আমি তখন বুঝলাম সত্যি সূর্যের বেশি কাছে যাওয়ার যে চেষ্টা করে সে পুড়ে যায়। সূর্যকে আমি অবশ্য জানতে দেইনি যে আমি সব জানি। চাইলে হয়তো অনেক কিছু বলতে পারতাম কিন্তু যাকে ভালোবাসি তার সাথে কোনো রকম ঝগড়া করে সম্পর্কের ইতি টানতে আমি চাইনি। শুধু একদিন বাড়িতে ডেকে এনে বলেছিলাম বাবার প্রোমোটারি ব্যবস্হা সামলাতে হবে আমাকে এবার থেকে তাই তোমাতে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না। মুখ নিচু করে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। বোধ হয় বুঝেই গেছিলো যে আমি সবটা জেনেই গেছি। আর অভিনয়? প্রথম প্রথম চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু বাইরে বেরিয়ে দেখলাম যে অভিনয় সত্ত্বার থেকে যোগাযোগ টা আসল ব্যাপার হয়ে দেখা দিচ্ছে, আর সূর্য বলে রেখেছিলো ও বিয়ের পর অভিনয় করতে দেবে না তাই আর চেষ্টাও করিনি। বাবার হার্টের অসুখ ধরা পরার কিছু দিন পরেই বাবা তার প্রোমোটারির সব কিছু আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলো,বলেছিলো "জানি তুমি ভালো অভিনয় কর,অভিনয়টাকেই পেশা হিসেবে রাখতে চাও তবুও যদি কখনো চাও আমার ব্যবস্হা টাকে দেখতে পারো"। বাবা মরে যাওয়ার পর বাবার ব্যাবস্থা টাকে দেখছি, তখন থেকে আমি প্রোমোটার। এবার তোকে যেটা জিজ্ঞেস করলাম বল.....
পাঁপড়ি বললো "মনে আছে শেষ যেদিন তোর সাথে টেলিফোনে কথা হয়? তোর সাথে কথা বলছিলাম নিজের ঘরে দু-তলার জানালার পাশে বসে, কথা বলতে বলতে দেখলাম বাড়ির সদর দরজা দিয়ে চার পাঁচ জন ছেলে, ছেলে ঠিক না লোক ঢুকছে। ভাবলাম বাবার বন্ধু বান্ধব হবে কিন্তু মিনিট সাতেক পরে বাবা এলো তখনই তোকে পরে ফোন করবো বলে ফোন রেখে দিলাম। বললো "তোমাকে কিছু লোক দেখতে এসেছে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে বসার ঘরে এসো ওনারা অপেক্ষা করছে"। আমার মাথায় তো ছাঁদ ভেঙে পড়লো জিজ্ঞেস করলাম দেখতে এসেছে মানে? বাবা বললো "তোমার বিয়ের জন্য"। আমি বললাম সে কি আমাকে একবারও জিজ্ঞেস করলে না ওনাদের ডাকার আগে? আমি বিয়ে করতে চাই না,এম.এ কমপ্লিট করে শিক্ষিকা হতে চাই। ছোটো ছোট বাঁচ্চাদের শিক্ষা দান করতে চাই, সমাজের জন্যে কিছু করতে চাই। বাবা বললো "তুমি কি চাও তাতে কারো কিছু যায় আসে না,আর তুমি কি চাও সেটা তোমাকে জিজ্ঞাসাও করিনি, আমি যা চাইছি তুমি সেটাই করবে। মেয়ে হয়ে জন্মেছো, মেয়েদের নিজস্ব কোনো চাওয়া থাকতে নেই বুঝলে? মেয়েদের কাজ রান্না করা, ওসব সমাজ সেবা টেবা মাথা থেকে বার করে দাও। যা বলছি সেটা করো। ছেলে ভালো চাকরি করে, এমন পাত্র দ্বিতীয় বার নাও পাওয়া যেতে পারে। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে বসার ঘরে এসো, এটা আমার মান সন্মান এর ব্যাপার। আশা করি তুমি সেটা নষ্ট করবে না।"
বসার ঘরে গিয়ে দেখলাম যার সাথে আমার বিয়ে হতে চলেছে সে মধ্যবয়স্ক একটা লোক। বাবার সন্মান রাখতে বিয়েতে রাজি হয়ে গেলাম, মনে মনে চেষ্টা করলাম সবটা মেনে নিতে।বিয়ে হয়ে গেলো। ভাবলাম যা হওয়ার হয়ে গেছে যার সাথে বিয়ে হয়েছে সেই এখন আমার সব। কিন্তু বিয়ের একমাস পর থেকে মানুষ টাকে আরও ভালো করে জানতে শুরু করলাম। মদ,জুয়া,হেরোইন, সাট্টা ছাড়াও যত রকমের নেশা হয় তার কোনো টাই সে বাদ দেয় না। রোজ রাতে নেশার ঘোরে এসে মারধোর করতো, শারিরিক ও মানসিক অত্যাচার চলতো প্রতিনিয়ত। বাবার কাছে কোনো দিন গিয়ে অভিযোগ করিনি তাও, বাবার কাছে গেলে হয়তো আমাকে ফেরাতো না কিন্তু আমার ভীষন অভিমান হয়েছিলো বাবার ওপর আর সেটাই বাবার কাছে যেতে বাঁধা দিতো সবসময়। আর সেই অভিমান থেকে পুরোপুরি বাবার বাড়ির সাথে সমস্ত রকম যোগাযোগ বন্ধ করে দেই আমি।
রচনাকাল : ৬/১/২০২০
© কিশলয় এবং সাথী ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।