-"মহারাজ আপনার পুত্রেষ্ঠ্যি যজ্ঞ কিছুক্ষণের মধ্যেই সুসম্পন্ন হতে চলেছে,আপনার আরাধনায় শয়তান আজ প্রসন্ন,যজ্ঞকুণ্ডে অন্তিম আহুতি দানের পূর্বে আমি আপনাকে পুনরায় স্মরণ করাতে চাই আপনি অন্তিম আহুতি দানের মাধ্যমে প্রতিজ্ঞা করছেন যে আজ থেকে শয়তানের ক্ষুধা নিবারণের সমস্ত দায়িত্ব আপনার বংশের।আজ এই মাহেন্দ্রক্ষণে রাজবাড়ীতে পদার্পণ করবেন স্বয়ং শয়তান এবং আজীবন এই বাড়িতেই তিনি বিরাজ করবেন,অন্তিম আহুতি দানের সঙ্গে সঙ্গেই আপনার বংশ চিরতরে শয়তানের গোলাম হয়ে যাবে।আপনি প্রস্তুত তো মহারাজ?"শয়তানের উপাসক প্রেতসিদ্ধ আসুরের গম্ভীর স্বরে গম্-গম্ করে উঠল যজ্ঞস্থল।
-"বংশরক্ষার জন্য আমি যেকোনো শর্তে প্রস্তুত।আর শয়তানের ক্ষুধা নিবারণ কি এমন আহামরি ব্যাপার?তারজন্য তো আমি নয়জন ব্রাহ্মণ বালকের বন্দোবস্ত করেইছি,শয়তানকে প্রসন্ন করে এবার আমার পুত্রলাভ হলেই আমি খুশি।"এই বলে কপালে দুটি হাত ঠেকিয়ে রাজা প্রতাপাদিত্য যজ্ঞকুণ্ডে অন্তিম অাহূতি দান করলেন।
-"বেশ!বেশ!তবে আপনি কি বুঝলেন তা আমি জানি না,কিন্তু মনে রাখবেন শয়তানের খিদে মেটানো এত সহজ কাজ নয়!সকলকে শীঘ্রই এই প্রাসাদ ত্যাগ করত বলুন,হাতে সময় বড়ো কম,শয়তান একবার এসে গেলে তার হাত থেকে কেউ কিন্তু আর নিস্তার পাবে না!!"এই বলে অট্টহাস্যে ফেটে পরল আসুর।রাজার নির্দেশে নয়জন বালক ব্যাতীত সকলে সেই মুহুর্তেই রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করল।
"আকাশের দিকে তাকান রাজা,চোখ মেলে দেখুন আকাশের রং"-আসুরের নির্দেশে আকাশের দিকে তাকিয়ে আশ্চর্য হয়ে যান প্রতাপাদিত্য।আকাশের বর্ণ হঠাৎ এমন রক্তিম হয়ে উঠল কিভাবে?কেউ যেনো আকাশকে রুধীরস্নাত হতে বাধ্য করেছে।
-"এই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ,আকাশের এই রক্তিমবর্ণই আপনাকে খবর দেবে শয়তানের আগমন বার্তার,মনে রাখবেন প্রতি একশত বছরে আসবে এই মাহেন্দ্রক্ষণ,যখন সূর্যসহ গোটা সৌরমন্ডলের প্রতিটি গ্রহ থাকবে এক সরলরেখায়,সেদিনই নিদ্রাভঙ্গ হবে শয়তানের আর সেদিনই সে আপনার বংশের কাছ থেকে গ্রহণ করবে তার আহার্য,প্রস্তুত থাকবেন সেদিন।"-আসুরের কথাটা ঠিকমতো বুঝতে না পেরে রাজা বাধ্য হয়েই জিজ্ঞেস করলেন,
-"আমি তো ইতিমধ্যেই শয়তানকে ভোগ উৎসর্গ করেছি,তাহলে আবার কোন ভোগের কথা আপনি বলছেন আমি তো তার কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা।"
"বুঝতে পারছেন না বললে তো চলবে না রাজা,যে দায়ভার আপনি স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছেন তা তো আপনাকে নির্বাহ করতেই হবে,চেয়ে দেখুন আপনার প্রাসাদের দিকে"এই বলে আসুর রাজবাড়ীর দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলেন।মহারাজ প্রাসাদের দিকে চেয়ে হতবাক্ হয়ে গেলেন,একি দেখছেন তিনি?এও কি সম্ভব!!আসুর আবার বলে উঠলেন,
-"কি? অবাক হচ্ছেন তো?নিশ্চয়ই ভাবছেন কোন মন্ত্রবলে আপনার প্রাসাদের মূল ফটকসহ অন্যান্য দরজা-জানলা সব উধাও হয়ে গেল?মনে রাখবেন যতক্ষণ এই যোগ চলবে ততক্ষণ বাইরে থেকে প্রাসাদের অন্দরে না তো কেউ প্রবেশ করতে পারবে না তো ভিতর থেকে কেউ বাইরে বেরোতে পারবে,পুরো প্রাসাদ বদলে গিয়ে এমন এক গোলকধাঁধা রচনা করবে যে ভিতরের কেউ নিজেকে রক্ষা করতে পারবেনা,ভিতরে উপস্থিত প্রত্যেক জীবই শয়তানের আহারে রূপান্তরিত হবে।যোগ শেষ হবার পূর্বমুহূর্তে নিজের আহার সমাধা করে শয়তান আবার পরবর্তী একশত বছরের জন্য নিদ্রামগ্ন হবে।"
প্রতাপাদিত্য আসুরের পায়ে লুটিয়ে পরে হাতজোড় করে বললেন,
-"এর থেকে নিস্তার পাওয়ার কি আর কোনো রাস্তাই নেই?আমি তো ভেবেছিলাম শয়তানের একবারের গ্রাসের আয়োজন করতে হবে,প্রতিবার শয়তানের আহার আমি জোগান দেব কিভাবে?"
-"বন্দোবস্ত তো আপনাকে নিজেকেই করতে হবে রাজন,কিভাবে করবেন তা আপনি নিজে জানেন,শয়তানকে স্বেচ্ছায় আহ্বান করেছেন আপনি,এতে অামি কি করতে পারি?শয়তান যা দেয় তার থেকে দশগুণ বেশী উসুল করে নেয়।এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা ছাড়া আপনাদের হাতে বাঁচার আর কোনো উপায় নেই।এই দিনটা অন্তত সতর্ক থাকবেন আর ভুলেও যোগ শুরু হবার পর মহলে থাকবেন না,নাহলে স্বয়ং ভগবানও আপনাদের বাঁচাতে পারবে না।'
কথাটা শেষ করেই নিজ গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলে আসুর।পিছন থেকে রাজার কাতরপ্রার্থনা ভেসে আসে,
-"আমাকে এভাবে বিপদের মধ্যে একা ফেলে যাবেন না,একটা অন্তত উপায় বলে যান আপনি,কিভাবে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাব সেই পথ আমায় বাতলে দিন!!শুনছেন?শুনে যান"কিন্তু সেই আকুল প্রার্থনায় কর্ণপাত করার কোনো প্রয়োজনবোধ করেন না শয়তানের উপাসক,প্রেতসিদ্ধ আসুর।
রচনাকাল : ২৬/১/২০২০
© কিশলয় এবং সায়ন্তী সাহা কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।