কালী কালী মহাকালী দেবী আগমনী…..শুভ দীপাবলীর
আগমনী স্তবগাথা- দশম পর্ব
তথ্যসংগ্রহ, সম্পাদনা ও স্তোত্রপাঠ-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
মহাতীর্থ সিদ্ধপীঠ তারাপীঠে কালী পুজো উপলক্ষে ছাগ বলি দেওয়া হয়। বহু ভক্ত মানত করে বলি দিয়ে থাকেন। মা তারাকে শ্যামা রূপে পুজো দিতে দূরদূরান্তের বহু ভক্ত সকাল থেকে ভিড় করতে থাকে।
কালীপূজার দিনে মা কালী রূপে তারা মাকে পুজো করা হয়।
সব দেবীর উর্দ্ধে মা তারা। তাই তারাপীঠে অন্য কোনও দেবী মূর্তি পুজোর চলন নেই। মা তারাকে সামনে রেখেই সমস্ত দেবী মূর্তির পুজো করা হয় সিদ্ধপিঠ তারাপীঠে।
অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দশক থেকে এই প্রথা চলে আসছে। কালী পুজোর দিনও তাই মা তারাকেই শ্যামা রূপে পুজো করা হল। এদিন মায়ের নিত্য পূজার্চনা ছাড়াও শ্যামা রূপে মায়ের বিশেষ আরাধনা করা হয়। শনিবার আর পাঁচটা দিনের মতো মা তারাকে ভোর বেলা স্নান করানো হয়। এর পরেই মা তারাকে অষ্টধাতুর মুখাভরন, মুণ্ডমালা, মুকুট, সোনার অলঙ্কার, শোলা ও ফুল-মালা দিয়ে শ্যামা রূপে সাজানো হয়। এরপর শুরু হয় মঙ্গলারতি। মায়ের প্রথম পুজোর সঙ্গে দেওয়া হয় শীতলা ভোগ। আর পাঁচটা দিনের মতো এদিনও মায়ের নিত্যভোগ হয়। সন্ধ্যারতির আগে মা’কে পুনরায় ফুল মালা দিয়ে সাজানো হয়।
শ্যামা পুজোর শুভক্ষণে নাটোরের পুরোহিত এবং মন্দিরের পালাদার সেবাইত পুজোয় বসেন। একদিকে চলে চণ্ডীপাঠ, অন্যদিকে চলে পুজো। পুজো শেষে মায়ের আরতি এবং দ্বিতীয়বার ভোগ নিবেদন করা হয়। ভোগে পোলাও, খিচুড়ি, মাছ, মাংস, ভাজা মিষ্টি, পায়েস দেওয়া হয়। ঐদিন কালী পুজো উপলক্ষে সেবাইতদের বাড়ির মেয়েরা মন্দিরের চারিদিক মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে আলোকিত করে তোলেন। সারারাত মোমবাতি আর মাটির প্রদীপে আলোকময় হয়ে থাকে শ্মশান চত্বর। সারা রাত ধরে চলে যজ্ঞ। শ্মশানের বিভিন্ন জায়গায় সাধু সন্তরা ভক্তদের মঙ্গল কামনায় যজ্ঞ করে থাকেন। কেউ কেউ শ্মশানের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া দ্বারকা নদীতে প্রদীপ ভাসিয়ে সংসারে সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করেন”।
কালী পুজো উপলক্ষে ছাগ বলি দেওয়া হয়। বহু ভক্ত মানত করে বলি দিয়ে থাকেন। মা তারাকে শ্যামা রূপে পুজো দিতে দূরদূরান্তের বহু ভক্ত সকাল থেকেই মন্দিরে এসে ভিড় করেন। সারাদিনই মাকে শ্যামা রূপে পুজো দেওয়া হয়। সারা রাত খুলে রাখা হয় মন্দিরের দরজা।
মা আসছেন। শ্যামা মায়ের আগমনে দিকে দিকে কালো অন্ধকার মুছে যাক। দীপাবলীর উজ্জ্বল আলোকমালায় ভরে উঠুক চতুর্দিক। কবিতা আসরের সবাইকে জানাই শুভ দীপাবলির শুভেচ্ছা।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!
কালী কালী মহাকালী দেবী আগমনী…..দীপাবলী সংকলন-১৪২৬
দীপাবলীর আগমনী কবিতা-১০ (শ্যামা সংগীত)
কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
মহাকালী মহামায়া, দাও মা তব রাঙা চরণ,
ব্রহ্মাণী রূপিনী শিবা দাও মা মোরে দরশন।
ভবের হাটে খেলতে এসে,
মরলাম ডুবে বিষয় বিষে,
মাগো তোমায় পুজি কিসে অশ্রু ভরা দু’নয়ন।
মহাকালী মহামায়া, দাও মা তব রাঙা চরণ।
মহাকালী মহামায়া, দাও মা তব রাঙা চরণ,
ব্রহ্মাণী রূপিনী শিবা দাও মা মোরে দরশন।
তারা নামে ডাকো মাকে,
ঐ নামে মহাশক্তি থাকে,
চরণে জবাফুল রেখে করো মন সাধন ভজন,
মহাকালী মহামায়া, দাও মা তব রাঙা চরণ।
মহাকালী মহামায়া, দাও মা তব রাঙা চরণ,
ব্রহ্মাণী রূপিনী শিবা দাও মা মোরে দরশন।
মন সঁপেছি রাঙা চরণে,
তাই নাইকো ভয় মরণে
কাটে মহাভয় তব স্মরণে জপি নাম সর্বক্ষণ,
মহাকালী মহামায়া, দাও মা তব রাঙা চরণ।
মহাকালী মহামায়া, দাও মা তব রাঙা চরণ,
ব্রহ্মাণী রূপিনী শিবা দাও মা মোরে দরশন।
ভেবে বলে কবি লক্ষ্মণ,
চরণছাড়া হয়ো না মন,
করলে পূজা রাঙা চরণ, দুঃখ হবে নিরসন,
মহাকালী মহামায়া, দাও মা তব রাঙা চরণ।
রচনাকাল : ২৬/১০/২০১৯
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।