• সংকলন

    নৈবেদ্য


নৈবেদ্য (তৃতীয় পর্ব)
সায়ন্তী সাহা
দেশ : India , শহর : সিঙ্গুর

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , ডিসেম্বর
প্রকাশিত ২৫ টি লেখনী ২৫ টি দেশ ব্যাপী ১৩৭৮০ জন পড়েছেন।
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর বৈঠকখানায় সকলে গোল হয়ে বসে আছে,ঝন্টুও আছে ওদের সাথে,আলোচনার মুখ্য বিষয় হল সেই অভিশপ্ত রাজবাড়ি,সৌম্যদীপ বেশ উত্তেজিত কন্ঠেই প্রস্তাব দিল,

"চলনা এইবেলা সকলে মিলে প্রাসাদটা একবার দেখে আসি?আচ্ছা আমরা যদি প্রমাণ করতে পারি সবটাই বুজরুকি তাহলে কেমন হয়??"

"কিন্তু সৌম্য আজ তো বাড়ির বাইরে গেলে ঘোর বিপদ,আর ওনারাও তো বারেবারে আমাদের বারণ করছেন।কিছু তো একটা আছেই নাহলে আমাদের খামোখা ভয় দেখিয়ে ওনাদের কি লাভ বল তো? "-বেশ ভয়ার্ত কন্ঠেই কথাগুলো বলল অনিতা।

"আরে কিচ্ছু হবে না রে,ভয় তো প্রাসাদের ভিতর আমরা না হয় বাইরে থেকে দেখেই একবার চলে আসব!তুই চাপ নিস না,"সৌম্যর প্রস্তাবকে সমর্থন করে বলল কল্যাণ।

-"ভাব তো কি দারুণ অ্যাডভেঞ্চার হবে যদি আমরা প্রাসাদের বাইরেই সারাটা রাত কাটাতে পারতাম,চাক্ষুস করতাম প্রত্যেকটা ঘটনাকে,বেশ রহস্য উন্মোচন করতে পারতাম বল,সৌম্যর কথাটা যদি বাস্তবে হতো তাহলে কি মজাই না হতো.....উফ্ ভাবলেই কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে...."-রোমাঞ্চিত হয়েই কথাগুলো বলে ওঠে নবনীতা।

"অ্যাডভেঞ্চারে গিয়ে আমরাই না আবার কোনো বিপদে পরি,ঘরের ছেলে ভালোয় ভালোয় ঘরে ফিরলে বাঁচি"-অনুযোগের সুরেই বলল নিলয়।

"তুইও এইসব ননসেন্স ব্যাপারে বিশ্বাস করিস?তুই না সায়েন্সের ছাত্র?আর বিশ্বাস করবি নাই বা কেন?ভীতুর ডিম তো তুই একটা,শোন তুই বরং বাড়িতেই চুড়ি পরে বসে থাক,এইসব জায়গা অ্যাডভেঞ্চার কোনোটাই তোর জন্য না"ঠেস দিয়ে কথাগুলো বলে সৌম্যদীপ।

খানিকটা অপমানিত হয়েই বলে ওঠে নিলয়-
"কে বলেছ তোকে আমি ভীতু?বেশি পাকা না তুই?আমিও যাব তোদের সাথে।কিন্তু অঘটন কিছু ঘটলে তার দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে তোর....এই বলে দিলাম আমি!"

"এ হুয়ি না মর্দ জ্যাসি বাত!কিচ্ছু হবে না ব্রো!জাস্ট চিল কর তুই"নিলয়ের পিঠটা চাপড়ে দিয়ে বলে কল্যাণ।

কিন্তু নিয়ে ওদের যাবেটা কে?সকলে মিলে তাকায় ঝন্টুর দিকে।সৌম্যদীপ ঝন্টুর কাছে এগিয়ে এসে বলে,
"ঝন্টু নিয়ে যাবি রে আমাদের ওখানে?একমাত্র পারলে তুইই পারবি এটা করতে!চল না রে ঝন্টু..চল না।"

"এ তোমরা কি বলছ দাদাবাবু?তোমরা পাগল হলে না কি?এ আমি পারব না কক্ষণো নয়..তোমাদের মৃত্যুর মুখে আমি ঠেলে দিতে পারব না।কিছুতেই না"

