"হ্যালো, রাজু?"
"কে-এএএএএ ...................গুগুল................ বল ..........আর সময় পেলি না।
........ সবে ঘুম-টা এসেছিল।"
"শালা, দুপুর বেলা পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিস!"
"কাজের কথা বল ভাই"
"আজ খেলা হবে না।"
"সেকি!!!!! ..... কেন ???", আতকে উঠল রাজু।
"এই দেখলাম যে, মাঠের ধারের গাছ গুলো কাটছে।"
"তো ?"
"আরে, আমরা যেখানটায় খেলি, গাছগুলো সেখানেই ফেলেছে যে।"
"যা-আআ ....তালে তো খেলা যাবে না। অল্টারনেট প্লান কি? আমি মোট কথা, বিকেলে ঘরে বসে
থাকতে পারছি না। তুই অন্যদের ফোন করেছিস ?"
"হ্যা, সবাই মিলে ঠিক হয়েছে আজ মাঠে আড্ডা আর পার্টি হবে। ভালো কথা, তুই এক কৌটো
চানাচুর নিয়ে আনিস। আমি আলুকাবলি, পটলা পাপড়ি-চাট, টিটু চকলেট, ভোম্বল চিটবাদাম আনবে "
"ওহো! এত গ্র্যান্ড পার্টি। ok boss, সময় মত পৌছে যাব। এখন একটু শুই, বাই "।
বিকেল পাচটা বাজে, মাঠে গোল করে বসে ভোম্বল, পটলা, গুগুল, হোদল, টিটু। সামনে নানা রকমের খাবার।
"আমার জন্য কিছু আছে তো?" ছুটতে ছুটতে এলো রাজু, "ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেল রে!"
"আমরা তো চানাচুরের জন্য কখন থেকে wait করে আছি। শিগগির বার কর।" বলল ভোম্বল।
একমুঠো চানাচুর মুখে পুরেই হোদল বলে উঠলো, "ভ্যাগ্গিস গাছ কাটা হচ্ছিল"।
"আচ্ছা গাছ গুলো কাটছে কেন?", জানতে চাইল পটলা।
"কি জানি, শুনেছি গাছগুলো ল্যাম্পপোস্টের আলো ব্লক করে দিচ্ছিলো। এই জায়গাটা রাতের বেলায়
অন্ধকার থাকত, দেখিসনি?" বলল গুগুল।
"আরে, স্রেফ গাছ কেটে টাকা ইনকাম করবে। তা ছাড়া আর কিছু না", বলল টিটু।
"ওই গাছ গুলোর মধ্যে একটা সবেদা গাছ ছিল রে। ফ্রি-তে সবেদা খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। " কাচুমাচু মুখ
করে বলল ভোম্বল।
"গাছগুলো থাকলে গরমের দিনে একটু ছায়া পাওয়া যেত রে।" বলল হোদল।
"তাছাড়া গ্লোবাল ওয়ার্মিং-র যুগে গাছ কাটা মানে নিজেদের ধ্বংস-কে নিমন্ত্রণ জানানো।" বলল রাজু
"তা ঠিক, কেদার-বদ্রী-তে কি হলো আমরা দেখলাম তো!" বল পটলা।
"আসলে আমাদের জীবন সবকিছু বড় অর্থনীতি নির্ভর। অথনীতিতে কেটে-ফেলা গাছের দাম আছে ,
জ্যান্ত গাছের নেই।"
"অশ্বথ্ব গাছের ছায়া-য় বসে গল্প করার দাম তোর-আমার কাছে আছে, অথনীতির নেই। ", উদাস গলায়
বলল হোদল।
"এই সমস্যা-র একটা সমাধান আমি জানি", পিছন থেকে কে যেন বলে উঠল!
সবাই এক সাথে পিছনে তাকাল।
"আরে, বুড়ো-দা যে!" বলল ভোম্বল। বুড়ো-দা ভোম্বলের জ্যাঠতুতো দাদা যে USA-তে PhD করে।
ভোম্বলের বাড়িতে নেমত্তন্ন খেতে গিয়ে সবার সাথে বুড়ো-দার আলাপ হয়ে গেছে।
"আরে, বস বস। ", বলল গুগুল।
"বাড়িতে বসে bore হচ্ছিলাম। ভাবলাম মাঠ থেকে একটু ঘুরে আসি। ......................
