বছর আটত্রিশের নতুন শ্রমিক "পাঁপড়ি" খুব চেনা কন্ঠস্বর শুনে এবার পেছন ফিরে দেখলো কিন্তু পরেক্ষনেয় মুখ ঘুরিয়ে নিলো।কেয়ার টেকার বললো"পাঁপড়ি দি ইনি আমাদের প্রোমোটার ম্যাডাম অপরুপা সাহা"।অপরুপা ভেবেছিলো পাঁপড়ি কে ডাকতেয় পাঁপড়ি খুব খুশি হয়ে আনন্দে ছুটে আসবে কিন্তু এমন কিছু না হওয়ায় অপরুপা অবাক হওয়ার সাথে সাথে মনে মনে খুব কষ্ট পেলো এটা ভেবে যে "এককালে যে পাঁপড়ি তার সবথেকে কাছের বন্ধু ছিলো,অপদে বিপদে যাকে একটা ডাক দিলেয় পাশে পাওয়া যেত,ডাক না দিতেই অবশ্য বুঝে যেত অপরুপার সমস্যা সে,যাকে ছাড়া অপরুপার এক মিনিটও চলতো না,যে পাঁপড়ি তার আনন্দে আনন্দ পেত,তার দুংখে কষ্ট,ক্লাস ওয়ান থেকে কলেজ অবধি যার সাথে বন্ধুত্ব একই রকম ছিলো,সেই পাঁপড়ি এত বছর পর দেখা হওয়াতেও মুখ ঘুরিয়ে নিলো?নাকি তাকে সে চিনতেয় পারেনি? পাঁপড়ি তাকে চিনতে পারবেনা এটা হতেই পারে না"।
এবার পাঁপড়ি নিজের শাঁড়ির আঁচল দিয়ে একহাত ঘোমটা টেনে অপরুপার সামনে এসে দাড়ালো এবং বললো"নমস্কার ম্যাডাম কিছু মনে করবেন না,আসলে আমি বুঝতে পারিনি ওদের সাথে সাথে আপনিও এসেছেন"। বলার সময় পাঁপড়ির গলার কম্পনেয় অপরুপা বুঝে গেল যে সে মিথ্যা বলছে,মিথ্যা টা সে বরাবরই বলতে পারতো না কিন্তু অপরুপা এটা বুঝতে পারছিলো না কিছুতেই যে পাঁপড়ি তাকে চিনেও না চেনার ভান কেন করে চলেছে,আর এভাবে শাঁড়ির আঁচলে মুখ ঢেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে কেন চাইছে?তাকে চেনা দিতে পাঁপড়ির অসুবিধা ঠিক কোথায়?
অপরুপা একটু অতীতে গিয়ে ভাবতে শুরু করলো পাঁপড়ির সাথে তার শেষ দেখা হয় আঠারো বছর আগে,যে দিন পাঁপড়িরা তাদের পাড়া ছেড়ে চলে যাচ্ছিলো বাড়ি বদল করে তাদের নতুন বাড়িতে।সে দিনটা সারাদিন পাঁপড়ি অপরুপা দের বাড়িতে ছিলো,অনেক গল্প করেছিলো দু-জন মিলে তারা,যাওয়ার সময় বলে গেছিলো নতুন বাড়ির ঠিকানা ঠিক করে সে জানে না তাই দিয়ে যেতে পারছে না, নতুন বাড়িতে গিয়ে টেলিফোন লাইন পেতেও বেশ কিছু দিন সময় লেগে যাবে,তাই সে নিজেয় অপরুপাকে টেলিফোন করে নতুন বাড়ির ঠিকানা আর টেলিফোন নম্বার দু-টোয় দেবে।
পাঁপড়ি কথা মত বাড়ি বদলের ছয়মাস পর টেলিফোন করেছিলো,অনেক গল্পও করে। গল্পে গল্পে নতুন বাড়ির ঠিকানা আর টেলিফোন নম্বার টায় দিতে ভুলে যায় সে। পরে আবার ফোন করবে বলে তাড়াহুড়ো করে সেই যে ফোন রেখে দেয়,আর কোনো ফোন করেনি সে।তার পর থেকে পাঁপড়ি যেন কেমন হারিয়ে যায়।অপরুপার কাছে টেলিফোন নম্বার আর নতুন বাড়ির ঠিকানা দুটোর কোনোটায় না থাকায় সে নিজেও পাঁপড়ির সাথে যোগাযোগ রাখতে সক্ষম হয়নি........
এতটা ভেবেয় থেমে যায়।অপরুপা এবার ভাবতে থাকে তাকে জানতেই হবে কেন পাঁপড়ি হঠাৎ করে হারিয়ে যায় আর এখন দেখা হওয়াতেও অচেনার মত আচরণ কেন করছে সে?আর ও এখানেই বা কাজ করছে কেন?বোনাসের টাকা আর কাঁপড় টা পাঁপড়ির হাতে আস্তে করে ধরিয়ে দিয়ে বাড়ি যাওয়ার উদেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।
এর ঠিক এক সপ্তাহ পরের শনিবার পাঁপড়ি এবং অন্যান্য শ্রমিকরা নিজেদের কাজে ব্যস্ত ছিলো এমন সময় কেয়ার টেকার এসে জানালো "আজ প্রোমোটার ম্যাডামের আসার দিন,উনি আসছেন না দেখে আমি ফোন করেছিলাম,ওনার বাড়ির কাজের লোক ফোন তুলে বললো গত বুধবার ওনার গাড়ির অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে, কোমরে চোট পেয়েছেন ভীষণ, তিন দিন হসপিটালে ভর্তি ছিলেন আজ বাড়িতে এসেছেন, ডাক্তার ওনাকে এখন পুরো বেড রেস্টে থাকতে বলেছেন, হাঁটা চলা করতে পারছেন না একদমই, বিছানায় শয্যাসায়ী উনি এখন। যতদিন না সুস্থ হন আসতে পারবেন না। সবাই গুছিয়ে কাজ করবে দেখে শুনে....."
রচনাকাল : ৬/১/২০২০
© কিশলয় এবং সাথী ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।