কয়েক বছর পর আমার প্রাপ্তি হয়, জীবনে ওই আমার একমাত্র পাওয়া, তাই আমি নাম দিয়েছিলাম প্রাপ্তি। ও তোকে তো বলা হয়নি প্রাপ্তি আমার মেয়ে, এ বছর তেরো তে পা দিয়েছে। তাতে প্রাপ্তির বাবা মানে প্রলয়ের অত্যাচার আরো বেরে যায়। ওর নাকি ছেলে দরকার ছিলো, যে ওর বংশ আগে বাড়াবে, অনেক বার প্রাপ্তি কে মেরে ফেলার চেষ্টাও করেছিলো, প্রত্যেক বার আমি মাঝখানে আসায় সফল হয়নি। তবে যতই হোক স্বামী তাই ওকে ছেড়ে চলে আসার কথা ভাবিনি কখনো। সমস্ত রকম অত্যাচার সহ্য করেও চেষ্টা করতাম সংসার টাকে বাঁচাতে কিন্তু গত একমাস আগে ওর কুনজর পড়লো আমার প্রাপ্তির দিকে। বললো "আমার ছেলের দরকার ছিলো যে আমার বংশ উদ্ধার করতে পারবে, মেয়ে যখন হয়েছে ওকে কিছু তো একটা কাজে লাগতে হবে, আমার গাছের ফল আমি আগে টেষ্ট করবো"। ইচ্ছা করছিলো ওকে তখনি খুন করে ফেলতে, মানুষ নোংরা হতে পারে জানতাম তাই বলে এত নোংরা কল্পনাও করিনি তা আমি। তারপর ভাবলাম প্রাপ্তিটাকে মানুষ করতে হবে আমি যদি খুনের দায়ে জেলে যাই মেয়েটাকে আমার দেখার লোক হবে না। তাই সেই মূহুর্তে প্রাপ্তিকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে পড়লাম। কোথায় যাবো কি করবো বুঝতে পারছিলাম না হঠাৎ পথে ববির সাথে দেখা। মনে আছে তোকে স্কুলের ববি কে? মাথায় ছেলেদের মত ছোটো ছোটো চুল ছিলো। একটু ছেলেদের মতই হাবভাব ছিলো? ও আমাকে চিনতে পেরে কাছে এসে আমার মুখ চোখের অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলো "কি হয়েছে?"
প্রথম দু তিন বার জিজ্ঞেস করতে আমি কিছু বললাম না। তারপর সবটা বললাম। ববি বললো "যতদিন না তোর একটা থাকার জায়গার ব্যবস্হা হয় তুই আমার বাড়িতেয় থাকতে পারিস যদি কিছু মনে না করিস"। আমি বললাম তা আবার হয় নাকি? ববি বললো ও হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্স করে এখন ব্যাঙ্গালোরের একটা হোটেলে চাকরি করে, ওখানেই বাড়ি কিনে বাবা মায়ের সাথে থাকে, কলকাতার বাড়িটা তাঁলাবন্ধ হয়ে ফাঁকা পড়ে থাকে।ভাবলাম তবে তাই করি,ভগবানেরও হয়ত তাই ইচ্ছা, তা না হলে হঠাৎ ববির সাথে দেখাই বা হবে কেন এত বছর পর?ওর বাড়িতেই থাকি এখন।
পাশের দোকান টায় একদিন প্রাপ্তির জন্য বিস্কুট আনতে গেছিলাম। তোর কেয়ারটেকার কে দাঁড়িয়ে তার কিছু বন্ধু কে বলতে শুনলাম "তোদের জানাশুনা কোনো হেল্পার থাকলে বলিস তো,আমার একটা হেল্পার খুব দরকার। কাজ তেমন কিছু না ওই রাজমিস্ত্রির হাতে হাতে কাজ করতে হবে"। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম আমি করবো। কেয়ারটেকার আপত্তি জানালো না। কোনো কাজই তো ছোটো নয় তাই আপাতত যা পেয়েছি করছি।পয়ত্রিশ বছরের ওপরে বয়স হলে এমনিতে চাকরি পাওয়াটা মুসকিল। চাকরি খোঁজার মত অতো সময় আমার হাতে ছিলো না ওই সময়, আমার একটা কাজের দরকার ছিলো তাড়াতাড়ি। মেয়েটাকে তো খাওয়াতে হবে।তাই.....
জানিস মাঝে মাঝে ইচ্ছা করতো তোকে ফোন করি কিন্তু ভাবতাম তুই বোধহয় বড়ো অভিনেত্রী হয়ে গেছিস। সূর্যের সাথে জমিয়ে সংসার করছিস, আমি অযাথা নিজের দুংখের খবর দিয়ে তোকে দুংখি করবো না থাক। তাই কখনো যোগাযোগ করিনি এত বছরে তোর সাথে। আর এরকম একটা জায়গায় কাজ করছি দেখে তুই কি ভাববি এটা ভেবে আমি তোকে চেনা দিতে চাইছিলাম না। আমি তো জানতাম না যে এই বিল্ডিং এর প্রোমোটার তুই। তাছাড়াও প্রলয়ের মারের ফল স্বরুপ আমার মুখে যে অসংখ্য কাঁটা ছেড়ার দাগ হয়ে আছে সেগুলো দেখাতে লজ্জা পাচ্ছিলাম। জানিস মাঝে মাঝে আমি টিভির চ্যানেল গুলো ঘুরিয়ে তোকে খুঁজতাম।অভিনেত্রী হয়ে তোকে কেমন দেখতে লাগে দেখতে ইচ্ছা করতো খুব। যদি তোকে একবার দেখতে পাই, কিন্তু".........
অপরুপা বললো "কয়েক বছর আগে মাঝে একবার রাস্তায় তোর বোনের সাথে দেখা হয়েছিলো।ওর থেকে তোর শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা নিয়ে গেছিলাম, ওখান কার লোক জন বললো তোরা ওখানে আর থাকিস না। তোকে খুঁজে পাওয়ার একটাই রাস্তাটাও বন্ধ হয়ে গেলো"।
পাঁপড়িঃ "হ্যাঁ, প্রলয়ের অফিসে আসতে অসুবিধা হতো ওখান থেকে তাই কলকাতা তে ফ্ল্যাট কিনে চলে আসে, বাবার বাড়ির সাথে আমি কোনো যোগাযোগ না রাখায় বোন জানতো না তা"।
অপরুপাঃ "যা হয়েছে হয়েছে, এবার যা হবে সব ভালো হবে দেখবি। তোর মেয়েকে আমরা মানুষের মতন মানুষ করবো, প্রলয়কে দেখিয়ে দেব ছেলে মেয়ের মধ্যে কোনো তফাৎ হয় না। আর আসল কথাটাই তো তোকে বলা হল না। তোর মনে আছে সেই স্কুল জীবন থেকেই আমাদের দুজনারই একটা ইচ্ছা ছিলো? যে যদি কোনো দিন সম্ভব হয় সমাজের জন্য কিছু করবো। সেই সব অসহায় মানুষের পাশে থাকবো যাদের পাশে সচারচার কেউ থাকে না?"
পাঁপড়িঃ "হ্যা মনে আছে তো কিন্তু সেটা আর করতে পারলাম কই?নিজেয় আমি আজ এত অসহায়......"
রচনাকাল : ৬/১/২০২০
© কিশলয় এবং সাথী ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।