পাঁপড়ি এবার আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না। কেয়ারটেকারকে জিজ্ঞাসা করলো "ম্যাডাম কি বেহালার বাড়িতেই থাকেন?" কেয়ারটেকার বললো "হ্যাঁ"।পাঁপড়ি এবার সোজা গিয়ে উপস্থিত হলো বেহালায় তাদের পুরানো পাড়ায় অপরুপাদের বাড়ি। কলিং বেল বাজাতেই মধ্যা বয়স্কা কাজের মহিলা দরজা খুলে দিলো। পাঁপড়ি কোনো কিছু না বলে হন্ত-দন্ত হয়ে ভিতরে ঢুকে পরলো এবং গিয়ে দেখলো অপরুপা তার শোয়ার ঘরে দিব্বি চেয়ারে বসে কফি খাচ্ছে আর তার পছন্দের ভুতের ফিল্ম দেখছে। পাঁপড়ির চোখ ছলছল করে উঠলো। কিছু না বলে অবাক দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে রইলো চুপ করে।অপরুপা বললো "খুব অবাক হচ্ছিস তাই না? কি করবো বল, একমাত্র আমার শরীর খারাপ শুনলেই তুই আর অচেনা হয়ে থাকতে পারবি না এটা তো আমি জানতাম। ছোটো বেলা থেকেই তো তোকে চিনি আমি। তাই কেয়ার টেকারকে আমি বলেছিলাম আমার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে, শরীর খুব খারাপ এই মিথ্যা কথাটা বলতে ওখানে গিয়ে বিশেষ করে তোর সামনে।" পাঁপড়ি এবার আর চোখের জল আটকে রাখতে পারলো না,ছুটে গিয়ে অপরুপাকে জরিয়ে ধরে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো। প্রায় পাঁচ মিনিট পর অপরুপা বললো "হয়েছে তোর কান্না-কাটি, কাঁদছিস কেন সেটা তো বল?" পাঁপড়ি বললো "এত বছর পরও তুই আমাকে ভুলিসনি, আর তোর অ্যাক্সিডেন্টের খবর শুনে আমি সত্যি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম, দেখলাম এসে তুই একদম ঠিক আছিস তাই আনন্দে চোখে জল চলে এলো।" অপরুপা বললো "এবার বল তো তুই হঠাৎ করে হারিয়ে গেছিলিস কেন? আর এত বছর পর আমাকে দেখেও এরকম না চেনার ভান কেন করছিলি? তুই এত পড়াশুনা জানা সত্বেও শ্রমিকের কাজই বা করছিস কেন?
পাঁপড়ি মৃদু গলায় বললো "এত বছর ধরে নিজের মধ্যে অনেক কথা লুকিয়ে রেখেছি, তোকে আজ আমি সব বলবো তার আগে তুই বলতো তোর তো অভিনেত্রী হওয়ার কথা ছিলো, প্রোমোটার কি করে হলি? আর তোর বাবা মানে কাকু, সূর্য কাউকে দেখছি না তো? কোথায় সব?
অপরুপা একটু অন্যমনস্কা হয়ে বললো "জন্মের পর থেকে মাকে কখনো দেখিনি, বাবার মুখে শুনেছি আমাকে জন্ম দিতে গিয়েই নাকি মায়ের মৃত্যু হয়,বাবা কখনো আমাকে মায়ের অভাব বুঝতে দেয়নি,কোলে পিঠে করে একায় মানুষ করেছে,যখন যা চেয়েছি তাই দিয়েছে,আমার সমস্ত আবদার পুরণ করেছে, কোনো কিছু তেই আমাকে আটকায়নি কখনো এগুলো তো তোর জানা। তোরা এখান থেকে নতুন বাড়িতে চলে যাওয়ার প্রায় একবছর পর সূর্য কে নিয়ে আসি বাবার সাথে আলাপ করাতে,সূর্য চলে যাওয়ার পর সেদিন বাবা আমাকে একটা কথা বলেছিলো, জানিনা বাবা কি ভেবে বলেছিলো কথাটা। বলেছিলো সূর্যের আলো না হলে আমরা অচল ঠিকি কিন্তু সূর্যের বেশি কাছেও যাওয়া উচিত নয়, সূর্যের বেশি কাছে যে যায় সে পোড়ে। বাবা কে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন তুমি এরকম বললে? বাবা বলেছিলো কিছু না রে পাগলি। আমি তো আকাশের সূর্যের কথা বললাম, তোর সূর্য তো মানুষ ওর ওতো তেজ কোথায়? তার পর থেকে সূর্য প্রায় আসা যাওয়া করতো। ইতিমধ্যে বাবার হার্টের অসুখ ধরা পরে,মনের উপর বেশি চাপ দেওয়া যাবে না ডাক্তার বাবু জানিয়ে দেয়। প্রায় দু-বছর পর একদিন বাবা সূর্য কে ডেকে পাঠায়, কিন্তু সূর্য কে হঠাৎ করে কেন বাবা ডেকে পাঠায় সেটা আমারো অজানা ছিলো। বাবার ঘরে সূর্য আর বাকা কথা বলছে দেখে আমি জল খাবার আনতে চলে যাই। জলখাবার নিয়ে বাবার ঘরে ঢুকতে যাবো এমন সময় বাবাকে বলতে শুনলাম অনেক দিন তো হলো এবার বিয়ের কথা ভাবলে কিছু সূর্য? বিয়ের কথা শুনে আমি ভিতরে না ঢুকে দরজার বাইরেই দাড়িয়ে থাকলাম। বাবা আরো বললো জানো তো আমার হার্টের অসুখ ধরা পড়েছে তাই আমার কিছু একটা হয়ে যাওয়ার আগেয় তোমাদের একসাথে দেখে যেতে চাই। সূর্য উত্তর দিলো আমি তো প্রস্তুত আছি, আপনি কাল বললে কালই বিয়ে করে নেবো শুধু আপনি আপনার সব সম্পত্তি আমার নামে লিখে দিন। একহাতে সম্পত্তির উইল দেবেন আর একহাতে আমি অপরুপার সিঁথিতে সিঁন্দুর পড়াবো। দেখবেন অপরুপা যেন না জানে এই কথাটা, আসলে কি বলুনতো ও তো জানেই না ওকে ভলোবাসাটা আপনার সম্পত্তি পাওয়ার একটা উপায় আমার কাছে। আসলে আমি ওকে না আপনার সম্পত্তি কেই ভালোবাসি। কথাটা শোনা মাত্রই বাবার হার্টঅ্যাটাক হলো, বাবা কে হসপিটালে নিয়ে যেতে যেতে রাস্তাতেই মৃত্যু হলো।
রচনাকাল : ৬/১/২০২০
© কিশলয় এবং সাথী ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।