"শান্ত হ ঝন্টু....তুই এত উত্তেজিত হয়ে পরিসনা...আমাদের তুই খালি রাস্তাটা দেখিয়ে দে তাহলেই হবে...তোকে নিয়ে যেতে হবে না..."কথা শেষ হয় না কল্যাণের...ওকে থামিয়ে দিয়ে ঝন্টু বলে ওঠে,
"কি বলছ কি দাদাবাবু সব জেনে শুনে আমি তোমাদের তার পেট অবধি রাস্তাখানা দেখিয়ে দেব?আমি কি শত্তুর নাকিগো?তোমরা আমাদের অতিথি!আর আমি সবটা জেনে শুনে তোমাদের সেই মরণ কূপে পাঠিঞে দেব?না মরে গেলেও তা আমি পারবনিকো।"

"দ্যাখ ঝন্টু যেটা জানিসনা সেটা নিয়ে কথা বাড়াস না..তুই নিজের চোখে তো কিছু দেখিসনি কোনোদিন..দেখেছিস কি?তাহলে এগুলো যে সব সত্যি তুই বুঝলি কি করে...যত্তসব ধাপ্পাবাজি...আর কান খুলে শুনে রাখ তুই নিয়ে না গেলেও আমি নিজে রাস্তা খুঁজে যাব....কিন্তু যাবই.."কড়া ভাষায় কথাগুলো বলে সৌম্যদীপ।

"দাদু বলত তিনিও বিশ্বাস করেননি,আর তার অবিশ্বাসের জন্য প্রাণ হারিয়েছিল গোটা মহলের মানুশ...তোমরাও বিশ্বাস করছ না তো...ঠিক আছে,তোমাদের আমি আটকাবনা,তবে আমার দুটো শর্ত আছে...যেটা তোমাদের মানতে হবে...তবেই আমি তোমাদের নিয়ে যাব...বল রাজী?!"সকলের দিকে তাকাল ঝন্টু।

"তুই নিয়ে না গেলেও আমরা কিন্তু চলে যেতে পারব সেটা মনে রাখিস...তবে শোনা তোর শর্ত...দেখি কি আহামরি শর্ত শোনাবি তুই আমাদের...."-ব্যাঙ্গাত্মক সুরে কথাগুলো বলল সৌম্যদীপ।

"শর্তগুলো খুবই সামান্য...তবে তোমাদেরকে তা মানতে হবেই...নাহলে তোমাদেরই কিন্তু বিপদ হবে,প্রথমত, বিকেলের আগেই তোমাদেরকে  আমার সাথে চলে আসতে হবে,আর দ্বিতীয়ত,প্রাসাদের ভিতরে কোনো ভাবেই তোমরা প্রবেশ করতে পারবেনা কিন্তু।কথা দাও মানবে তো আমার কথা...বলো...বলোনা..মানবে তো"-আশার সুরে সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলল ঝন্টু।

"ঠিক আছে মানার চেষ্টা করব...খুশি তো এবার"-ঝন্টুর কাঁধ ঝাঁকিয়ে কথাগুলো বলল সৌম্যদীপ।"নে নে চল এবার ঝন্টু এমনিতেই বেলা পরে আসছে।"

"ঠিক আছে তোমরা তাহলে তৈরী হয়ে নাও...আমি নিয়ে যাব তারপরে তোমাদের"বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ঝন্টু।

"নে নে নিজেদের জিনিসপত্র সব ব্যাকপ্যাকে গুছিয়ে নে..সাথে টর্চও নিবি সবাই...১৫ মিনিটের মধ্যে তোদের রেডি হয়ে বাইরে দেখতে চাই আমি।আর শোন সঙ্গে কিছু বিস্কুটের প্যাকেট আর জল নিস তো...জানিসই তো আমার আবার মিনিটে মিনিটে খিদে পায়"বলে নিজের পেটে হাত বোলাতে বোলাতে বেরিয়ে গেল সৌম্যদীপ।

১৫মিনিটের মধ্যেই প্রত্যেকে নিজেদের ফোন আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাকপ্যাকে গুছিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে পরল গন্তব্যে।

