কালী কালী মহাকালী দেবী আগমনী…..শুভ দীপাবলীর
আগমনী স্তবগাথা- পঞ্চম পর্ব
তথ্য সংগ্রহ, সম্পাদনা ও স্তোত্রপাঠ-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
হিন্দু পুরাণ মতে দুষ্টের দমন ও সত্যসুন্দরের জয় সূচিত করতেই সমস্ত দেশে লক্ষ্মীপুজো, দীপান্বিতা কালীপুজো বা শ্যামাপুজো বিশেষ জনপ্রিয়। আশ্বিন মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপান্বিতা কালীপুজো ছাড়াও আমাদের বাংলায় মাঘ মাসের কৃষ্ণা চতুদর্শীতে রটন্তী কালীপুজো এবং জৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণা চতুদর্শীতে ফলহারিণী কালীপুজো বিশেষ ভাবে উল্লিখিত।
দেবতা তথা শুভাশুভ শক্তির সম্মিলিত রূপ।
“ওঁ করালবদনাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাম।
কালিকাংম দক্ষিণাং দিব্যাং মুণ্ডমালা বিভূষিতাম।।”
প্রাক আর্য যুগ থেকেই ভারতে শক্তি উপাসনা প্রচলিত। সেই যুগে মানুষ প্রাকৃতিক শক্তির ভয়াল রূপকে ঠিকমতো ব্যাখ্যা করতে পারত না। প্রাকৃতিক নানান দুর্যোগের কাছে তারা তখন নিতান্ত অসহায়। সেই হেতু তারা সেই সমস্ত অলৌকিক ও দুর্জয় শক্তিকে দেবতাজ্ঞানে পুজো করত। প্রকৃতিকে স্বয়ং শস্যশ্যামলা মাতৃরূপে তথা মাতৃশক্তিরূপিণী জগদম্বা রূপে কল্পনা করা হত। শ্রীশ্রীচণ্ডীতেও মহামায়াকে পরাশক্তির আধাররূপিণী রূপে কল্পনা করা হয়েছে। কালিকাপুরাণে আমরা দেখি, আদি শক্তিরূপে তিনি যোগীদের মন্ত্র ও মন্ত্রের মর্ম উদঘাটনে তত্পর। পরমানন্দা সত্ত্ববিদ্যাধারিণী জগন্ময়ী রূপ তাঁর। বীজ থেকে যেমন অঙ্কুরের নির্গমন হয় এবং জীবের ক্রমবিকাশ হয় তেমনই সেই সর্ব সৃজনই তাঁর সৃষ্টিশক্তি। মুণ্ডকোপনিষদে মহাকালী স্বয়ং কালী, করালি, মনোজবা, সুলোহিতা, সধুম্রবর্ণা, বিশ্বরূচি, স্ফুলিঙ্গিনী, চঞ্চলজিহ্বা ইত্যাদি নামে ভূষিতা হন।
“মহাকালেন চ সমং বিপরীতরতাতুরাম।
সুপ্রসন্নূদনাং স্মেরানন সরোরুহাম।”
নানা বৈচিত্রের সমাহারে কালী মাতাকে আবাহন করা হয় কারণ তিনি সনাতনী, কাত্যায়নী, মহামায়া, অপরাজিতা। চণ্ডী, কালী, শতাক্ষী, কৌশিকী, ভীষ্মা, ভামরী, ভৈরবী, শাকম্ভরী, কপালিনী, রক্তদন্তিকা, বিন্ধবাসিনী, দুর্গা। তিনি ‘শক্তিরূপেণ সংস্থিতা।’
আসুন, আমরা সকলেই তারা মায়ের শক্তির আরাধনায় পূজোর আনন্দে মেতে উঠি। মাত্র আর কয়েক দিন বাকি। শ্যামা মায়ের আগমনে দিকে দিকে কালো অন্ধকার মুছে যাক। দীপাবলীর উজ্জ্বল আলোকমালায় ভরে উঠুক চতুর্দিক। তাই দিকে দিকে চলছে পূজার প্রস্তুতি। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!
কালী কালী মহাকালী দেবী আগমনী…..দীপাবলী সংকলন-১৪২৬
দীপাবলীর আগমনী কবিতা-৫
কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী।
জগজ্জননী মহাকালী তুমি তারা মাগো ইচ্ছাময়ী,
খড়্গ ফেলে দাও মা কালী তুমি যে মা দয়াময়ী।
শ্যামা মায়ের দয়া হলে,
শান্তি আসে ধরার তলে,
ভাসি আমি নয়ন জলে, কৃপা করো মা কৃপাময়ী।
অভয় মন্ত্রে দীক্ষা লয়ে যেন হতে পারি বিশ্বজয়ী।
জগজ্জননী মহাকালী তুমি তারা মাগো ইচ্ছাময়ী,
খড়্গ ফেলে দাও মা কালী তুমি যে মা দয়াময়ী।
তারা নামের অভয়মন্ত্র,
জাগিয়ে রাখো হৃদয়যন্ত্র,
জানি না তব তন্ত্র মন্ত্র, মাগো শক্তিরূপা গুণময়ী।
খড়্গ ফেলে দাও মা কালী তুমি যে মা দয়াময়ী।
জগজ্জননী মহাকালী তুমি তারা মাগো ইচ্ছাময়ী,
খড়্গ ফেলে দাও মা কালী তুমি যে মা দয়াময়ী।
মন সঁপেছি রাঙা পদে,
বিধাত্রী মা তুমি বরদে,
মাকে আমি রাখি হৃদে, তুমি মাগো সর্বজয়ী।
তুমি তারা তুমি কালী তুমিই মা আনন্দময়ী।
জগজ্জননী মহাকালী তুমি তারা মাগো ইচ্ছাময়ী,
খড়্গ ফেলে দাও মা কালী তুমি যে মা দয়াময়ী।
কবি লক্ষ্মণ করে আশা,
করো না মাগো নিরাশা,
নইলে বৃথা ভবে আসা, মা তারা তারক-ব্রহ্মময়ী।
কালরাত্রি মহাকালী মা তুমি মাগো করুণা-ময়ী।
রচনাকাল : ২১/১০/২০১৯
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।