়িত করা সম্ভব হয়ে উঠে না। আর যখন সেই বাঁধা গুলো থাকে না তখন হয়ত
ইচ্ছেটাই হারিয়ে যায়। ব্যাতিক্রম সবসময় আছে, তবে সবাই যদি উদ্যগী হত, তবে সেই ভালো
চিন্তাগুলোর বাস্তব রূপায়নের সুফলে অনেকের কল্যাণ হত।
রচনাকাল : ৩১/১০/২০১১
© কিশলয় এবং তন্ময় সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।