"এই তবে তোদের সেই বিখ্যাত রাজপ্রাসাদ?" ভাঙাচোরা প্রাসাদটাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল নবনীতা।

"হ্যাঁ দিদি এখানেই শয়তান বাস করে" ভয়ে ভয়ে বলল ঝন্টু।

"তুই একটু বাইরে থাক ঝন্টু,আমরা চট করে ভিতরটা দেখে আসি একবার...এই যাব আর এই আসব"ঝন্টুকে বাইরে রেখেই সামনের দিকে এগিয়ে চলল কল্যাণ,নবনীতা আর সৌম্যদীপ।

"করো কি করো কি তোমরা দাদাবাবু??বাবা যে তোমাদের মানা করেছে এমনধারা করতে।আর তোমরা যে আমাকে কথা দিলে যে তোমরা ভিতরে যাবে না..."-হা হা করে ওঠে ঝন্টু।

-"আচ্ছা ঝন্টু ভিতরে না গেলে কিকরে বুঝব বল যে শয়তান জেগে আছে না ঘুমিয়ে পরেছে..তুই চাপ নিস না...তোদের শয়তান আমাদেরকে ভয় পায় রে...বুঝলি...তুই শুধু একটা কথা বল..কি করে বুঝব আমরা যে সেই বোগাস টাইম....মানে তোদের কথা মতো সেই ভয়ঙ্কর সময় শুরু হয়েছে?"জানতে চায় নবনীতা।

"যখন সেই সময় শুরু হবে না  তখন প্রকৃতিও জানান দেবে তার আগমনের....সারা আকাশ রক্তের মতো লাল হয়ে যাবে আর...আর আকাশে উড়তে থাকবে শকুনের দল!!"কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে ঝন্টু।

"দেখ ঝন্টু আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখ আকাশের রং এখন কিন্তু ঘন নীল,তারমানে আমাদের হাতে অঢেল সময় আছে,তুই এখানে অপেক্ষা কর আকাশের রং পরিবর্তনের আগেই আমরা ফিরে আসব,আর যদি দেখিস আসছিনা,তবে তুই ফিরে যাবি।বুঝলি?"ঝন্টুকে বুঝিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায় সৌম্যদীপ।

"তোমাদের বিপদের মধ্যে একা রেখে আমি কি করে বাড়ি ফিরে যাব?বাবাকেই বা কি বলব?তোমরা শহরের লোকেরা বুঝি এমনই???কথা দিয়ে কথা রাখোনা তাইনা??"-কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে ওঠে ঝন্টু।

"এই শোন আমরা তোর থেকে না অনেক বড়ো আর আমরা নিজেদের খেয়াল নিজেরাই রাখতে পারি।খুব শীঘ্রই চলে আসব।আর হ্যাঁ তুই খুব ছোটো,তুই বিপদ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবি না,তাই তুই চলে যাস।আর আমরা পাঁচজন কিন্তু,আমরা যে কোনো বিপদেরই একসাথে মোকাবিলা করতে পারব...বুঝলি"-কথাগুলো বলেই কল্যাণ চলে যায়।ওদের তিনজনের পিছনে পিছনে ভয়ার্ত চিত্তে এগিয়ে যায় নিলয় আর অনিতাও।চোখে মুখে একরাশ ভয় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ঝন্টু,কপালে হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করে ঝন্টু,
"ভগবান দাদাবাবুদের মতিগতি ঠিক করে দাও গো...ওনাদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়।"
রচনাকাল : ২৬/১/২০২০
© কিশলয় এবং সায়ন্তী সাহা কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 19  France : 4  Germany : 1  India : 102  Ireland : 17  Saudi Arabia : 4  Spain : 1  Sweden : 9  Ukraine : 6  
United States : 119  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 19  France : 4  Germany : 1  
India : 102  Ireland : 17  Saudi Arabia : 4  Spain : 1  
Sweden : 9  Ukraine : 6  United States : 119  


© কিশলয় এবং সায়ন্তী সাহা কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
নৈবেদ্য (তৃতীয় পর্ব) by Sayanti Saha is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৩৭৭৫৯২