তোদের আলোচনা শুনছিলাম। বেশ ইন্টারেষ্টিং", বলে বসল বুড়ো-দা।
"তুমি কি একটা সমাধানের কথা বলছিলে না?", বলল ভোম্বল।
"ধর, গাছগুলো যদি রাতে আলো দেয়, মানে রাতে ল্যাম্পপোস্টের টিউব-লাইটের মত জ্বলে ওঠে,
তালে কেমন হয়?", বলল বুড়ো-দা।
"গাছ রাতে আলো দেবে!", হা করে বলল হোদল।
"এও-কি সম্ভব!", বলল টিটু।
"এটা হলে তো রাস্তার গাছ কাটার দরকার-ই পরবে না।", বলল টিটু।
"তা-ছাড়া টিউব-লাইটের দরকার-ও কমে যাবে। বিদ্যুতের প্রয়োজন কমবে, পরিবেশদূষণ কমবে।",
বলল পটলা।
"এতো ম্যাজিক!", বলল ভোম্বল।
"আমাদের এই পৃথিবীতে কিন্তু অনেক জীব আছে যাদের শরীর থেকে আলো বেরোয়। এই ঘটনাকে বলে
Bioluminescence। কোনো উদাহরণ দিতে পারবি?", বলল বুড়ো-দা।
"জোনাকি", বলে উঠল ভোম্বল।
"কারেক্ট, এছাড়া কিছু প্রজাতির জেলি-ফিস, লন্ঠন-মাছ (Lantern fish), এক প্রজাতির কোরাল,
কিছু ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এর উদাহরণ।," বলে চলল বুড়ো-দা, "এই সব জীবের শরীরে এক রকমের
উতসেচক (enzyme) তৈরী হয়, যাকে Luciferase বলে। উতসেচক Luciferase,
Luciferin নামক রসায়নের সংস্পর্শে এলে আলো উত্পন্ন হয়। এক্ষেত্রে, Luciferin
জ্বালানীর কাজ করে। আজ, বিজ্ঞানীরা সেই সব জিন (gene) চিহ্নিত করতে পেরেছেন যা জোনাকি,
ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি জীবের শরীরে Luciferase তৈরী করে। ............ এখন যদি এই রকম আলো
প্রদানকারী Luciferase Gene গাছের শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় তালে তো গাছের থেকেও আলো
বেরোতে পারে! .......... তাই নয় কি!"
"দারুন ব্যাপার।", বলল টিটু।
"এত গল্প হলেও সত্যি!", বলল পটলা।
"আচ্ছা, এই রকম গাছ কি সত্যি কেউ বানাতে পেরেছে?", জানতে চাইল গুগুল।
"হ্যা নিশ্চয়ই। ১৯৮৬ সাল নাগাদ ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফর্নিয়া, সান দিয়েগো-র বিজ্ঞানীরা এই রকম
একটা গাছ বানাতে সাফল্য লাভ করেন। ওনারা প্রথমে তামাক-গাছের মধ্যে জোনাকির Luciferase
জিন ঢুকিয়ে একটা জেনেটিকালি-পরিবর্তিত তামাক গাছ বানান। তারপর, এই জেনেটিকালি-পরিবর্তিত তামাক
গাছ-কে Luciferin-এর সংস্পর্শে রাখেন। ওনারা লক্ষ্য করেন যে ওই তামাক-গাছের গা থেকে আলো
বিচ্ছুরিত হচ্ছে। Kodak ফ্লিম-এ ছবিও তুলে রাখেন।"
"সেই ছবি ইন্টারনেট-এ আছে?", জানতে চাইল গুগুল।
"হ্যা, খুঁজলেই পাবি।", বলল বুড়ো-দা।
গুগুল ওর মোবাইল-এ সার্চ করে নিচের ছবিটা পেল। আর সবাইকে দেখাল।
"আচ্ছা, এই আলোর উজ্জলতা কেমন ছিল?", জানতে চাইল পটলা।
"১৯৮৬ সালের ওই গাছের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। প্রথমত, আলোর উজ্জলতা বেশী ছিল না। তাছাড়া,
বাইরে থেকে Luciferin দিলে তবেই গাছ আলো দিত। গাছ-টা automatic আলো দিতে
পারত না।", বলল বুড়ো-দা।
"তালে?", প্রবল কৌতুহল নিয়ে জিগ্গেস করল ভোম্বল।
"২০১০ সালে, স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক -র গবেষকরা দাবি করেন যে তারা এমন গাছ
বানিয়েছেন যা automatic আলো দেয়। বাইরে থেকে Luciferin দেওয়ার দরকার নেই।
Luciferase, Luciferin দুটোই সেই গাছের মধ্যে তৈরী হয়। ওনারা ৬-টা মেরিন-ব্যাকটেরিয়ার
জিন গাছের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন। এই ৬-টা জিন আলোর জন্য দরকারী সব রকম রাসায়নিক গাছের
ভেতর তৈরী করে। ", বলল বুড়ো-দা।
"আলোর রং কি? সেটা কি নিয়ন্ত্রণ করা যায়?", জানতে চাইল হোদল।
"আলোর রং নির্ভর করে কি রকম Luciferase ব্যবহার হচ্ছে তার উপর। ওনারা চেষ্টা করছেন যাতে
আলোর উজ্জলতা আরো বাড়ানো যায়।", বলল বুড়ো-দা।
"এতো যুগান্তকারী আবিষ্কার। এই গাছ কি কিনতে পাওয়া যায়?", জানতে চাইল রাজু।
"হ্যা, সাম্প্রতিক-কালে একটা সংস্থা এরকম গাছ বিক্রী করার কথা ঘোষণা করেছে। এনারা
bioluminescence gene ফুলের কোষের নিউক্লিআস-এ ঢুকিয়ে দিয়েছেন যাতে বীজের মধ্যে
ওই জিন চলে যায়। ওনারা ওই বীজ বিক্রী করছেন।", বলল বুড়ো-দা।
"কত দাম?", জানতে চাইল টিটু।
"৪০ ডলার-এ এক গুচ্ছ বীজ দেবে ", বলল বুড়ো-দা।
"আচ্ছা বুড়ো-দা, এর ফলে ভবিষ্যতে এমন লাল গোলাপ পাওয়া যাবে যেটা রাতে জ্বলে!", ভাবুক চোখে বলল ভোম্বল।
সবাই একসাথে অবাক হয়ে ভোম্বলের দিকে তাকাল। "কি ব্যাপার ভোম্বল-বাবু, হটাত লাল গোলাপের খোঁজ!"
রচনাকাল : ২৪/৮/২০১৩
© কিশলয় এবং সরসিজ দাস কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।